সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনার জেরে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে জেলা পুলিশ ও জেলা যুবদলের নেতৃবৃন্দ। সেই বিরোধ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন ও প্রতিবাদ লিপি দিয়েছে তারা।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেছে মানিকগঞ্জ জেলা যুবদল। এরপর সন্ধ্যা ৬টার দিকে পাল্টা প্রতিবাদ লিপি দিয়েছে জেলা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা যুবদলের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গেল রবিবার (১৬ মার্চ) বিকেলে মানিকগঞ্জ শহরে উল্টোপথে রিক্সা নিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে যুবদল নেতা শামীমের সাথে ট্রাফিক কনস্টেবল শাহীন আলমের সামান্য বাকবিতণ্ডা হয়। রিকশাচালকের চাবি নিয়ে তাকে মামলা দেওয়ার হুমকি দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় যুবদল নেতা শামীম প্রতিবাদ করে। এই প্রতিবাদকে কেন্দ্র করেই বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। তখন প্রকাশ্যে পুলিশ কনস্টেবল শাহীন আলম যুবদল নেতা শামীমের সাথে অসদাচরণ করে। ঘটনাযর এক পর্যায়ে যুবদল নেতা শামীম ও তার স্ত্রীসহ প্রকাশ্যে পুলিশের কাছে ক্ষমা চান। পুলিশ এ সময় আরো ক্ষিপ্ত হয়ে প্রকাশ্যে যুবদল নেতাকে নির্যাতন করতে-করতে থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে এই তুচ্ছ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা যুবদলের আহবায়ক, সদস্য সচিব, সিনিয়র যুগ্ন আহবায়ক, যুগ্ম আহবায়কসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
একইদিন সন্ধ্যায় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো প্রতিবাদ লিপিতে পুলিশ জানায়, মানিকগঞ্জ জেলা যুবদলের সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পন্ন মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট। মূল ঘটনা হচ্ছে- গত ১৬ মার্চ বিকালে ফজলুল করিম শামীম মানিকগঞ্জ পৌরসভার স্বর্ণকারপট্টির দিক হতে রিকশাযোগে শহরের শহিদ রফিক সড়কের অগ্রনী ব্যাংক মোড়ে আসলে সেখানে কর্মরত ট্রাফিক কনস্টেবল শাহিন আলম যুবদল নেতা ফজলুল করিম শামীমকে রিকশা থামানোর জন্য সংকেত দিলে সে রিকশা না থাকিয়ে ওয়ানওয়ে রোডে উল্টো পথে কালিবাড়ীর দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেসময় ট্রাফিক কনস্টেবল শাহিন রিকশাটিকে অগ্রনী ব্যাংক মোড়ে থামায়। রিকশার যাত্রী ফজলুল করিম শামীমকে বলা হয় এটি একটি ওয়ানওয়ে রোড উল্টো পথে যাওয়া যাবে না। উল্টো পথে রিকসা না যাওয়ার জন্য বার বার অনুরোধ করলে সে ট্রাফিক কনস্টেবলের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং বলে যে তুই আমাকে চিনিস, তুই কার রিকসা থামাইছোস। আমি হলাম মানিকগঞ্জ জেলার যুবদলের আহবায়ক, তুই কি জানোস? তোর চাকরী আমি খেয়ে ফেলবো এই বলে কনস্টেবলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তখন কনস্টেবল তাকে গালিগালাজ না করার জন্য নিষেধ করিলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে রিকশা থেকে নেমে কনস্টেবল শাহীন আলমকে সরকারি কাজে বাধাদান করে এবং তার পরিহিত ইউনিফর্মের কলার ধরে আক্রমণ করে এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে কিল ঘুষি মেরে সাধারণ জখম করে।
তখন পার্শ্ববর্তী দোকানদারসহ সেখানে উপস্থিত অনেক পথচারী ঘটনার বিষয়টি দেখে যুবদল নেতা শামীমকে নিবৃত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। তখন শামীম ক্ষুব্ধ হয়ে তাদেরকেও লাঞ্চিত করে। এর প্রেক্ষিতে জনগণ ফজলুল করিম শামীমকে আটক করে রাখেন। এরপর কনস্টেবল শাহীন বিষয়টি তাৎক্ষনিক মানিকগঞ্জ ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত সার্জেট আলী আকবরকে জানালে তিনি দ্রুত সার্জেন্ট রফিকুল ইসলাম ও অন্যান্য ফোর্সদের নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। উল্লেখিত ব্যক্তি তখন সার্জেন্ট আলী আকবর ও সার্জেন্ট রফিকুল ইসলামের সাথেও তর্কে লিপ্ত হয় এবং তাদেরকেও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং সার্জেন্ট রফিকুল ইসলামকে পাশ্ববর্তী দোকানে সার্টারের ভিতরে নিয়ে যেয়ে আক্রমণ করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে উল্লেখিত ঘটনার সংবাদ বেতার বার্তায় শুনে ট্রাফিক বিভাগের টিআই প্রশাসন মো। আঃ হামিদ খান ঘটনাস্থলে পৌছান এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। এরপর মানিকগঞ্জ সদর থানার ভ্রাম্যমান টহল দলডেকে যুবদল নেতা শামীমকে তাদের নিকট হস্তান্তর করেন। আইন ভঙ্গকরা এবং সরকারী কাজে বাধা প্রদানের কারণে পরবর্তীতে উক্ত বিষয়ে মানিকগঞ্জ সদর থানায় যুবদল নেতা শামীমের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়।
এদিকে পুলিশ-যুবদলের মুখোমুখি অবস্থানকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও সচেতন মহলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জেলার সিনিয়র এক সাংবাদিক বলেন, রিকশা নিয়ে উল্টো পথে যাওয়াকে কেন্দ্র করে বর্তমানে পুলিশ ও যুবদলের মধ্যে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটি খুবই দুঃখজনক। দুই পক্ষকেই আরো সহনশীল হওয়া প্রয়োজন ছিল। ওই যুবদল নেতা যেহেতু প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছে, তাই তার কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে এবং তাকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে বিষয়টি মীমাংসা করা যেত।
সাংবাদিক আকরাম হোসেন বলেন, জেলা পুলিশের দেওয়া প্রতিবাদলিপিতে পুলিশের কাজে বাধা বা কিল ঘুষি মেরে নিলাফুলা জখমের কথা বলা হয়েছে। কিন্ত বাস্তবে প্রত্যেক্ষদর্শী বা ঘটনা স্থলের মানুষের সাথে কথা বলে পুলিশকে মারধর বা জখমের কোন তথ্য পাইনি। তবে উল্টো পথে যাওয়ার চেষ্টা ও বাকবিতন্ডার তথ্য পাওয়া গেছে। পুলিশের সাজানো তথ্যই ছোট ঘটনাকে বড় করা হচ্ছে। গতকাল ঐ স্থানে গিয়ে দেখছি ট্রাফিক পুলিশের সামনেই উল্টো পথে যানবাহন যাচ্ছে। তাহলে শামীমমের বেলায় আইনের এতো কঠোরতা কেন?
বিষয়টি নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সহ-সভাপতি ইকবাল হোসেন কচি বলেন, ৫ আগস্টের পর থানায় যখন হামলা ও অস্ত্র লুট হচ্ছিল তখন ওই শামীমরাই থানা পাহারা দিয়ে রেখেছে। পুলিশকে রক্ষা করেছে। আর এখন সেই পুলিশই সামান্য ঘটনাকে বড় করছে। এই ঘটনায় বুঝা যায় পুলিশ নিজেদের ক্ষমতা দেখানোর চেষ্টা করছে। ছেলেটা ক্ষমা চাওয়ার পরও মামলা দিয়ে তাকে জেলে ঢুকানো ঠিক হয়নি। বিষয়টি দেখে আমি খুবই মর্মাহত হয়েছি। পুলিশ চাইলে আরেকটু সহনশীল হতে পারতো।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।