জুমবাংলা ডেস্ক : সুন্দরবনের পাশের জনপদে শীত মৌসুমে বাঘের আনাগোনা বাড়ছে। শীতকাল বাঘের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় এই সময় বাঘ-বাঘিনী একে অপরের সঙ্গী খুঁজে বেড়ায়। যার কারণে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। সোমবার রাতে এভাবেই একটি বাঘ ভোলার নদী পার হয়ে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সাউথখালী ইউনিয়নের বনসংলগ্ন সোনাতলা গ্রামের হালিম চাপরাসির বাড়িতে প্রবেশ করে। রাত ১০টার দিকে গরুর ঘরের পাশে একটি বাঘটি দেখতে পান গৃহকর্তা হালিম চাপরাসি। তার ডাক চিৎকারে বাঘটি দ্রুত নদীর দিকে চলে সুন্দরবনে যায়।
এর আগে গত ১০ নভেম্বর রাতে একই গ্রামে এসেছিল একটি বাঘ। বার বার গ্রামে বাঘ আসায় গ্রামবাসীর মধ্যে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে, প্রজনন মৌসুমে লোকালয়ে বাঘ এলেও কোন ক্ষয়ক্ষতি না করায় আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানান বন্যপ্রাণি সংরক্ষণ বিভাগসহ বাঘ সংরক্ষণ কাজে অভিজ্ঞরা। সতর্কতা হিসেবে বন বিভাগ সন্ধ্যার পরে যাতে লোকালয়ের কেউ একা ঘর থেকে বের হওয়াসহ চলাফেরা না করেন সেজন্য গ্রামের লোকজনকে মাইকিং করে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী হালিম চাপরাসি জানান, তার বসত ঘর থেকে কিছুটা দূরে গোয়াল ঘর। রাতে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে গরুর খোঁজ নিতে গিয়ে দেখি গোয়াল ঘরের পাশের ঝোপের মধ্যে একটি বাঘ দাঁড়িয়ে রয়েছে। তখন তিনি ভয়ে দ্রুত ঘরে ফিরে গিয়ে ডাক চিৎকার দেন। পরে তিনি ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিম (ভিটিআরটি) ও কমিউনিটি প্যাট্রলিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্যদের মোবাইলে জানালে সকালে বনবিভাগ ও ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তার বাড়ি ও ভোলা নদীর চরে বাঘের পায়ের অসংখ্য তাজা ছাপ দেখতে পান। এঘটনার পর গ্রামবাসীর মধ্যে বাঘ আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ভিটিআরটি ও সিপিজি দলনেতা মো. খলিল জমাদ্দার জানান,খাবারের জন্য বাঘ লোকালয়ে আসেনা। আমি ২০০৮ সাল থেকে সুন্দরবনের বাঘসহ বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে কাজ করছি। এই ১৬ বছরে ১৫ থেকে ১৬ বার বাঘের দেখা পেয়েছি। শিকারের জন্য বাঘ বেশিটা তাড়াহুড়া বা লোকালয়ে খুব কমই আসে। শীতের সময় বাঘ লোকালয়ে আসার কারণ হিসেবে আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আসলে খাবারের জন্য বাঘ লোকালয়ে আসেনা। খাবারের জন্য এলে গ্রামের গৃহপালিত প্রাণির ওপর আক্রমণ করতো। গ্রামের বাড়িতে গরু, ছাগল, মহিষ খোলা স্থানে বাাঁধা থাকে। কিন্তু বাঘ পাশ থেকে হেটে গেলেও তাদের ওপর কখনো আক্রমণ করে না। শীতকাল বাঘের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় এই সময় বাঘ-বাঘিনী একে অপরের সঙ্গী খুঁজে বেড়ানোর কারণে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান বলেন, লোকালয়ে বাঘের খবর পেয়ে বনরক্ষী ও বন্যপ্রাণি সুরক্ষায় নিয়োজিত কর্মীদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে খোঁজ নিয়েছি। ওই বাড়ি ও ভোলা নদীর চরে বাঘের পায়ের অসংখ্য তাজা ছাপ দেখতে পাওয়া গেছে। সন্ধ্যার পরে যাতে লোকালয়ের কেউ একা ঘর থেকে বের হওয়াসহ চলাফেরা না করেন সেজন্য গ্রামের লোকজনকে মাইকিং করে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
আমাকে কাছে পেতে যে টাকা লাগবে তা দেবার সাধ্য আপনার নেই : স্বস্তিকা
বন্যপ্রাণি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা অঞ্চলের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) নির্মল কুমার পাল বলেন, শীতকালে প্রজনন মৌসুমে বাঘের বিচরণ বেড়ে যায়। সে কারণেও পথভ্রষ্ট হয়ে বাঘ-বাঘিনী লোকালয়ে চলে আসতে পারে। যখত আবার বুঝতে পারে এটা তার লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে, তখন আবার বাঘ বনে ফিরে যায়। তবে, বাঘ বা বন্যপ্রাণি যাতে অহরহ লোকালয়ে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে কাটাতাঁরের বেড়া নির্মাণের কাজ চলতি অর্থবছরেই শুরু হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।