জুমবাংলা ডেস্ক : সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধানের আবাদ হয় তাড়াশে। কিন্তু সেখানে তিন ফসলি উর্বর জমি কেটে পুকুর খনন করার ফলে প্রতিবছর আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ২ হাজার ৫৩৯টি পুকুর খনন করা হয়েছে। এ দেড় দশকে আবাদি জমি কমেছে ১ হাজার ৯২০ হেক্টর।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, জেল-জরিমানা করেও পুকুর খনন বন্ধ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে ধানের উৎপাদন কমে আসবে এবং ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার নওগাঁ ইউনিয়নের বাঁশবাড়িয়া গ্রামে ফসলি জমিতে পুকুর খনন করছেন হাজি বাবু নামে একজন। ভায়াট গ্রামের আলামিন জমি ইজারা নিয়ে পুকুর খনন করছেন। লালুয়া মাঝিড়া গ্রামের উত্তর মাঠে একটি বড় পুকুর খনন করছেন খোকা নামে এক ব্যক্তি। এ রকম অধিকাংশ গ্রামে চলছে ফসলি জমিতে পুকুর খনন।
পুকুর খননকারী হাজি বাবু ও আলামিন জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে তাড়াশে পুকুর খনন করা হচ্ছে। তাই তাঁরাও করছেন। সবারটা বন্ধ হলে তাঁরাও আর খনন করবেন না।
বাঁশবাড়িয়া গ্রামের কুরমান আলী, জবান আলী, আবু হানিফ এবং কালিদাসনিলি গ্রামের তারিকুল ইসলাম, শাজাহান আলী ও আখতার হোসেন জানান, ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামের সবনম খন্দকার বাবু ওরফে হাজি বাবু বাঁশবাড়িয়া গ্রামে আবাদযোগ্য জমিতে ৪০ থেকে ৪৫ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর খনন করছেন। পুকুরটির খনন শেষ হলে উত্তর ও দক্ষিণের মাঠের পানি নামতে পারবে না। তখন জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দেবে।
সাকোই গ্রামের জহুরুল নামের একজন মাদ্রাসাশিক্ষক বলেন, ‘আমার মাত্র ১০ কাঠা জমি ছিল। সলঙ্গা থানার কুমার গাইলজানি গ্রামের সাচ্চু নামের একজন মাঠের ১৫ জন কৃষকের জমি ইজারা নিয়েছেন পুকুর খননের জন্য। শেষমেশ আমিও দিতে বাধ্য হই। নয়তো আমার ওইটুকু জমি পুকুরের এক কোনায় পানিতে তলিয়ে থাকত।’
তাড়াশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালিদ হাসান বলেন, পুকুর খননের তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো হচ্ছে। এ পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালতে বেশ কয়েকজনকে জেল ও জরিমানা করা হয়েছে। সগুনা ইউনিয়নের খরখরিয়া গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠের আবাদযোগ্য উর্বর জমি কেটে পুকুর খনন করার অপরাধে গত ১ জানুয়ারি এক ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের জেল দেওয়া হয়েছে। নওগাঁ ইউনিয়নের ভায়াট গ্রামে পুকুর খনন করায় সুমন মোল্লা ও সাদ্দাম হোসেনকে এক মাস করে জেল দেওয়া হয়েছে।
পৌষার গ্রামে পুকুর খনন করার অপরাধে শাজাহান নামের এক ব্যক্তিকে ছয় মাসের জেল দেওয়া হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাড়াশের মাটি বেশ উর্বর। এখানকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে বছরে তিন থেকে চারবার পর্যন্ত বিভিন্ন জাতের ধান ও রবিশস্যের আবাদ হয়। তার পরও কৃষকেরা তাঁদের জমি কেটে পুকুর খনন করছেন। মূলত মধ্যস্বত্বভোগী একটি চক্র কৃষকের সব দায়ভার নিয়ে পুকুর খনন করে দিতে উৎসাহিত করছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।