জুমবাংলা ডেস্ক : শীতের সময় যে কয়েকটি রোগের প্রকোপ বাড়ে তার মধ্যে নিউমোনিয়া একটি। এ সময় সামান্য শীতেই ঠান্ডা লেগে সর্দি-কাশি, ব্রঙ্কিওলাইটিস এমনকি নিউমোনিয়া হতে পারে। এ ছাড়াও শীতে ধুলাবালির আধিক্যের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়া সাধারণত দুই ধরনের হয়।
১. ভাইরাল নিউমোনিয়া : ভাইরাল নিউমোনিয়া সবচেয়ে সাধারণ ধরন। ভাইরাসের আক্রমণে এ ধরনের নিউমোনিয়া হয়। সাধারণত শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হয়।
২. ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া : সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে এ ধরনের নিউমোনিয়া হয়।
প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। সর্দি বা ফ্লু হওয়ার পরে নিজে থেকে এ ধরনের সংক্রমণ হয়ে থাকে।
তাই ঠান্ডা না লাগানোর দিকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। গুরুতর নিউমোনিয়ার কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। নিউমোনিয়া রোগের জীবাণু মানুষের ফুসফুস এবং শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে। ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস এবং টিবির জীবাণুর মাধ্যমে নিউমোনিয়া ছড়ায়। আক্রান্ত হয় সবচেয়ে বেশি শিশু এবং বয়স্করা।
নিউমোনিয়া ফুসফুস ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ। সংক্রমণ এবং এর পরবর্তী প্রদাহ থেকে এ রোগ হয়। সংক্রমণ হতে পারে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক ইত্যাদি দিয়ে। সব সর্দি-কাশিই নিউমোনিয়া নয়। যখন জ্বর ও এর সঙ্গে থাকে কফ এবং শ্বাসকষ্ট তখনই কেবল শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হয়েছে বলে ধরা হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হালকা থেকে জীবন ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
লক্ষণ
জ্বর ও ক্লান্তি অনুভব করা, মাত্রাতিরিক্ত ঘাম ও কাশি হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট, বুকব্যথা ও শরীরে কাঁপুনি, মাথাব্যথা ও শরীরের মাংসপেশি ব্যথা, খাওয়ায় অনীহা ও বমি ভাব। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে শরীরের রক্তপ্রবাহে জীবাণুর সংক্রমণ দেখা দেয়। ফুসফুসের চারপাশে তরল জমা এবং সংক্রমণ হয়। ফুসফুসে ঘা হয়ে ক্ষত ও তীব্র শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
ঝুঁকিতে যারা
ছোট্ট শিশু এবং বয়স্ক ব্যক্তিরা। বহুদিন ধরে ভুগছে এমন কোনো রোগ থাকলে যেমন- ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ফুসফুসের অন্য কোনো রোগ, এইডস ইত্যাদি। যাদের অন্য কোনো কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যেমন ক্যানসারের চিকিৎসা নিলে, স্টেরয়েড ওষুধ সেবন করলে। যারা ধূমপান করেন। দুই মাসের নিচের শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাসের হার মিনিটে ৬০ বারের বেশি, এক বছরের নিচে ৫০ বার বা তার বেশি এবং এক বছর থেকে পাঁচ বছরের শিশুর মিনিটে ৪০ বার বা তার বেশি শ্বাস-প্রশ্বাস হলে তাকে শ্বাসকষ্ট বলা হয়। জ্বর-কাশিতে আক্রান্ত শিশু এ রকম ঘন ঘন শ্বাস নিলে বা শ্বাসের সঙ্গে বুক বা পাঁজর নিচে দেবে যেতে থাকলে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দিলে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া প্রতিরোধ করা যায়।
প্রতিরোধ
নিউমোনিয়ার চিকিৎসা বাড়িতেই সম্ভব। এ জন্য সঠিক ওষুধের পাশাপাশি প্রচুর তরল খাবার ও বিশ্রাম নিতে হবে। সুস্থ হতে ২-৩ সপ্তাহ লেগে যায়। হালকা গরম পানি, লবণপানি বা লাল চা দেওয়া যেতে পারে। নাকে নরমাল স্যালাইন, নরসল ড্রপ দেওয়া। দুবছরের নিচের শিশুদের বুকের দুধ বন্ধ করা যাবে না। বুকে তেল বা বাম ব্যবহার করাও উচিত নয়। খুব বেশি শ্বাসকষ্ট, বমি, শিশু অজ্ঞান বা খিঁচুনি হলে হাসপাতালে নিতে হবে। নিউমোনিয়া প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সচেতন হলে প্রতিরোধ করা যায়। ৫ বছরের নিচে বা ৬৫ বছরের ওপরে বয়সীদের অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। নিয়মিত হাত ধুতে হবে। ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ধূমপান ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়। ফলে সহজেই সংক্রমণ ঘটতে পারে এবং নিউমোনিয়া হতে পারে। শীতের সময় রাতে যারা ব্যাডমিন্টন খেলে তাদের একটু সচেতন হওয়া উচিত। কারণ গা ঘেমে শরীরে শুকিলে সেখান থেকে সাধারণ ঠান্ডা, সর্দি-কাশি হতে পারে। সেখান থেকে নিউমোনিয়া।
সাধারণ ঠান্ডা লাগলেও খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি খারাপ দিকে না যায়। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, পরিমিত বিশ্রাম নিতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। শিশু জন্মের পর ইপিআই শিডিউলের ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।