জুমবাংলা ডেস্ক: রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি বাসায় পোকামাকড় মারার জন্য অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (গ্যাস ট্যাবলেট) ব্যবহার করার পর এর বিষক্রিয়ায় এক ব্যবসায়ীর দুই শিশু সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলো শায়েন মোবারত জাহিন (১৫) ও শাহিল মোবারত জায়ান (৯)। তাদের একজন রবিবার (৪ জুন) সকালে, অন্যজন গভীর রাতে মারা যায় বলে ভাটারা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরীফুল ইসলাম জানান।
এ ঘটনায় তিনি ভাটারা থানায় মামলা করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে স্প্রেম্যান টিটু মোল্লার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী-আল-ফারাবী শুনানি শেষে রিমান্ডের এ আদেশ দেন।
তবে কিভাবে ঘটলো এই মর্মান্তিক ঘটনা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ চারপাশে চলছে বিস্তর আলোচনা। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার কার্যকারণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আহমাদ মোস্তফা কামাল-নামে এক ব্যক্তি একটি পোস্ট করেছেন। জুমবাংলার পাঠকদের জন্য সেই পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
“পোকামাকড় মারতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এক বাসায় পেস্ট কন্ট্রোল সার্ভিসকে ডাকা হয়েছিল। তারা তিন ঘণ্টার জন্য বাসাটা খালি করতে বলেছিল। বাসার বাসিন্দারা ন’ ঘণ্টা পরে বাসায় ঢোকেন এবং বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হন। দুজন শিশু (বয়স ১৫ এবং ৯) সেই বিষাক্ত প্রতিক্রিয়া সইতে পারেনি। দুজনেই মারা গেছে।
কী মর্মান্তিক মৃত্যু! সন্তান হারানোর এই অসহীয় বেদনা মা-বাবা সইবেন কী করে?
কেন এমন হলো? জানা গেছে, পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানি এলুমিনিয়াম ফসফাইড নামক ট্যাবলেট ব্যবহার করেছিল। এই ট্যাবলেট যদি কোনোভাবে পানি বা জলীয় বাষ্পের সান্নিধ্যে আসে তাহলে ফসফাইন নামক এক ধরনের অত্যন্ত বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়। এটা এমন এক ভয়ংকর বিষা যে যারা আক্রান্ত হন তাদের ৯০%-ই মারা যান, কারণ এই বিষকে নিষ্ক্রিয় করার কোনো ওষুধ নেই। এই বিষয়টি সাধারণ মানুষের জানার কথা নয়। কিন্তু যারা এটা ব্যবহার করেন, তারা কি জানেন না? নিশ্চয়ই জানেন, জানতে বাধ্য। তাহলে কেন ব্যবহার করা হলো এই ভয়ংকর বিষাক্ত ট্যাবলেট?
ঢাকার বাসায় কী আর এমন পোকাপাকড় আসে? তেলেপোকা, উঁইপোকা, মশা, মাছি – এগুলোই তো! যেসব বাসায় লোকজন বাস করে, তারা তো একটু পরিচ্ছন্ন থাকলেই এগুলো বাসা বাঁধতে পারে না। ধরে নিচ্ছি, এইসব পোকামাকড়ের যন্ত্রণা বেড়ে গিয়েছিল। সেটাও নিয়ন্ত্রণ করা যেত এরোসোলের মতো (যেগুলো মশা মারার জন্য বাসাবাড়িতে অহরহ ব্যবহৃত হয়) হালকা ধরনের বিষ ব্যবহার করে। পরপর কয়েকদিন রাতের বেলা যদি বাসার বিভিন্ন কোনায় এরোসোল ছিটিয়ে রাখেন, পোকামাকড় এমনিতেই চলে যাবে। দয়া করে অনলাইনে রঙচঙে বিজ্ঞাপন দেখে বাসায় যাকে-তাকে ডেকে আনবেন না।
আগেও বাসা-বাড়িতে জমে থাকা গ্যাস নিয়ে বলেছি, আবারও বলছি। আপনারা যদি জানালা-দরজা বন্ধ করে বাসার বাইরে যান, তাহলে ফিরে এসে প্রথমেই সব দরজা-জানালা খুলে দেবেন। তার আগে কোনোভাবেই ইলেকট্রিক সুইচে হাত দেবেন না বা চুলা জ্বালাবেন না। এমনকি পারলে কিছুক্ষণ নিঃশ্বাসও বন্ধ রাখুন। যদি কোনোরকম গ্যাস জমেও থাকে, দরজা-জানালা খোলার কিছুক্ষণের মধ্যে সেগুলো বেরিয়ে গিয়ে বাতাসের সঙ্গে মিশে যাবে।
তবে বসুন্ধরার ঘটনার ক্ষেত্রে দীর্ঘসময় দরজা-জানালা খোলা রাখার দরকার ছিল। কারণ ফসফাইন গ্যসটি কোনো সাধারণ গ্যাস নয়। আমার ধারণা অনেকটা সময় দরজা-জানালা খোলা রেখে তারপর ঢুকলে এত মারাত্মক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হতেন না ওনারা।
ছোট্ট দুটো শিশু স্রেফ এক পেস্ট কন্ট্রোল কোম্পানির খামখেয়ালির জন্য চলে গেল। এত কষ্ট হচ্ছে…’’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।