রাজধানীর মোহাম্মদপুরে চাঞ্চল্যকর মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় জড়িত আয়েশা চুরির উদ্দেশ্যেই ওই বাসায় কাজ নিয়েছেলেন। তার বিরুদ্ধে আগেও অন্য বাসায় চুরির অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে মিডিয়া সেন্টার সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) এস এন মো. নজরুল ইসলাম।
এর আগে, গত সোমবার সকালে শাহজাহান রোডের ১৪ তলা একটি আবাসিক ভবনের সপ্তম তলার বাসায় লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিয়াকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার গৃহকর্মী আয়েশাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঝালকাঠির নলছিটি এলাকায় আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। এ সময় আয়েশার স্বামীকেও আটক করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দিন সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের ভেতরে মা-মেয়েকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় ৩ দিন আগে কাজে যোগ দেওয়া গৃহকর্মী আয়েশাকে দায়ী করে মামলা করেন নিহতের স্বামী আজিজুল ইসলাম (৫৭)।
এই ঘটনায় বাসার গৃহকর্মী আয়েশাকে সন্দেহ করা হলেও তাকে গ্রেফতারে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় পুলিশকে। কারণ, তার কোনও ছবি, এনআইডি, মোবাইল নম্বর বা পরিচয় সংরক্ষিত ছিল না ওই বাসায়। বোরকা পরে বা মুখ ঢেকে যাওয়া-আসা করায় সিসিটিভির ফুটেজেও তাকে চেনার মতো কোনও স্পষ্ট ভিজ্যুয়াল পাওয়া যায়নি।
ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনার আশেপাশে কোনও ডিজিটাল ক্লু না পেয়ে তদন্ত দল ‘ম্যানুয়াল’ উপায়ে থানায় গত এক বছরের গৃহকর্মীর মাধ্যমে সংঘটিত চুরির ঘটনাগুলো খুঁজতে থাকে পুলিশ। নিহত আফরোজার স্বামীর বর্ণনা অনুসারে তদন্তকারীরা বিশেষভাবে লক্ষ্য করেন, গলায় পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বসবাস ও গৃহকর্মীর পরিচয়ে সংঘটিত পূর্বের চুরির তথ্য। পুরোনো তথ্য ঘেঁটে হুমায়ুন রোডের একটি ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ থেকে একটি মোবাইল নম্বর পাওয়া যায়, সেখান থেকেই শুরু হয় আসামির সন্ধান।
কল রেকর্ড বিশ্লেষণে পাওয়া অবস্থান ধরে হেমায়েতপুরে গিয়ে জানা যায়, নম্বরটি ব্যবহার করতেন রাব্বি নামের এক ব্যক্তি। তদন্তে বেরিয়ে আসে, রাব্বির স্ত্রী আয়েশা। তারা আগে জেনেভা ক্যাম্পে থাকতেন। এরপর হেমায়েতপুরে তারা যে বাসায় থাকতেন, সেটি তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। পরে রাব্বির পরিবারের অন্য সদস্যদের তথ্যের ভিত্তিতে আশুলিয়া, বরিশাল, পটুয়াখালীসহ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। সর্বশেষ, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় আয়েশার কাছ থেকে একটি চুরি করা ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন ওই বাসা থেকে ২ হাজার টাকা চুরি করেন আয়েশা। তৃতীয় দিন সেই টাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের সময় গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তার তর্ক হয়।
চতুর্থ দিনে সুইচ গিয়ার চাকু লুকিয়ে বাসায় যান আয়েশা। টাকা চুরির বিষয়টি নিয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে তর্ক হয়। পরে বিষয়টি নিয়ে আফরোজা তার স্বামীকে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে পেছন থেকে ছুরি মারে আয়েশা। এই সময়ে ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন ঘাতক গৃহকর্মী।
মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠা নাফিসাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে। নাফিসা ইন্টারকমে গার্ডকে ফোন দিতে চাইলে আয়েশা ইন্টারকমের মূল তার ছিঁড়ে ফেলেন।
ডিএমপির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “ঘটনার পর নিজের রক্তমাখা কাপড় বদল করেন আয়েশা। এরপর নাফিসার স্কুল ড্রেসে বাসা থেকে বের হয়ে যান। এই সময়ে ব্যাকপ্যাকে ল্যাপটপ ও ফোন নিয়ে যান। পরে ঢাকা ছাড়ার সময়ে সিংগাইর ব্রিজ থেকে ফোন এবং পোশাক ভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেন।”
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল বলেন, “আয়েশার আগে থেকেই চুরির স্বভাব রয়েছে। এমনকি নিজের বোনের বাড়ি থেকেও ২ লাখ টাকা ও ৪ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করেছিলেন। এর আগে হুমায়ুন রোডে চুরির ঘটনায় থানা পুলিশ তাকে আটকও করেছিল।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, “দেশবাসী তথা ঢাকাবাসীর প্রতি ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে অনুরোধ, আপনারা যারা বাসায় গৃহকর্মী রাখেন তারা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হবেন। আপনার বাসায় কাজ করা ব্যক্তির পরিচয়পত্র ও তাকে শনাক্তকারী ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করে রাখবেন। কারণ, আপনি বাসার গৃহকর্মীর বানানো খাবার খান, আপনার বেড রুমে গৃহকর্মী প্রবেশ করে৷ এখানে আপনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা জড়িত।”
সূত্র ও ছবি : বাংলা ট্রিবিউন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



