কোলাহলপূর্ণ গুলশান মার্কেট কিংবা ভিড়ে ঠাসা মেট্রোরেল স্টেশন – হঠাৎই টের পেলেন, প্যান্টের পকেট হালকা! হাত বাড়ালেন ফোনের দিকে, কিন্তু সেখানে কিছুই নেই। হৃদস্পন্দন যেন থেমে যাওয়ার উপক্রম। সেই ফোনে তো শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়, গোটা জীবনটাই জড়ানো – ব্যাংক অ্যাপ, সোশ্যাল মিডিয়া, অফিসের গুরুত্বপূর্ণ মেইল, সন্তানের জন্ম থেকে শুরু করে জীবনের নানা স্মৃতিবিজড়িত ছবি। এক মুহূর্তেই সবকিছু অন্ধকারে ডুবে গেলো বলে মনে হয়। এমন পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখবেন, ফোন হারিয়ে গেলে করণীয় পদক্ষেপগুলি দ্রুত, ঠান্ডা মাথায় এবং ধাপে ধাপে নেওয়া গেলেই বিপদ অনেকটাই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। শুধু ফোন ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনাই বাড়বে না, আপনার মূল্যবান তথ্যগুলোও সুরক্ষিত থাকবে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে।
ফোন হারিয়ে গেলে করণীয়: প্রথম ১০ মিনিটের জরুরি পদক্ষেপ যা ভুললে চলবে না (H2)
আপনার ফোনটি হারানোর মুহূর্তটি যতই দুঃসহ হোক না কেন, এই সময়টাতেই সবচেয়ে বেশি মনোযোগী হতে হবে। প্রতিটি সেকেন্ড মূল্যবান। এ সময়ে আতঙ্কে জড়িয়ে না থেকে এই ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
- স্থির হোন ও খোঁজ শুরু করুন (স্থান নিশ্চিত করুন):
- গভীর শ্বাস নিন: আতঙ্ক আপনাকে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে। গভীর শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করুন।
- শেষ জায়গাটা মনে করার চেষ্টা করুন: কোথায় শেষবার ফোনটি হাতে নিয়েছিলেন বা পকেটে রেখেছিলেন? রিকশা? ট্যাক্সি? রেস্টুরেন্টের টেবিল? দোকানের কাউন্টার? আশেপাশে ভালো করে দেখুন – সোফার নিচে, কার্পেটের নিচে, ব্যাগের অন্য কোন পকেটে?
- কাছের কাউকে ফোন করুন: যদি অন্য কারো ফোন ব্যবহারের সুযোগ থাকে, নিজের নম্বরে ফোন দিন। কেউ যদি ফোনটি পেয়ে থাকেন, হয়তো ফোন ধরতে পারেন। কানে শব্দ শুনে খুঁজেও পাওয়া যেতে পারে (ভাইব্রেশন চালু থাকলে)।
- ডিভাইস ট্র্যাকিং সক্রিয় করুন (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ!):
- অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা: দ্রুত অন্য যেকোনো ডিভাইস (বন্ধুর ফোন, ল্যাপটপ) থেকে ওয়েব ব্রাউজারে Google Find My Device ওয়েবসাইটে লগ ইন করুন। একই জিমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন যা হারানো ফোনে ছিল।
- মানচিত্রে আপনার ফোনের আনুমানিক অবস্থান দেখাবে (ইন্টারনেট ও লোকেশন অন থাকলে)।
- বিকল্পগুলি: বাজান (ফোনটি ৫ মিনিটের জন্য জোরে শব্দ করবে, এমনকি সাইলেন্ট বা ভাইব্রেট মোডে থাকলেও), লক করুন (ফোনটি রিমোটলি লক করে পাসওয়ার্ড সেট করুন, সাথে একটি বার্তাও দিতে পারেন ফেরতদাতার জন্য), ডিভাইস মুছুন (সব ডেটা ডিলিট করে ফেলবেন, শুধুমাত্র শেষ উপায় হিসেবে ব্যবহার করুন, কারণ মুছে দিলে ট্র্যাক করা যাবে না)।
- আইফোন ব্যবহারকারীরা: অন্য যেকোনো অ্যাপল ডিভাইস বা ওয়েব ব্রাউজারে iCloud Find My ওয়েবসাইটে লগ ইন করুন। আইক্লাউড আইডি ব্যবহার করুন।
- আইফোনের অবস্থান দেখাবে। বিকল্পগুলি: শব্দ চালু করুন, লস্ট মোড (ফোন লক করে বার্তা ও ফোন নম্বর দেখাবে), ডিভাইস মুছুন।
- বাংলাদেশে সতর্কতা: ট্র্যাকিং সফল হওয়ার জন্য ফোনের ইন্টারনেট (মোবাইল ডেটা বা Wi-Fi) এবং লোকেশন সার্ভিস (GPS) চালু থাকা আবশ্যক। অনেকেই ব্যাটারি সেভিং মোডে লোকেশন বন্ধ রাখেন, যা ট্র্যাকিংকে ব্যাহত করে।
- অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা: দ্রুত অন্য যেকোনো ডিভাইস (বন্ধুর ফোন, ল্যাপটপ) থেকে ওয়েব ব্রাউজারে Google Find My Device ওয়েবসাইটে লগ ইন করুন। একই জিমেইল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন যা হারানো ফোনে ছিল।
- সিম কার্ড ব্লক/সাসপেন্ড করুন:
- তাৎক্ষণিকভাবে আপনার মোবাইল অপারেটরকে কল করুন:
- গ্রামীণফোন: ডায়াল করুন 121 > বিকল্প 2 > বিকল্প 2
- রবি: ডায়াল করুন 880 111
- বাংলালিংক: ডায়াল করুন 109
- টেলিটক: ডায়াল করুন 888
- কাস্টার কেয়ারকে বলুন: “আমার ফোন হারিয়ে গেছে, সিম কার্ডটি তাৎক্ষণিক ব্লক/সাসপেন্ড করতে চাই।”
- কেন জরুরি? ফোনটি যেন অন্য কেউ আপনার সিম ব্যবহার করে কল করতে, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে বা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP) পেতে না পারে। এটি আর্থিক ক্ষতি ও ডেটা চুরির ঝুঁকি কমায়।
- তাৎক্ষণিকভাবে আপনার মোবাইল অপারেটরকে কল করুন:
- জরুরি যোগাযোগের তালিকা ও ব্যাংক/ফিন্যান্সিয়াল অ্যাপস সম্পর্কে সতর্ক হোন:
- পরিবার, ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সহকর্মীদের জানান যে আপনার ফোন হারিয়েছে এবং আপনার নম্বর থেকে অদ্ভুত কোনো কল বা মেসেজ এলে তারা যেন সতর্ক থাকে।
- আপনার ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস (bKash, Nagad, Rocket), ই-কমার্স অ্যাকাউন্ট (Daraz, Foodpanda), ইমেইল ইত্যাদিতে দ্রুত লগ ইন পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন (অন্য ডিভাইস থেকে)।
ফোন ফিরে না পেলে পরবর্তী করণীয়: আইনী পদক্ষেপ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা (H2)
ট্র্যাকিং বা খোঁজাখুঁজি করে ফোন না পেলে, এবং সিম ব্লক করেও যদি নিশ্চিন্ত না হতে পারেন, তবে এখনই আইনী ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।
- আইমিইআই (IMEI) নম্বরটি খুঁজে বের করুন:
- আইমিইআই কী? International Mobile Equipment Identity। প্রতিটি ফোনের জন্য বিশ্বব্যাপী অনন্য ১৫ ডিজিটের একটি কোড। এটি ফোনের “ডিজিটাল ফিঙ্গারপ্রিন্ট” এর মতো।
- কোথায় পাবেন?
- ফোনের বক্সে থাকা স্টিকার/লেবেলে।
- ফোনের সেটিংসে:
Settings > About Phone > Status
(অ্যান্ড্রয়েড)।Settings > General > About
(আইফোন)। - *#06# ডায়াল করেও দেখুন (ফোন না থাকলে এটা সম্ভব নয়, তাই বাক্স বা রিসিপ্ট সংরক্ষণ জরুরি)।
- আপনার মোবাইল অপারেটরের অ্যাকাউন্ট বা পূর্বের কমপ্লেইন্ট লগ (যদি থাকে)।
- বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর ভূমিকা: বিটিআরসি হারানো বা চুরি হওয়া ফোনের আইমিইআই নম্বর ব্ল্যাকলিস্ট করতে পারে। এর মানে সেই ফোনটি বাংলাদেশের কোনো নেটওয়ার্কেই ব্যবহার করা যাবে না।
- নিকটতম থানায় জিডি/এফআইআর করুন:
- কেন জরুরি? এটি একটি অত্যাবশ্যকীয় আইনী দলিল। ফোন চুরি হওয়ার সন্দেহ থাকলে অবশ্যই ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট (FIR) করুন। হারিয়ে গেলে সাধারণ ডায়েরি (GD) করুন।
- কী নিয়ে যাবেন?
- আইমিইআই নম্বর (সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ)।
- ফোনের মডেল, কালার, ক্রয় সনদ/রিসিপ্টের কপি (যদি থাকে)।
- সিম নম্বর ও অপারেটরের নাম।
- হারানোর সম্ভাব্য সময়, তারিখ ও স্থানের বিবরণ।
- থানা থেকে একটি কপি নিন: জিডি/এফআইআর এর কপি আপনার কাছে রাখুন। এটি বিটিআরসিতে আইমিইআই ব্লক করতে এবং পরে দাবি করতে (যদি ইন্স্যুরেন্স থাকে) কাজে লাগবে।
- বিটিআরসিতে আইমিইআই নম্বর রিপোর্ট করুন:
- বিটিআরসির অনুমোদিত সেন্টার বা তাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে হারানো ফোনের আইমিইআই নম্বর রিপোর্ট করুন।
- বিটিআরসি সিএইচআরআইপি পোর্টাল: https://chr.btrc.gov.bd (Central Equipment Identity Register – CEIR)
- এই পোর্টালে গিয়ে আইমিইআই নম্বর, জিডি/এফআইআর নম্বর, ফোনের বিবরণ ইত্যাদি দিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
- ফলাফল: বিটিআরসি সেই আইমিইআই নম্বরটি ব্ল্যাকলিস্ট করবে। ফলে ফোনটি দেশের ভেতরে কার্যত ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
- ডিজিটাল নিরাপত্তা: সমস্ত অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত করুন:
- পাসওয়ার্ড পরিবর্তন: জিমেইল/আইক্লাউড (প্রধান অ্যাকাউন্ট), সোশ্যাল মিডিয়া (Facebook, Instagram, Twitter), ব্যাংকিং অ্যাপস, মোবাইল ব্যাংকিং, ই-কমার্স অ্যাকাউন্ট (Daraz, Foodpanda), ওয়ার্ক/পার্সোনাল ইমেইল – সবকিছুর পাসওয়ার্ড দ্রুত পরিবর্তন করুন।
- টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন (2FA) চেক করুন: যে অ্যাকাউন্টে 2FA চালু ছিল, সেখানে নতুন ডিভাইসে লগ ইন হলে আপনার বিকল্প ইমেইল বা ফোন নম্বরে কোড যাচ্ছে কিনা নজর রাখুন। হারানো ফোনটি যদি অনুমোদিত ডিভাইস হয়ে থাকে, তাহলে 2FA কোড সেখানে যেতে পারে। তাই যত দ্রুত সম্ভব অন্যান্য ডিভাইস থেকে সেই অ্যাকাউন্টের সুরক্ষা সেটিংস চেক করুন এবং অজানা ডিভাইস/সেশন লগ আউট করুন।
- অ্যাপস/সেবা থেকে হারানো ডিভাইসের অ্যাক্সেস রিভোক করুন:
- গুগল:
Security
সেকশনে গিয়েYour devices
তে দেখুন। হারানো ডিভাইসটি সিলেক্ট করেSign out
করুন। - ফেসবুক:
Settings & Privacy > Settings > Security and Login > Where You're Logged In
। হারানো ডিভাইসেLog Out
করুন। - অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিসের লগইন কার্যকলাপ চেক করুন এবং অজানা সেশন লগ আউট করুন।
- গুগল:
দীর্ঘমেয়াদী সুরক্ষা ও ভবিষ্যৎ প্রস্তুতি: ফোন হারানোর আগেই যা করবেন (H2)
ফোন হারানোর যন্ত্রণা একবার ভোগ করলেই বোঝা যায় প্রস্তুতি কতটা জরুরি। এই অভিজ্ঞতা থেকে শিখে নিন, ভবিষ্যতের জন্য এই সুরক্ষা ব্যবস্থাগুলো অবশ্যই নিন:
- আইমিইআই নম্বর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিরাপদে লিখে রাখুন:
- ফোন কেনার দিনেই বক্সের আইমিইআই লেবেল ও রিসিপ্ট/ওয়ারেন্টি কার্ডটি নিরাপদ স্থানে (ফাইল, ডিজিটাল কপি ক্লাউডে) সংরক্ষণ করুন।
- ফোনের সেটিংস থেকে আইমিইআই নোট করে রাখুন (ফোনে না রেখে অন্য কোথাও)।
- বিটিআরসির সিএইচআরআইপি পোর্টালে আইমিইআই নিবন্ধন করার কথাও ভাবতে পারেন (যদিও সাধারণত হারানোর পর রিপোর্ট করা হয়)।
- ফাইন্ড মাই ডিভাইস/ট্র্যাকিং সার্ভিস সর্বদা সক্রিয় রাখুন:
- অ্যান্ড্রয়েড:
Settings > Security > Find My Device
চালু করুন।Location
অন রাখুন। - আইফোন:
Settings > [Your Name] > Find My > Find My iPhone
চালু করুন।Send Last Location
অপশনটিও অন করুন (ব্যাটারি কমে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোকেশন পাঠায়)। - ব্যাটারি অপ্টিমাইজেশন বন্ধ করুন: অনেক ফোনে ব্যাটারি সেভিং মোডে ট্র্যাকিং সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। ফাইন্ড মাই ডিভাইস অ্যাপ/সার্ভিসকে ব্যাটারি অপ্টিমাইজেশন থেকে “Restricted” বা “Don’t Optimize” সেট করুন।
- অ্যান্ড্রয়েড:
- শক্তিশালী স্ক্রিন লক ও ডেটা এনক্রিপশন ব্যবহার করুন:
- পাসকোড/পাসওয়ার্ড/পিন: সহজ প্যাটার্ন বা ৪ ডিজিটের পিন নয়। অন্তত ৬ ডিজিটের পিন বা একটি শক্তিশালী অ্যালফানিউমেরিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
- বায়োমেট্রিক্স: ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আনলক ব্যবহার করুন (তবে পাসকড/পাসওয়ার্ড ব্যাকআপ হিসেবে থাকতেই হবে)।
- ডেটা এনক্রিপশন: আধুনিক অ্যান্ড্রয়েড ও আইফোন ডিফল্টভাবেই ডেটা এনক্রিপ্ট করে। নিশ্চিত হয়ে নিন এটি চালু আছে।
- নিয়মিত ব্যাকআপ নিন:
- অ্যান্ড্রয়েড: গুগল ওয়ান (Google One) ব্যবহার করে ফটো, কন্টাক্ট, ক্যালেন্ডার, অ্যাপ ডেটা ইত্যাদির নিয়মিত ব্যাকআপ চালু রাখুন (
Settings > Google > Backup
). - আইফোন: আইক্লাউড ব্যাকআপ (
Settings > [Your Name] > iCloud > iCloud Backup
) সক্রিয় রাখুন এবং নিয়মিত ব্যাকআপ নিন। - অতিরিক্ত সুরক্ষা: গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ও ছবির জন্য গুগল ড্রাইভ, ড্রপবক্স বা স্থানীয় হার্ড ড্রাইভে ম্যানুয়াল ব্যাকআপ নেওয়ার অভ্যাস করুন।
- অ্যান্ড্রয়েড: গুগল ওয়ান (Google One) ব্যবহার করে ফটো, কন্টাক্ট, ক্যালেন্ডার, অ্যাপ ডেটা ইত্যাদির নিয়মিত ব্যাকআপ চালু রাখুন (
- মোবাইল অ্যান্টি-ভাইরাস ও সিকিউরিটি অ্যাপ:
- বিটিআরসি-অনুমোদিত বা বিশ্বস্ত ব্র্যান্ডের (যেমন: Kaspersky, Bitdefender, Norton) মোবাইল সিকিউরিটি অ্যাপ ব্যবহার করুন।
- এই অ্যাপগুলোতে প্রায়শই অতিরিক্ত ফিচার থাকে যেমন:
- রিমোট লক/ওয়াইপ: ফাইন্ড মাই ডিভাইসের বিকল্প হিসেবে।
- থেফ্ট প্রোটেকশন: ফোন চুরির সময় সতর্কবার্তা, ছবি তোলা।
- অ্যাপ লক: স্পেসিফিক অ্যাপস (যেমন ব্যাংকিং অ্যাপ) খুলতে অতিরিক্ত পাসকোড চাওয়া।
- সিম চেঞ্জ অ্যালার্ট: আপনার সিম কার্ড বদল হলে নির্দিষ্ট কাউকে নোটিফিকেশন পাঠানো।
- ডিভাইস ইন্স্যুরেন্সের কথা বিবেচনা করুন:
- কিছু ক্রেডিট কার্ড বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে মোবাইল ফোন ইন্স্যুরেন্স থাকে।
- আলাদাভানেও ফোন ইন্স্যুরেন্স নেওয়া যায় (বাংলাদেশে অপশন সীমিত, তবে চেক করে দেখুন)।
- ইন্স্যুরেন্স থাকলে জিডি/এফআইআর কপি এবং ক্রয় সনদ জমা দিতে হয় দাবি করার জন্য।
জেনে রাখুন (H2)
- ফোন হারানোর পর প্রথম ১০ মিনিটে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কী?
আতঙ্কিত না হয়ে নিজের ফোন নম্বরটি অন্য ফোন থেকে ডায়াল করে শব্দ শুনুন এবং খুঁজে দেখুন। সাথে সাথে অন্য ডিভাইস থেকে গুগল ফাইন্ড মাই ডিভাইস (অ্যান্ড্রয়েড) বা আইক্লাউড ফাইন্ড মাই (আইফোন) ওয়েবসাইটে লগ ইন করে ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করার চেষ্টা করুন। এর পাশাপাশি দ্রুততম সময়ে আপনার মোবাইল অপারেটরকে কল করে সিম কার্ডটি ব্লক করুন। এই তিনটি কাজ প্রাথমিকভাবে ফোন ফেরত পেতে এবং ক্ষতি কমাতে সবচেয়ে কার্যকর।
- আমার ফোনের আইমিইআই নম্বর জানা নেই, কী করব?
আইমিইআই ছাড়া বিটিআরসিতে ব্লক করা সম্ভব নয়। প্রথমে ফোনের বাক্সে বা কেনার রিসিপ্টে আইমিইআই খুঁজুন। সেটাও না থাকলে, আপনার মোবাইল অপারেটরের কাস্টমার কেয়ারে যোগাযোগ করুন। তারা আপনার নম্বরের সাথে রেজিস্ট্রেড ডিভাইসের আইমিইআই নম্বর দিতে পারে (যদি আপনি তাদের কাছে ডিভাইস ডিটেইল আপডেট করে রাখেন)। এছাড়া, যদি আপনি আগে বিটিআরসির সিএইচআরআইপি পোর্টালে আইমিইআই রেজিস্টার করে থাকেন, সেখান থেকে জানা যেতে পারে। থানায় জিডি করতে গিয়েও অপারেটরের সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।
- ফোন ট্র্যাক করা গেলে কি পুলিশ সাহায্য করবে?
হ্যাঁ, যদি আপনার ফোনের সঠিক লোকেশন (গুগল/আইক্লাউড ট্র্যাকিং) জানা থাকে এবং আপনি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি বা এফআইআর করে থাকেন, তবে পুলিশ সাধারণত সাহায্য করে থাকে। তাদের আপনার জিডি/এফআইআর নম্বর এবং ফোনের রিয়েল টাইম ট্র্যাকিং ইনফরমেশন (স্ক্রিনশটসহ) সরবরাহ করুন। তবে, রিসোর্সের সীমাবদ্ধতার কারণে প্রতিটি ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নাও হতে পারে। আপনার নিজস্ব প্রচেষ্টা (যেমন ট্র্যাক করে গিয়ে দেখা) এবং পুলিশের সহায়তা একসাথে কাজ করলে সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়ে।
- ফোন ফেরত পাবার সম্ভাবনা কতটুকু?
দুঃখজনকভাবে, বাংলাদেশে হারানো বা চুরি হওয়া ফোন ফেরত পাওয়ার হার খুবই কম। ট্র্যাকিং অন থাকলে এবং খুব দ্রুত (কয়েক ঘন্টার মধ্যে) ব্যবস্থা নিলে ফেরত পাবার সম্ভাবনা কিছুটা থাকে, বিশেষ করে যদি কেউ সৎভাবে ফোনটি পেয়ে থাকেন। তবে, চুরি হয়ে থাকলে বা দেরি হয়ে গেলে সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আইমিইআই ব্লক করা ফোনটি বাংলাদেশে ব্যবহার করা অসম্ভব করে তোলে, যা ডিমান্ড কমায় কিন্তু ফোনটি ফেরত পাওয়ার গ্যারান্টি দেয় না। তাই ডেটা সুরক্ষা এবং নতুন ফোনের প্রস্তুতিই মুখ্য লক্ষ্য হওয়া উচিত।
- সিম ব্লক করলে কি নতুন সিম দিয়ে ফোনটি ব্যবহার করা যাবে?
হ্যাঁ, আপনার হারানো সিম কার্ড ব্লক করলে শুধু সেই নির্দিষ্ট সিম কার্ডটিই বন্ধ হয়। ফোনের মধ্যে অন্য অপারেটরের সিম কার্ড ঢুকিয়ে দিলে সেটি কাজ করবে। তাই সিম ব্লক করার পাশাপাশি আইমিইআই নম্বর দিয়ে বিটিআরসিতে রিপোর্ট করে ফোনটিকেই নেটওয়ার্কে ব্লক করানো জরুরি। শুধুমাত্র আইমিইআই ব্ল্যাকলিস্ট করলেই ফোনটি বাংলাদেশের যেকোনো নেটওয়ার্কে ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
- ফোন হারানোর পর ব্যাংক একাউন্ট নিরাপদ রাখার উপায় কী?
দ্রুততম সময়ে আপনার ব্যাংকের গ্রাহক সেবায় ফোন করে আপনার অ্যাকাউন্টে হারানো/চুরি হওয়া ফোনের ডিভাইস থেকে যেকোনো লেনদেন ব্লক করার অনুরোধ করুন। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ (যদি থাকে) ব্লক করতে বলুন। সাথে সাথে অন্য ডিভাইস বা শাখা থেকে আপনার ইন্টারনেট ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করুন। আপনার ফোন নম্বরটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সাথে রেজিস্টার করা ছিল কি না এবং সেটি দিয়ে OTP পাবার সম্ভাবনা আছে কি না জেনে নিন। প্রয়োজনে ব্যাংককে আপনার রেজিস্ট্রার্ড মোবাইল নম্বরটি সাময়িকভাবে ব্লক বা পরিবর্তন করার অনুরোধ করুন।
ফোন হারিয়ে গেলে করণীয় পদক্ষেপগুলোর সঠিক ও সময়োচিত প্রয়োগই পারে আপনার গোটা ডিজিটাল জীবনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে এবং হয়তো সেই অমূল্য ডিভাইসটি ফিরে পেতেও সাহায্য করতে। প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান। আতঙ্ক নয়, সচেতনতা ও দ্রুত পদক্ষেপই আপনার শ্রেষ্ঠ অস্ত্র। আজই আপনার ফোনের আইমিইআই নম্বরটি লিখে রাখুন, ফাইন্ড মাই সার্ভিস চালু করুন, এবং নিয়মিত ব্যাকআপ নেওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রস্তুতিই পারে পরবর্তী দুর্ঘটনার ক্ষতিকে অনেকাংশে কমিয়ে দিতে। আপনার ডিজিটাল সুরক্ষার দায়িত্ব নিজের হাতে নিন!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।