দেশের মান নিয়ন্ত্রণকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। পণ্য কেনার সময় অনেকেই বিএসটিআই সনদ আছে কি না দেখে নেন, কেউ কেউ দেখেন না। আবার কেউ শুধু কম্পানির নামের ওপর ভরসা করে সিদ্ধান্ত নেন। অনেকে এমনও আছেন, যারা বিএসটিআই কী তা জানেনই না।
বিএসটিআই তাদের সনদ নেওয়া পণ্যের মান যথাযথ আছে কি না, পণ্যে কোনো ক্ষতিকর উপাদান কিংবা পণ্যের বিষয়ে কারো অভিযোগ রয়েছে কি না, তা তদারক করে থাকে। বিএসটিআইয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত (৩ জুন ২০২৫) বিএসটিআইয়ের বাধ্যতামূলক পণ্যের তালিকায় আছে ৩১৫টি পণ্য। অথচ দেশে পণ্যের সংখ্যা চার হাজারের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের দেশের ক্রেতারা এখনো যথেষ্ট সচেতন নয়।
অনেক দেশে মান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সনদ দেখে পণ্য কেনার সংস্কৃতি চালু হলেও আমাদের দেশে সেটি এখনো চালু হয়নি।
রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শামস্উদ্দিন ইলিয়াস বলেন, ‘আমি সব সময়ই বিএসটিআই সনদ দেখেই পণ্য কিনি। আমার পরিবারের অন্যরাও কেনে। তবে অনেক সময় বিএসটিআই সনদ থাকলেও কোনো পণ্যের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’
মানিকগঞ্জের অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক সাইফুদ্দিন আহমেদ নান্নু বলেন, ‘পণ্য কেনার সময় বিশেষ কোনো কারণ না থাকলে বিএসটিআইয়ের সিল বা সনদ আছে কি না দেখি না। কম্পানি দেখে কিনি, ভরসাটা তাদের গুডউইলের ওপরেই রাখি। বিএসটিআইর সনদ আমার কাছে কার্যত কোনো গুরুত্ব বহন করে না।’
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘প্রথমত, নকল পণ্যের গায়েও এই বিএসটিআই এর সিলের ছবি প্রিন্ট করে বসিয়ে নেওয়া যায়, বসায়ও।
দ্বিতীয়ত, একটি পণ্য বাজারজাত করণের অনুমতির সময় উৎপাদকেরা যে মানের নমুনা বিএসটিআই এর কাছে জমা দেন, অনুমোদন বা সনদ পাওয়ার পর উৎপাদকেরা সেই মান বজায় রাখে কি না সেটা রুটিন করে বাজার থেকে স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয় বলে আমার জানা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘সে ক্ষেত্রে বিএসটিআইর সনদের ওপর নির্ভর করা না করায় কোনো তফাত দেখি না। কম্পানির নাম, তাদের গুডউইলটাকেই গুরুত্বে রাখি।’
ঢাকার একটি স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘সব সময় দেখা হয় না। আমি সাধারণত বড় কম্পানির পণ্য কেনার চেষ্টা করি। তাই বিএসটিআইয়ের লোগো দেখার প্রয়োজন মনে করি না। তবে কম পরিচিত বা অপরিচিত ব্রান্ডের পণ্য কিনতে হলে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে কি না দেখে নিই।’
ঢাকার পশ্চিম মাটিকাটা এলাকার গৃহিণী লাভলী আক্তার বলেন, ‘কোনো কিছু কেনার আগে তো বিএসটিআই দেখা হয় না। বেশির ভাগ সময়ই এই লাগবে সেই লাগবে বলে দোকান থেকে নিয়ে নিই।’
তবে এক মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, ‘যত সময়ই লাগুক আগে সিলটা দেখে নিই। না থাকলে অন্য কোনোটা নিই।’
আজ মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিশ্ব মান দিবস। পণ্য ও সেবার মানের প্রতি সচেতনতা বাড়াতে প্রতিবছরের মতো এবারও দেশে দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএসটিআই। এবারের দিবসটিতে আগের বছরের প্রতিপাদ্য ‘সমন্বিত উদ্যোগে টেকসই উন্নত বিশ্ব বিনির্মাণে—মান’ বহাল রাখা হয়েছে।
পণ্য ও সেবার মান উন্নয়ন এবং তা বজায় রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ, উদ্যোক্তা ও ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রতিবছর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এ দিবসটি পালন করা হয়।
সাভারের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পণ্য কেনার সময় বিএসটিআইয়ের লোগো আছে কি না সেটা দেখেই কিনি। তবে অনেক সময় পণ্যের গায়ে বিএসটিআইয়ের লোগো এতটাই ছোট বা ঝাপসা থাকে যে ক্লিয়ার বোঝা যায় না। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।’
তবে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটার পানির পাম্প এলাকার নাসিমা আক্তার বলেন, ‘বিএসটিআই কী সেটাই তো জানি না। কোন জিনিসের গায়ে থাকে আর কোনটায় থাকে না তাও জানি না। দোকানে গিয়ে জিনিস চাই, দোকানদার দিয়ে দেয়।’ একই কথা জানালেন মানিকগঞ্জের উথলী ইউনিয়নের গৃহিনী রেহেনা আক্তারও।
তিনি জানান, বিএসটিআই দেখে কিছু কিনতে হবে সেটা তার জানা নেই। কখনো হয়তো শুনেছেন নাম, কিন্তু বিএসটিআইয়ের কী কাজ তা তিনি জানেন না।
এদিকে, বাজারে বিক্রি হওয়া পণ্যের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, মোড়কীকরণ ও বিক্রয় কার্যক্রমে বিএসটিআই নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। বেড়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও সার্ভিল্যান্স সেবাও। বর্তমানে রাজধানীসহ সারা দেশে ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে বিএসটিআই।
জাতীয় মান সংস্থা বিএসটিআই দিবসটি উপলক্ষে প্রধান কার্যালয়সহ বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়গুলোতে আলোচনা সভা ও প্রচারমূলক কার্যক্রম আয়োজন করেছে। এছাড়া বিটিআরসির সহায়তায় মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীদের কাছে সচেতনতামূলক এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ডও টাঙানো হয়েছে।
সূত্র : কালেরকণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।