বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের সময় চীনা পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছিল ওয়াশিংটন। তখন চীনের বাইরে বিকল্প ম্যানুফ্যাকচারিং হাব খুঁজতে শুরু করে অ্যাপলের মতো প্রযুক্তি জায়ান্ট। এ সময় বিকল্প গন্তব্য হিসেবে ওপরের তালিকায় জায়গা পায় ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশ। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক লকডাউনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে চীনের বিকল্প গন্তব্য অনুসন্ধান করছে ক্যালিফোর্নিয়ার কুপারটিনোভিত্তিক কোম্পানিটি। এ ব্যাপারে তাদের চুক্তিভিত্তিক নির্মাতা ফক্সকন, উইস্ট্রন ও পেগাট্রনের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চলছে। খবর ফোনঅ্যারেনা।
বাণিজ্যযুদ্ধের সময় বিকল্প গন্তব্য অনুসন্ধান শুরু করলেও করোনা মহামারীতে তা থমকে দাঁড়ায়। কিন্তু সাংহাই, কুনশান ও বেইজিংসহ চীনের বেশ কয়েকটি শহরে সাম্প্রতিক সংক্রমণ বৃদ্ধি ও লকডাউন অ্যাপলকে পুনরায় ভাবাচ্ছে। সম্প্রতি চুক্তিভিত্তিক নির্মাতাদের অ্যাপল জানিয়েছে, তারা যেন ভারত ও ভিয়েতনামের মতো বিকল্প ম্যানুফ্যাকচারিং কেন্দ্রে মনোযোগ দেয়। অ্যাপলের নতুন এ পরিকল্পনা ভারতের জন্য শাপেবর হিসেবে দেখা দিতে পারে। এরই মধ্যে ভারতে আইফোন ১৩ ও আইফোন এসই নির্মাণ শুরু হয়েছে। মুম্বাইয়ে অফিশিয়াল অফলাইন স্টোর চালুর কথা ভাবছে অ্যাপল। বেশ কয়েকটি প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টেই অ্যাপল স্টোরটি চালু হতে পারে।
ভারতের স্বাধীনতা দিবস ১৫ আগস্ট স্টোরটি উন্মোচিত হতে পারে বলে জানান কেউ কেউ। দিল্লিতে দ্বিতীয় একটি স্টোর চালুরও পরিকল্পনা রয়েছে অ্যাপলের। তবে তা কবে চালু হবে এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া বেঙ্গালুরুতে তৃতীয় একটি স্টোর চালুর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। ভারতে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন এবং নিজস্ব স্টোরে বিক্রির ফলে স্থানীয় গ্রাহক সাশ্রয়ে আইফোন কিনতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ভারতে স্থানীয়ভাবে আইফোন উৎপাদন হলে তা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য বাজারের জন্যও ইতিবাচক হিসেবে দেখা দেবে।
চীন, ভারত ও ভিয়েতনামসহ বেশ কয়েকটি দেশে অ্যাপলের শীর্ষ চুক্তিভিত্তিক নির্মাতা অংশীদার ফক্সকনের কারখানা রয়েছে। চলতি বছরে ভারতের বেশ কয়েকটি কারখানায় আইফোন ১৩ ও আইফোন এসই উৎপাদন শুরু করেছে তারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের আওতায় ভারতে উৎপাদন আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
অ্যাপলের চীননির্ভরতা কমানোর পরিকল্পনায় দেশটি হয়তো ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি এড়াতে পারবে কিন্তু ঠিকমতো পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা যাবে কি না সে বিষয়ে অনেকটাই সন্দিহান। এখনো অ্যাপলের বিশাল অংকের ক্রয়াদেশ পূরণের সক্ষমতা রয়েছে চীনের। অন্যদের সে সক্ষমতা যাচাই বাকি। বর্তমানে অ্যাপলের ৯০ শতাংশ পণ্য চীনে তৈরি হয়। অল্প সময়ের মধ্যে চীনের যোগ্য বিকল্প পাওয়া সহজ হচ্ছে না অ্যাপলের জন্য। সরবরাহ চেইনে চীনের বিকল্প দেশ এখনো খুঁজে পাচ্ছে না তারা। যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে সাশ্রয়ী ও দক্ষ কর্মী চীনের বড় সম্পদ। এছাড়া অ্যাপলের কিছু পণ্যের বৈশ্বিক আয়ের ২০ শতাংশই আসে চীন থেকে। এজন্য চীনে উৎপাদন কারখানা রাখা টিম কুক নেতৃত্বাধীন কোম্পানির জন্যই গুরুত্বপূর্ণ।
বিকল্প গন্তব্য খুঁজলেও রাতারাতি চীন ছাড়ার সম্ভাবনা নেই অ্যাপলের। হয়তো অল্প কিছু পণ্য উৎপাদনে বিকল্প গন্তব্যে জোর দেবে প্রতিষ্ঠানটি সেমিকন্ডাক্টরসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হওয়ায় চীন ছেড়ে দেয়া অ্যাপলের জন্যই ব্যয়বহুল ঠেকতে পারে। তবে আকস্মিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্রের ওপর মনোযোগ দিতে পারে প্রযুক্তি জায়ান্টটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।