জুমবাংলা ডেস্ক : শুধুমাত্র মাছকে ঘিরেই সন্ধ্যার পর কয়েক ঘণ্টার বাজার। চাঁদপুরের ইলিশ, রুই, কাতলা, বোয়াল, বাইম, শিং, মাগুর, চিংড়ি, কই, পাবদা, টেংরাসহ প্রায় ৭০ থেকে ৮০ প্রজাতির দেশিয় মাছ বিক্রি হয় এ বাজারে। সামুদ্রিক মাছ চাপিলা, লইট্যা, সুরমা, কোরাল, টুনা, রূপচাঁদা, বাটা, বাইলা ও চিংড়ি, কাঁকড়াও বিক্রি হয় এখানে।
কুমিল্লার শতবছরের ঐতিহ্যবাহী হাট পদুয়ার বাজার। কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সংযোগস্থল ও কুমিল্লা শহরের প্রবেশপথে বাজারটি দীর্ঘ দুই কিলোমিটারজুড়ে অবস্থিত।
সপ্তাহে দুইদিন বিকাল ৫ টায় শুরু হওয়া মাছ বাজারটিতে বিক্রি চলে রাত ১১টা পর্যন্ত। আর এই কয়েক ঘণ্টায় বিক্রি হয় প্রায় ২ কোটি টাকার মাছ। মাঝে মধ্যে বিভিন্ন উৎসব থাকলে বিক্রির পরিমাণ তিন থেকে চার কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যায়।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাছ বিক্রেতারা এসে রোববার ও বৃহস্পতিবারে মাছের হাট বসান। তবে অধিকাংশ মাছ আসে চাঁদপুর ও ফেনী নদী থেকে। এছাড়া সামুদ্রিক মাছের বেশিরভাগ সংগ্রহ করা হয় চট্টগ্রাম থেকে। কিছুসংখ্যক মাছ আনা হয় কক্সবাজার থেকে।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর গিয়ে দেখা যায়, আঞ্চলিক সড়কের এক পাশে চার সারিতে বসেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে আড়ৎ থেকে আসা ট্রাক ভর্তি মাছগুলো নামাচ্ছেন স্থানীয় শ্রমিকরা। তাজা বর্ণিল মাছ লাফাচ্ছে বিক্রেতার ডালার ওপরে। বড় সাইজের মাছ দেখতে ও কিনতে বেশি ভিড় দেখা যায়। ছোট ছোট দোকানগুলো ঘিরে রেখেছে স্থানীয় ক্রেতারাই। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাকে মুখর চারপাশ। অন্যদিকে কুমিল্লা নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে যানবাহন চলছে।
স্থানীয়রা জানান, এ বাজারে সবচেয়ে বেশি মাছ কিনতে আসেন কুমিল্লার শহরের মানুষ। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে সৌখিন ক্রেতারা মাছ কিনতে আসেন। সড়কের পাশে গাড়ি রেখে মাছ কিনেন অনেকে। বিয়ে, জন্মদিনসহ বড় অনুষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টার ও জেলার অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো পাইকারিতে মাছ সংগ্রহ করেন এ বাজার থেকে।
ব্যবসায়ীদের সূত্র জানায়, এখানে প্রতিদিন তিনশ’র বেশি দোকান বসে। দৈনিক ১২০-১৩০ মেট্রিক টন মাছ বিক্রি হয় পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে। যার বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা।
এদিকে মাছ বিক্রেতাদের মধ্যে বেশিরভাগের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দি ও চাঁদপুরের শাহরাস্তি, ফেনী নোয়াখালী ও কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায়। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, ঢাকার কারওয়ান বাজারের মৌসুমী ব্যবসায়ী, পদুয়ার বাজারের নিকটবর্তী অঞ্চল, বৃহত্তর কুমিল্লার বেশিরভাগ উপজেলার মাছ ব্যবসায়ীরা মাছ বিক্রি করতে আসেন এ বাজারে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও কুমিল্লা-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম খুব সহজ হয়।
এ বাজারে দীর্ঘ দুই যুগ মাছ বিক্রি করা কালা মিয়া সর্দার বলেন, সপ্তাহে দুইদিন বাজারে মাছ নিয়ে বসি, রাস্তা সাথে বাজার হওয়ায় অল্প সময়ে সব মাছ বিক্রি হয়ে যায়। আমাগো আড়তদারের কোনো ঝামেলা নেই। ব্যবসা যা-ই হয়, তাতে লোকসানের মুখে পড়ার ঝুঁকি থাকে না। ক্রেতারাও বেশ খুশি। যাতায়াত সহজ, হাতের নাগালে পাওয়া যায় সব রকমের মাছ।
দাউদকান্দির সুমন বিক্রি করেন রুই-কাতলাসহ কার্প জাতীয় মাছ। তিনি বলেন, দাউদকান্দির প্লাবনভূমি থেকে মাছ সংগ্রহ করি। প্রতি বাজারে দুই লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।
মুরাদনগর থেকে আসা কবির আহমেদ নামে এক বিক্রেতা বলেন, দৈনিক গড়ে দেড় লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয় আমার, আমি আসলে হোটেলগুলোতে মাছ গুলো সাপ্লাই দি,সকালে কিনি বিকেলে বিক্রি করে দেই।
ফেনী দাগন ভূঁইয়া থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী রহিম মোহাম্মদ বলেন, বাবা একসময় এ হাটে মাছ বিক্রি করছো, বাবার ঐতিহ্য ধরে ফেনীর জেলেদের থেকে মাছ সংগ্রহ করে এ বাজারে বিক্রি করছি এক যুগ ধরে। প্রতিদিন গড়ে আমার এক লক্ষ টাকার মাছ বিক্রি হয়।
মুরাদনগর উপজেলার ছায়াকান্দি এলাকা থেকে আসা সেলিম রেজা বলেন, দেশি মাছগুলো বিক্রি করি। গড়ে ২০ টাকার মাছ বিক্রি হয়। কক্সবাজার থেকে সামুদ্রিক মাছ এনে বিক্রি করেন দিলীপ সরকার। তিনি বলেন, ঢাকায় মাছ বিক্রির পাশাপাশি সপ্তাহে দুইদিন কুমিল্লায় চলে আসি। এখানে মাছ নিয়ে আসলে কয়েক ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে যায়।
নগরীর চকবাজার থেকে মাছ কিনতে আসা হোটেল ব্যবসায়ী কাদের সরকার বলেন, এখানে কম দামে মাছ পাওয়া যায়। সামুদ্রিক মাছ থেকে শুরু করে দেশি মাছ পাইকারি মূল্যে পাওয়া যায়, তাই পদুয়ার বাজার এলাকাতেই আসি।
পদুয়ার বাজার কমিটির সভাপতি আব্দুল মালেক ভূঁইয়া বলেন,দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাছবাজারটি বসে। নতুন করে আঞ্চলিক মহাসড়কে ফোরলেনের কাজ শেষ হওয়া বাজার পরিধি বেড়েছে। মাছবাজারটি কুমিল্লার সর্ববৃহৎ। এখানে অনেকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে বাজারটির কারণে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।