বরগুনার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর পেটে ৭ ইঞ্চি লম্বা কাঁচি (ফরসেপ) রেখেই সেলাই করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. ফারহানা মাহফুজ এবং কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাফিয়া পারভীনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠে।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ।
জানা যায়, অস্ত্রোপচারের ৭ মাস পর ফরসেপটি অপসারণ করা হলেও বর্তমানে ওই রোগী কহিনুর বেগম (৭০) মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী গ্রামের বাসিন্দা কহিনুর বেগম সাত মাস আগে বেড়াতে এসেছিলেন বরগুনা পৌর শহরের সোনাখালী এলাকায় মেয়ের বাড়িতে। সেখানে হঠাৎ তীব্র পেটব্যথা শুরু হলে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বরগুনা সদর উপজেলার দক্ষিণ মনসাতলী গ্রামের মহাসড়ক সংলগ্ন বরগুনা কুয়েত প্রবাসী হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। পরীক্ষায় জরায়ুর জটিলতা ধরা পড়ে এবং ২০২৪ সালের ১৮ নভেম্বর অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, অপারেশনটি পরিচালনা করেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. ফারহানা মাহফুজ ও কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সাফিয়া পারভীন। তবে অস্ত্রোপচারের পর রোগীর পেটের ভেতরেই ভুলক্রমে ৭ ইঞ্চি লম্বা একটি ফরসেপ রেখে সেলাই করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। অপারেশনের পর থেকেই ক্রমশ অসুস্থ হয়ে পড়েন কহিনুর বেগম। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে এক্স-রে করে তার তলপেটে ধরা পড়ে একটি ধাতব বস্তু। পরে গত ১৮ জুন পুনরায় অস্ত্রোপচারে তার পেট থেকে ফরসেপটি অপসারণ করা হয়।
প্রাথমিক অস্ত্রোপচারে কহিনুর বেগমের মলদ্বার বাদ দিয়ে বিকল্প রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই স্থানে ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ায় বর্তমানে তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ওই নারী। এ ঘটনায় কহিনুর বেগমের পরিবার চিকিৎসকদের গাফিলতির বিচারের দাবিতে বরগুনা জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ বিষয়ে কহিনুর বেগমের মেয়ে ফাহিমা বেগম বলেন, ভুল চিকিৎসার কারণে আমার মা এখন মৃত্যুশয্যায়। আমার মায়ের খাদ্যনালী কেটে ফেলতে হয়েছে। আমরা মামলা করবো। আমি ডাক্তার ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিচার চাই।
ভুল চিকিৎসার বিষয়ে কুয়েত প্রবাসী হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক গাজী বলেন, শুনেছি উনার পেটে ফরসেপ পাওয়া যায়। ঘটনা শুনে আমি ওই পরিবারের খোঁজ নিতে বরিশালেও গিয়েছি। যেহেতু অপারেশনটি অন্য ডাক্তার করেছেন, তাই এ বিষয়ে তিনিই ভালো বলতে পারবেন। এখানে আমার কোনো ত্রুটি নেই।
বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক সার্জন ডা. ফারহানা মাহফুজের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ আবুল ফাত্তাহ বলেন, ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষ থেকে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।