জুমবাংলা ডেস্ক : শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দাবিতে সম্প্রতি ছাত্র-জনতার সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আন্দোলনকারীদের পাশাপাশি অনেক পুলিশ সদস্যও নিহত হয়েছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কয়েকশো থানা ও পুলিশ স্থাপনা অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুর করা হয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতন ও দেশত্যাগের পর থেকে আতঙ্কে ও জীবনের নিরাপত্তাহীনতার ভুগছেন পুলিশ সদস্যরা। গতকাল সোমবার (৫ আগস্ট) সরকার পতনের পর পুলিশ সদর দফতরেও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এমন অবস্থায় জীবনের শঙ্কায়
৯ দফা দাবি জানিয়ে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ অধস্তন কর্মচারী সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ এসোসিয়েশন।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) দুপুরে সংগঠনটির পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর থেকে সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের উপর অতর্কিত হামলা, পুলিশ সদস্য খুনসহ স্থাপনা ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। দেশে প্রায় ৪৫০টি থানা আক্রমণ করে অগণিত পুলিশ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে; যা সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সামিল। এহেন পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশ পুলিশের অধস্তন কর্মচারী সংগঠন আজ ৬ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করছে।
না প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা জানান, ‘বাংলাদেশ পুলিশ সরকারের অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। সরকার যা করতে বলবে, পুলিশ তাই করতে বাধ্য। এখানে পুলিশ সদস্যদের নিজস্ব ভূমিকা রাখার সুযোগ কম। ফলে পুলিশ সদস্যরা সরকারের আদেশে অনেক অনৈতিক কাজ করেছে। জনসাধারণের সঙ্গে পুলিশ অন্যায় করেছে, এটা ঠিক। তবে সেটা নির্দিষ্ট কিছু পুলিশ সদস্য, সবাই না।’
পুলিশের আরেক সদস্য বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের মাঠে নামিয়ে এখন তারা আত্মগোপনে রয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে কোনো বার্তা পাচ্ছিনা। ওই সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রকাশ্যে এনে এর জবাব দিতে হবে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কারণে আজ এই বিভীষিকা। আমাদের যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে আমরা আমরা সেভাবেই কাজ করেছি। এখন আন্দোলনকারীদের মূল টার্গেট আমরা শঙ্কার মধ্যে ভুগছি। শত শত পুলিশ নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মৃত্যুর মুখে পড়ছি।
পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘যে সরকার আসবে, পুলিশের সে সরকারের আদেশ মতোই কাজ করবে। এটাই পুলিশ নীতিমালা। বিগত সময়ে পুলিশ যা করেছে, তা পুলিশের নিজস্ব কাজ নয়। এটা সরকার করতে বাধ্য করেছে। আগামী যে সরকার আসবে, পুলিশ জনসাধারণের জানমাল রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সরকারের আদেশ মোতাবেক কাজ করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, আমাদের ভুল বুঝবেন না। পুলিশ জনগণের বন্ধু। পুলিশ জনগণের সঙ্গে মিলে একসঙ্গে কাজ করতে চায়।’
৯ দফা দাবি: বাংলাদেশ পুলিশ
১. সকল পুলিশ হত্যার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
২. নিহত পরিবারের ক্ষতিপূরণসহ সেই পরিবারের ন্যূনতম একজন সদস্যকে সমপদে নিয়োগ নিশ্চিত করা।
৩. আহত সকল পুলিশ সদস্যদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান নিশ্চিত করা।
৪. আট ঘণ্টার বেশি ডিউটি পালনে বাধ্য না করা। ৮ ঘণ্টার বেশি ডিউটি পালনে অভার ডিউটির সুবিধা দেওয়া।
৫. শুক্রবার, শনিবারসহ সকল সরকারি ছুটি ভোগের সুযোগ প্রদান। দেশের স্বার্থে/জনগণের স্বার্থে ছুটি ছাড়তে না পারলে অতিরিক্ত কর্মদিবস হিসাবে আর্থিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা।
৬. ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ দানে সংবিধান ও জনগণের মনের কাঙ্ক্ষিত বিষয় প্রাধান্য দেওয়া।
৭. পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে শুরু করে সকল মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিস, পুলিশ লাইন্স, পুলিশ হাসপাতাল, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ক্যাম্পের নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করে নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিত করা।
৮. যথাসময়ে সকল পদে পদোন্নতির যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করে বৈষম্য দূর করা ও বদলির আদেশ দানে নিজ জেলার নিকটবর্তী জেলার প্রাধান্য নিশ্চিত করা।
৯. বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা রক্ষায় পুলিশ সংস্কার আইন প্রণয়ন করা। যেন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা দ্রুততম সময়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্ৰহণ করতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।