বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ম্যাসেজ মুছে দেওয়ার পরেও তার কপি অপর প্রান্তের মানুষটির কাছে থেকে যেতে পারে! এমনকি ক্লাউড স্টোরেজেও সেই ডেটা থাকতে পারে অবিকৃত অবস্থায়। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের সময় মানুষ নানা কারণে ম্যাসেজ ডিলিট করে দেয়। ডিভাইসের মধ্যে জায়গা খালি করতে, তিক্ত কোনো কথোপকথনের পর সম্পর্ক ছিন্ন করতে এবং বিভিন্ন সময়ে কথোপকথনের মধ্যেই অন্যান্য কারণে ম্যাসেজ ডিলিট করেই দেয় মানুষ।
একটি দীর্ঘ সময় ধরে অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে এই সুবিধাটি ছিল না, তাই প্রযুক্তির কল্যাণে পাওয়া এই সুবিধা নিতে অনেকেরই আপত্তি নেই। কিন্তু ডিজিটাল কোনো ম্যাসেজ ডিলিট করে দেওয়ার পর কি আসলেই তা চিরদিনের জন্য ডিলিট হয়ে যায়?
আমরা একটা ম্যাসেজ মুছে দেওয়া যতটা সহজ মনে করি, ততটা সহজ এটি নাও হতে পারে! ব্যক্তি কী ধরনের প্রোগ্রাম ব্যবহার করছেন, তার উপর নির্ভর করে ম্যাসেজ মুছে দেওয়ার পরেও সেটির একটি কপি অপর প্রান্তের মানুষটির কাছে থেকে যেতে পারে! আর সেই ডেটা ক্লাউড স্টোরেজে অবিকৃত অবস্থায় থেকে যেতেও পারে।
টেকফিউশন-এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও আলফ্রেড ডেমিরজিয়ান তার জীবনের ৩৫ বছর পার করেছেন বোস্টনে ডিজিটাল ফরেনসিক ও ডেটা পুনরুদ্ধারের কাজ করে। তার মতে, একবার ম্যাসেজ লিখে ‘সেন্ড’ বাটনে চাপ দিলে সেটির অস্তিত্ব চিরদিনের জন্যই থেকে যায়; বিশেষ করে সরকার যদি চায় তা রেখে দিতে, তাহলে তা সম্ভব।
ডেমিরজিয়ান বলেন, “আমার তত্ত্ব হচ্ছে- এবং আমার মনে হয় তা সত্যি- ডিজিটাল যেকোনো কিছুরই রেকর্ড রাখা হয়। আপনি যেকোনো জায়গায় যা কিছুই ম্যাসেজ পাঠান, সেগুলো নথিভুক্ত হয়ে যায়। আর জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে যদি প্রয়োজন হয়, সেগুলো অন্য কেউ খুলে পড়তেও পারে।”
যখন আপনি আপনার ডিভাইস থেকে কোনো ম্যাসেজ মুছে দেন- সেটা হতে পারে কোনো ছবি, ভিডিও, লিখিত বার্তা বা ডকুমেন্ট, সেটা আসলে একেবারে উধাও হয়ে যায় না। তার বদলে ডিভাইস এটিকে এমনভাবে রেখে দেয় যাতে পরেও এডিট (সম্পাদনা) করে নতুন তথ্য যোগ করা যাবে।
ডিজিটাল তদন্তকারীরা কম্পিউটার, আইফোন, অ্যান্ড্রয়েডসহ অন্যান্য ডিভাইস থেকে ডেটা উদ্ধার করতে ‘জেলব্রেকিং’ নামক একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে।
ডিভাইসের মেমোরি স্পেস যখন পুরোপুরি ভরে যায়, তখন পুরনো তথ্যগুলো সরিয়ে নতুনগুলো সামনের দিকে জায়গা করে নেয়। যারা প্রচুর ছবি-ভিডিও তোলেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিষয়। বড় ফাইলগুলো তখন পুরনো টেক্সট, ছবিকে সরিয়ে দেয়। ডেমিরজিয়ান বলেন, “যখন আপনি কোনোকিছু মুছে দেন, তখন তা চিরতরে মুছে না গিয়ে বরং সেগুলো নিচের দিকে পাঠিয়ে দেয়।”
কিন্তু বর্তমান যুগের মোবাইল ফোন, কম্পিউটারগুলোতে প্রচুর জায়গা থাকে। তার মানে আপনি সেই ডিভাইসে যা যা মুছে ফেলছেন, ডিজিটাল তদন্তকারীদের কাছে সেগুলো উদ্ধার করার সুযোগ ততই বেশি। এমনকি কেউ যদি তাদের ডিভাইসের মেমোরি বারবার বাড়াতেও থাকে, তবুও তারা সেই তথ্য উদ্ধার করতে পারবেন।
“কোনো তথ্য বারবার লেখা বা সম্পাদনা করা হলেও সেগুলো মুছে দেওয়ার পর উদ্ধার করা সম্ভব, হয়তো সবটা উদ্ধার করা যাবে না। তবে এই প্রক্রিয়া বেশ ব্যয়বহুল এবং অনেক সময় লাগে। কিন্তু কিছু কিছু তথ্য যে উদ্ধার করা যায় তা সত্যি।”
আর কেউ যদি তার ডিভাইস থেকে সব তথ্য সত্যিই চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে চায় পেশাদার কারো সাহায্যে, তাহলে তাকে অবশ্যই মোটা অংকের টাকা গুনতে হবে এর জন্য। সে কারণেই বোধহয় অনেকে তথ্য মুছে ফেলার জন্য চরম পন্থা অবলম্বন করেন! যেমন- হাতুড়ি দিয়ে বা আছাড় মেরে মোবাইল ভেঙ্গে ফেলা, সমুদ্রে ছুঁড়ে ফেলা! কিন্তু তা সত্ত্বেও দক্ষ ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ সেসব নষ্ট ডিভাইস থেকেও তথ্য উদ্ধার করতে পারবেন।
ডেমিরজিয়ান এযাবত নাসা, আইবিএম, হার্ভার্ড ও এমআইটি, পুলিশি সংস্থা এবং পরিবহন বিভাগের জন্য কাজ করেছেন। যদিও তিনি নিজেকে ডিজিটাল ফরেনসিকে একজন বিশেষজ্ঞ বলেই বিবেচনা করেন, কিন্তু তিনি জানান, সরকারি এজেন্সিগুলোর কাছে এমন সব ডেটা পুনরুদ্ধারকারী টুলস আছে যা তার কাছেও নেই!
তাই ডেমিরজিয়ানের ভাষ্যে, অনলাইনে কোনো ম্যাসেজ পাঠানোর সময় ‘পলিটিক্যালি কারেক্ট’ হওয়া উচিত, যাতে সেই ম্যাসেজ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে না পারে। “এমন কিছু লিখবেন না যার জন্য পরে আপনাকে কষ্ট পেতে হয়, অনুশচনা করতে হয়”, এই বলে নিজের কথার ইতি টানলেন ডেমিরজিয়ান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।