জুমবাংলা ডেস্ক : সূর্য উঁকি দেয়ার আগে শ্রমজীবী মানুষ কাজের আশায় ছুটে যান হাটে। শ্রম বিক্রি করে অভাবের সংসারে দুমুঠো অন্ন যোগান তারা। হাটে শ্রমিকরা আসেন শ্রম ‘বিক্রি’ করতে; আবার আরেক শ্রেণি আসেন শ্রম কিনতে। সেখানে চলে দরদাম; মৌসুম বিবেচনায় পণ্যের মতো যা ওঠানামা করে।
জানা যায়, প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর বসে শ্রমজীবীর হাট; চলে সকাল ৬টা পর্যন্ত। জাজিরা উপজেলাসহ জেলা সদরের পাশাপাশি অন্যান্য উপজেলা থেকেও এসে শ্রমিকদের দরদাম করে নিয়ে যাওয়া হয় কাজের জন্য। এখানে এমন হাট বসে বছরের প্রায় ১০ মাস। প্রতিনিয়ত মেলে বিভিন্ন পেশার শ্রমিক। গৃহস্থালি কাজ করার চুক্তিতে নেয়া হয় তাদের। অনেককে আবার দিন বা কর্মঘণ্টা হিসেবে কাজে নেয়া হয়। স্থানীয় ভাষায় এ হাটকে ডেইলি লেবার মার্কেট বা কামলার হাট বলা হয়। জীবন ও জীবিকার তাগিদে নিজেদের যেন এভাবেই বিক্রি করছেন তারা!
প্রতিদিন এ হাটে অন্তত এক হাজার থেকে ১৫শ’ শ্রমজীবী মানুষ কাজে যান বিভিন্ন জায়গায়। কাজের ধরন হিসেবে ৫৫০ টাকা থেকে শুরু করে শ্রমিকের দাম উঠছে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। দেশের উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, রংপুর, জামালপুর ও গোপালগঞ্জসহ অন্তত ২৫টি জেলার শ্রমিকরা এভাবে কাজ করছেন শরীয়তপুরে।
পাটকাটা, ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করা ও মাটিকাটার কাজ করে থাকেন তারা। বর্ষা মৌসুমে পাটকাটার কাজ বেশি থাকে। তবে মাটিকাটার কাজ কম থাকায় অনেক শ্রমিক বেকার। তারা এ হাটে এসে অল্প সময়ের মধ্যে কাজ পেয়ে যান। সাপ্তাহিক না হয়ে দিনের মজুরি দিনে হাতে পেয়ে খুশি শ্রমিকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শ্রমিক আব্দুল করিম বলেন, ‘এই হাটে পাঁচ বছর ধরে নিয়মিত শ্রম বিক্রি করে আসছি। এই এলাকায় বিভিন্ন কাজের শ্রমিক হিসেবে কাজ করছি। এখানে শ্রমিক মূল্য ভালো। কাজও প্রতিদিন রয়েছে। আমরা সঠিকভাবে শ্রম দেয়ায় মালিকপক্ষও খুশি।’
সাতক্ষীরার শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এই এলাকায় আমি তিন বছর ধরে মাটিকাটার কাজ করছি। ৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি নিয়ে থাকি। এখানকার মালিকরা প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিনই দিয়ে দেন। যার কারণে আমরা কাজ করে খুব শান্তিতে আছি।’
অন্যদিকে, শ্রমিক নিতে আসা লিয়াকত কাজী বলেন, ‘আমার কিছু সবজি বাগান আছে। সেখানে পরিচ্ছন্নতার কাজসহ বিভিন্ন কাজে শ্রমিকদের আমরা কিনে থাকি। তারা কাজ করেন ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত; কাজেও মনোযোগী। শ্রমিকের মজুরি কিছুটা বেশি হলেও জেলার বাইরের শ্রমিক দিয়ে কাজ করায় আমরা সন্তুষ্ট।’
পাটকাটার জন্য শ্রমিক নিতে আসা আমিনুল ইসলাম মাদবর বলেন, ‘আমি ৭০০ টাকা করে চার শ্রমিক নিয়েছি। ওরা খুব দ্রুত ও সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। শুধু আমি নয়, জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে তাই ওদের কাজিরহাটে এসে মালিকরা নিয়ে যান।’
কাজিরহাট বণিক সমিতির সভাপতি মো. দিলু টেপা বলেন, ‘বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমিকদের কাজে আমরা উপকৃত। তাছাড়া শ্রমের দাম বেশি পাওয়ায় ওরাও সন্তুষ্ট। স্থানীয় শ্রমিকদের পাশাপাশি জেলার বাইরের শ্রমিকদের আমাদের এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে বলে আমরাও খুব আনন্দিত।’
প্রতিদিন এ হাটে অন্তত দেড় হাজার শ্রমিক কাজ পান। এ জন্য প্রতিদিন মালিকদের গুনতে হয় অন্তত ১০ লাখ টাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।