সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : মানিকগঞ্জে সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে অতিরিক্ত টাকা নিয়েও সঠিক চিকিৎসা সেবা না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারী) ডাঃ মোঃ আশরাফুল কবিরের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী রোগীর মা অর্চনা রানী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনালেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ও জেলা সিভিল সার্জন বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার সাটুরিয়া উপজেলার এক নারী কিডনিতে পাথর হওয়ায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে ও অপারেশন করাতে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। ভুক্তভোগী রোগী মহিলা ওয়ার্ডে (সার্জারী) দুই দিন ভর্তি থাকা অবস্থায় চিকিৎসক বলেন রোগীকে বেসরকারি ক্লিনিকে অপারেশন করতে হবে। সে অনুযায়ী ওই রোগীকে সরকারি হাসপাতাল থেকে নিয়ে গিয়ে ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে বেসরকারি ক্লিনিক ইউনাইটেড হাসপাতালে অপারেশন করেন ডাঃ মোঃ আশরাফুল কবির। এতে রোগীর গর্ভে থাকা দুই মাসের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায় এবং অপারেশনের এক মাস পরেও রোগীর ব্যথা না কমায় ডাঃ আশরাফুল কবির বারবার ওষুধ দেয় এবং ২/৩ দিন এভাবেই ব্যথা থেকে যায়। বিষয়টি ডাঃ আশরাফুল কবিরকে জানালে তিনি রোগেীকে পুনরায় ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলেন। তখন তারা জানতে পারেন, বিভিন্ন পরিক্ষা নীরিক্ষা করার পরও ডাঃ আশরাফুল কবির কিডনীতে পাথর রেখে অপারেশন করেছেন। ডাঃ আশরাফুল কবির সে কথা গোপন রেখে রোগীকে পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন এবং আবারো বিভিন্ন পরিক্ষা নীরিক্ষা করতে বলেন। এরপর ওই রোগী ভর্তি থাকাবস্থায় ক্লিনিকের পরিক্ষা নীরিক্ষার রিপোর্ট দেখার পরও ডাঃ আশরাফুল কবিরের সহকারী রঞ্জিত জানান কিডনীতে পাথর রয়েছে।
তখন ডাঃ আশরাফুল কবির তার সহকারী রঞ্জিতের মাধ্যমে জানায় ফের ২০ হাজার টাকা দিলে পুনরায় অপারেশন করে দিবেন। তখন ভুক্তভোগী রোগীর পরিবারের লোকজন ডাঃ আশরাফুল কবিরের অবহেলা ও প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তার প্রতি আস্থা না পেয়ে রোগীকে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে অবস্থিত পপুলার হাসপাতালে নিয়ে ফের অপারেশন করান। পুনরায় অপারেশন বাবদ তাদের প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ হয়ে যায়। এতে আগের চিকিৎসা খরচসহ অন্যান্য খরচ বাবদ প্রায় তিন লক্ষ টাকা ঋণ হয়ে ভুক্তভোগী পরিবারটি মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ভুক্তভোগী রোগীর সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে তার স্বামী ও শশুড় বাড়ির লোকজন যোগযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তারা চিকিৎসার জন্য কোন টাকা পয়সাও দেয়নি। তিনি বলেন, ‘ডাঃ আশরাফুল কবিরের কাছে এমন প্রতারিত হয়ে আমার জীবনে অন্ধকার নেমে এসেছে। স্বামী সংসার হারিয়েছি, গর্ভের সন্তানকে হারিয়েছি। আমার পরিবার এখন ঋণের ভারে জর্জরিত। আমি ডাক্তারের কাছে এমন প্রতারণার কারণ জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেন, তোমার জীবন তো বেঁচে আছে, তুমি তো আর মারা যাওনি। একজন চিকিৎসক হয়ে তিনি কিভাবে এতটা অমানবিক হলেন? আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
ভুক্তভোগী রোগীর মা অর্চনা রানী বলেন, আমার মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। সব টাকা ঋণ করে মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছি, কিন্ত মেয়ের সংসার বাঁচাতে পারিনি। আমরা গরিব মানুষ বলে কি এর বিচার পাবো না?
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত চিকিসৎসক ডাঃ মোঃ আশরাফুল কবিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সিভিল সার্জন অফিসে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। আমি যা বলার তদন্ত কমিটিকে বলবো, এ নিয়ে গণমাধ্যমে কোন কথা বলবো না।
এ বিষয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনালেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ মোঃ আরশ্বাদ উল্লাহ বলেন, শীঘ্রই তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরদিকে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত চলছে, তদন্তে কারো গাফলতি প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মানিকগঞ্জ এ্যাপোলো হাসপাতাল: প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।