জুমবাংলা ডেস্ক : দেশের সাধারণ মানুষ আবারও বাজারে গিয়ে চরম হতাশায় পড়ছে। কয়েক সপ্তাহ আগে যে পেঁয়াজ ২৫-৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল, এখন তার দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে ৬৫-৭০ টাকা কেজিতে পৌঁছেছে। পেঁয়াজের দাম এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি শুধু নিম্ন আয়ের মানুষদের নয়, মধ্যবিত্তদেরও দিশেহারা করে তুলেছে।
Table of Contents
পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ: আমদানি ঘাটতি না সিন্ডিকেটের চক্রান্ত?
পেঁয়াজের দাম নিয়ে হঠাৎ এমন অস্থিরতার পেছনে কেবলমাত্র ভারত থেকে আমদানি বন্ধ হওয়া একমাত্র কারণ নয়। খুচরা ব্যবসায়ীদের বক্তব্য অনুযায়ী, মূল সমস্যা তৈরি করেছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের গোপন মজুত ও সিন্ডিকেট। কাটেংগা, জয়সেনা, কাওরান বাজারের মতো পাইকারি হাটগুলোতে দেখা যাচ্ছে, পেঁয়াজের সরবরাহ কম নয়, তবে বাজারে তা পৌঁছাচ্ছে দামে দামে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়াকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করছে একটি চক্র, যারা চায় দেশের বাজারে অস্থিরতা তৈরি করতে। সরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ চক্রটি কৌশলে পেঁয়াজ বাজারে না ছাড়িয়ে গুদামে মজুত করে রাখছে, যার ফলে কৃত্রিম সংকট তৈরি হচ্ছে।
খুচরা এবং পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের বর্তমান অবস্থা
খুচরা বাজারে যেখানে কিছুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা, সেখানে এখন তা দাঁড়িয়েছে ৬৫-৭০ টাকায়। অন্যদিকে কাওরান বাজারে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৪০-৪৫ টাকা। এই দ্রুত মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে অবৈধ মজুত এবং সিন্ডিকেট দ্বারা পরিচালিত বাজার নিয়ন্ত্রণ।
একজন পাইকারি বিক্রেতা জানান, রোজার সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হতো ২৫-৩০ টাকা, কিন্তু বর্তমানে ঈদের পর তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এমনকি জুলাই মাসে এই দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার সংস্থার পর্যবেক্ষণ ও ব্যবস্থা
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে তিন স্তরে বাজার তদারকির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ‘সরকারের কাছে তথ্য থাকা উচিত কে বা কারা এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’
সরকারের ভূমিকা এবং করণীয়
যেভাবে রমজানে বাজার তদারকি করে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল, সেই পদ্ধতিকে অন্যান্য সময়েও প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজন হলে গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। না হলে দেশের বাজারে বারবার এমন সংকট দেখা দিতে থাকবে।
সবজি বাজারেও উত্তাপ: সাধারণ মানুষের করুণ অবস্থা
শুধু পেঁয়াজই নয়, সবজির বাজারেও ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে। ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙা, কচুর লতি, গোল বেগুন, পটল, কাঁকরোল প্রভৃতি সবজি এখন ৭০-১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। লাউ, কাঁচা কলা, কাঁচা মরিচের মতো সাধারণ সবজির দামও ৬০-১০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করছে।
মালিবাগ কাঁচাবাজারে একজন ক্রেতা বলেন, ‘রমজানে বাজারে স্বস্তি ছিল, কিন্তু এখন অস্বস্তি ফিরে এসেছে। সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।’
সিন্ডিকেটের পরিকল্পনা এবং আশঙ্কা
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিন্ডিকেট পরিকল্পনা করছে আগামী ২-৩ মাসের মধ্যে পেঁয়াজের দাম একশ টাকার ওপরে তোলার। এ উদ্দেশ্যে তারা এখন থেকেই ভরা মৌসুমের দেশি পেঁয়াজ গুদামে আটকে রাখছে। পেঁয়াজ সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাজারে আসে। এখনো মৌসুম শেষ না হলেও, দাম বাড়িয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের জন্য প্রস্তাবিত ব্যবস্থা
➤ অন্তর্বর্তী সরকারকে যেমন রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, তেমনি নিয়মিত বাজার মনিটরিং চালাতে হবে।
➤ সিন্ডিকেট শনাক্তে গোয়েন্দা তৎপরতা আরও জোরদার করা দরকার।
➤ কৃষকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করে সরাসরি কৃষক থেকে বাজারে পেঁয়াজ পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা উচিত।
➤ আমদানি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও দ্রুত করতে হবে যাতে প্রয়োজনের সময় দ্রুত পেঁয়াজ আসতে পারে।
এই বাস্তবতায়, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা এখন সময়ের দাবি।
FAQs
পেঁয়াজের দাম এত হঠাৎ করে কেন বেড়ে গেল?
মূলত ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়া এবং দেশীয় বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে কৃত্রিম সংকট তৈরি হওয়ায় পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে গেছে।
বর্তমানে পেঁয়াজের খুচরা দাম কত?
বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে দেশি পেঁয়াজের খুচরা দাম ৬৫-৭০ টাকার মধ্যে রয়েছে, যদিও দুই সপ্তাহ আগে তা ছিল ২৫-৩০ টাকা।
সরকার কি পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো উদ্যোগ নিয়েছে?
হ্যাঁ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর তিন স্তরে বাজার তদারকির সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সিন্ডিকেট শনাক্তে কাজ শুরু করেছে।
কোন সময় পেঁয়াজের মৌসুম?
পেঁয়াজ সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে উৎপাদিত হয় এবং মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে বাজারে আসে।
ভবিষ্যতে পেঁয়াজের দাম আরও বাড়তে পারে কি?
দাম আরও বাড়তে পারে যদি মজুতদারি ও সিন্ডিকেট কার্যক্রম বন্ধ না করা হয়। বিশেষ করে জুলাইয়ের মধ্যে একশ টাকার ওপরে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।
সবজির দাম কেমন চলছে?
সবজির দামও বেড়েছে। অনেক সবজি এখন ৭০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগের বিষয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।