ধর্ম ডেস্ক : রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কিরামের ওপর চলছিল চরম নির্যাতন। খাজা আবু তালিব নবীজি (সা.)-কে কাফিরদের আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা দিতেন। ঘরে নবীজি (সা.)-কে সান্ত্বনা দিতেন হজরত খাদিজাতুল কুবরা (রা.)। কয়েক দিনের ব্যবধানে শ্রদ্ধেয় চাচা আবু তালিব ও প্রিয় স্ত্রী খাদিজাতুল কুবরা (রা.) ইন্তেকাল করলেন।
এরপর অনেক আশা নিয়ে তায়েফবাসীর কাছে তাওহীদের দাওয়াত নিয়ে গেলেন। তারা দাওয়াত কবুল করল না। ক্ষতবিক্ষত করল নবীজি (সা.)-কে। এমন কঠিন মুহূর্তে মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-কে বড় বড় নিদর্শন দেখিয়ে সম্মানিত করতে ডেকে নিলেন ঊর্ধ্বজগতে।
সশরীরে, সজ্ঞানে জাগ্রত অবস্থায় ভ্রমণ করালেন আসমান জমিনসহ ঊর্ধ্বজগৎ। স্বচক্ষে দেখালেন অনেক কিছু। যাকে মেরাজ বলা হয়।
মেরাজের সংক্ষিপ্ত ঘটনা
বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী হিজরতের এক বা দেড় বছর আগে এক রাতে নবীজি (সা.) নফল হিসেবে রাতের নামাজ আদায় করলেন।
অতঃপর খানায়ে কাবাসংলগ্ন ‘হাতিমে’ শুয়ে বিশ্রাম নিতে লাগলেন। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে দুই চোখ বন্ধ করলেন। এরই মধ্যে আগমন করলেন জিবরাঈল (আ.)। জাগ্রত করলেন নবীজিকে। আবে জমজম দ্বারা তাঁর হৃৎপিণ্ড পরিশাধন করে পুনঃস্থাপন করলেন।
বোরাক নামক অতি ক্ষিপ্রগতি সম্পন্ন একটি বাহনে চড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যে মসজিদুল আকসায় নিয়ে গেলেন। যেখানে যেতে তখন কয়েক দিন লেগে যেত। সেখানে কুদরতিভাবে আগে থেকেই সব নবী-রাসুলকে উপস্থিত করা হয়েছিল। নবীজি (সা.) তাঁদের নিয়ে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করলেন।
এরপর ঊর্ধ্বাকাশে রওনা হলেন। প্রথম আকাশে আদম (আ.), দ্বিতীয় আকাশে ঈসা ও ইয়াহইয়া (আ.), তৃতীয় আকাশে ইউসুফ (আ.), চতুর্থ আকাশে ইদরিস (আ.), পঞ্চম আকাশে হারুন (আ.), ষষ্ঠ আকাশে মুসা (আ.) ও সপ্তম আকাশে বাইতুল মামুরে ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় এবং সবার সঙ্গে সালাম ও কুশল বিনিময় হয়। সপ্তম আকাশে অবস্থিত ‘বাইতুল মামুর’ ফেরেশতাদের ইবাদতের স্থান। যেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা আসেন ও ইবাদত করে প্রস্থান করেন; যাঁরা দ্বিতীয়বার আসার সুযোগ পান না।
অতঃপর নবীজি (সা.)-কে সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হলো। নবীজি (সা.) বলেন, সিদরাতুল মুনতাহা পেরিয়ে এত ঊর্ধ্বে পৌঁছে যাই, যেখান থেকে আমি আল্লাহর হুকুম-আহকাম লিপিবদ্ধ করার কাজে ব্যস্ত ফেরেশতাদের ‘কলমের’ আওয়াজ শুনতে পেলাম। এরপর মহান আল্লাহ নবীজি (সা.)-কে যা দেওয়ার ছিল তা দিলেন। (পরিবর্তনসহ মুসলিম, হাদিস : ১৬২)
নবীজিকে যেসব পাপের শাস্তি দেখানো হয়েছে
নবীজি (সা.) একদল লোককে দেখলেন, তাদের নখগুলো তামার। নিজেদের নখ দিয়ে তারা (স্বয়ংক্রিয়ভাবে) নিজের গাল ও বুকে আঁচড় কাটছে। জিজ্ঞাসা করলেন, জিবরাঈল এরা কারা? বলেন, এরা ওই সব লোক, যারা গিবত করত এবং মানুষকে লাঞ্ছিত করত। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৭৮)
তিনি আরো দেখলেন, একদল লোকের ঠোঁট আগুনের কাঁচি দিয়ে (স্বয়ংক্রিয়ভাবে) কাটা হচ্ছে। ঠোঁট কাটা মাত্র তা পুনরায় জোড়া লেগে পূর্ববৎ হয়ে যেত। জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? জিবরাঈল (আ.) বলেন, এরা বক্তৃতা করত বটে, কিন্তু নিজেরা আমল করত না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১২২১১)
আরো একদল লোক দেখলেন, যাদের পেট ছিল এক একটি গৃহের মতো। পেটের ভেতরটা সর্পে ভর্তি ছিল, যা বাইরে থেকেই দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল। জিজ্ঞাসা করলেন, এরা কারা? জিবরাঈল (আ.) বললেন, এরা সুদখোর। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮৬৪০)
নবীজি (সা.) এ সফরে যে উপহার পেলেন
এ সফরে নবীজিকে বিশেষ তিনটি উপহার দেওয়া হয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, সুরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং এই উম্মতের যারা শিরক থেকে বেঁচে থেকে মৃত্যুবরণ করবে তাদের গুনাহগুলো মাফ করে দেওয়ার ঘোষণা। (মুসলিম, হা : ৩২০)
মেরাজ-পরবর্তী সকালে মানুষের প্রতিক্রিয়া
শবেমেরাজের সকালে নবীজি (সা.) হাতিমে কাবায় বসে আছেন। আবু জাহেলের সঙ্গে দেখা হলে বিদ্রুপের ছলে জিজ্ঞাসা করল ‘কোনো ব্যাপার আছে নাকি?’ নবীজি (সা.) বললেন হ্যাঁ। সে বলল কী? তিনি জবাব দিলেন, আজ রাতে আমার মেরাজ হয়েছে। মেরাজের ঘটনা বর্ণনা করলেন। সে বিস্ময়ের সঙ্গে বলল, সব মানুষ তোমার কাছে এসে গেলে তুমি এ ঘটনা বলতে পারবে তো? নবীজি (সা.) দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, হ্যাঁ। সে সবাইকে ডাকল। নবীজি (সা.) পুনরায় বর্ণনা দিলেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মসজিদে আকসারও বিবরণ দিলেন। কিন্তু তার পরও তারা নবীজি (সা.)-কে সত্য নবী হিসেবে মেনে নিতে পারল না। কাফিরই থেকে গেল। (সংক্ষিপ্তরূপে মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৮১৯)
অন্যদিকে আবু বকর (রা.) নবীজির মেরাজের কথা শুনে এক আকাশ আস্থা নিয়ে সুদৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলেন, আমি তো এর চেয়েও আরো দূরের অনেক জটিল বিষয়েও তাঁকে বিশ্বাস করি। তাঁর কাছে আসা আসমানি বার্তাগুলোর ওপর আছে আমার অটল বিশ্বাস ও দৃঢ় ঈমান। পেলেন ‘সিদ্দিক’ উপাধি। (মুসতাদরাক : ২/৩৬১)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।