আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউনাইটেড নেশনস পপুলেশন ফান্ড(ইউএনএফপি) জানিয়েছে, এখন চীনের জনসংখ্যা হলো ১৪২ কোটি ৫৭ লক্ষ, আর ভারতের ১৪২ কোটি ৮৬ লক্ষ। এতদিন জনসংখ্যার নিরিখে চীনের পর ছিল ভারত। এবার তারা চীনকে টপকে সবচেয়ে জনবহুল দেশে পরিণত হলো।
জনসংখ্যায় প্রথম হওয়া কি ভারতের কাছে আশীর্বাদ না অভিশাপ? এনিয়ে মুখ খুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। পপুলেশন ফাউন্ডেশন অফ ইন্ডিয়ার এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর পুনম মুতরেজা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ”কিছুদিন ধরেই বোঝা যাচ্ছিল, ভারত এই ক্ষেত্রে চীনকে টপকে যাবে। কিন্তু তা বেশ তাড়াতাড়ি হলো। বোঝা যাচ্ছে, চীনের জনসংখ্যা বাড়ার হার কমেছে। এই বছরের গোড়ায় চীন জানিয়েছিল, ২০২২-এ তাদের জনসংখ্যা আট লাখ ৫০ হাজার কমেছে। ”
পুনম মনে করছেন, ”পরবর্তী জনগণনার রিপোর্ট যতক্ষণ না আসছে, ততক্ষণ পুরো সংখ্যাতত্ত্ব পাওয়া যাবে না। কিন্তু একটা বিষয় স্পষ্ট, ভারতে বয়স্ক মানুষের তুলনায় তরুণ ও কর্মক্ষমদের সংখ্যা অনেক বেশি। এটা নিঃসন্দেহে ভারতের পক্ষে সুখবর।”
তার বক্তব্য, ”জাপানের মতো অনেক দেশ আছে, যেখানে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। সেখানে দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা আছে এবং ভবিষ্যতে বাড়বে। ভারতীয়রা সেই চাহিদা পূরণ করতে পারবে। তবে এর জন্য শিক্ষা, বিশেষ করে কারিগরি শিক্ষা, চাকরির সুযোগ তৈরি করতে হবে। এটা একটা চ্যালেঞ্জ। এই বছর জাপানের সঙ্গে ভারতের একটা সমঝোতাপত্র সই হয়েছে। সেখানে শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য জাপান বিনিয়োগ করবে বলে ঠিক হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞ মনীশ সাবরেওয়াল নিউজ১৮কে বলেছেন, ”এই জনসংখ্যা ভারতের পক্ষে আশীর্বাদ না অভিশাপ তা নির্ভর করছে, আমরা কীভাবে জনসংখ্যাকে কাজে লাগাব তার উপর। চীন একসময় বন্দুকের নকলে সামনে রেখে এক সন্তান নীতি কার্যকর করেছিল। তারপর তাদের তরুণ, কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমে গেছে। বয়স্কদের সংখ্যা বাড়ছে। ভারতেও সত্তরের দশকে জোর করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হয়েছে। তারপর আর হয়নি। শিক্ষা, নারী সচেতনতা, অর্থনীতির বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।”
পুনম এনডিটিভিকে বলেছেন, ”২৪টি রাজ্যে গড়ে দুই সন্তান রয়েছে। উত্তর ভারতেও জনসংখ্যার হার কমছে। আমাদের স্কিল, চাকরি ও ভালো টাকা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।”
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ উদয়শংকর মিশ্র মনে করেন, ”ভারতের কিছু এলাকা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে এগিয়ে, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলি। সেখানে কাজ করার মানুষ কমে যাচ্ছে। সেটা অন্য রাজ্যের মানুষ পূর্ণ করছে।”
কিন্তু প্রশ্নটা হলো, এই তরুণদের যে বিশাল সংখ্যা ভারতে রয়েছে, তাদের প্রশিক্ষিত করে কাজ দিতে হবে এবং তারা যাতে ভালো মজুরি পান সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। নিঃসন্দেহে এটা বড় চ্যালেঞ্জ। উদয়শংকরের মতে, এই সব ক্ষেত্রে আগের তুলনায় উন্নতি হয়েছে, কিন্তু তাও অনেকদূর যেতে হবে।
ট্রান্সফর্ম রুরাল ইন্ডিয়ার প্রধান নীরজ আহুজা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ”গ্রামের মানুষ ভালো চাকরি বা কর্মসংস্থান চান। কিন্তু সেই সুযোগ খুব কম। শহরে চাকরির সুযোগ বেশি। আমরা ঝাড়খণ্ডের রামগড়ে ২০২০ সালে সমীক্ষা করেছি। সেখানে ১২ লাখ মানুষের মধ্যে সাড়ে তিন লাখের বয়স ১৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে। তার মধ্যে আড়াই লাখ মানুষ শিক্ষিত, কিন্তু বেকার বা প্রায় বেকার। তরুণরা দেশকে যেমন এগিয়ে য়েতে পারে, তেমনই কাজ না থাকলে তারা সামাজিক সমস্যা তৈরি করতে পারে।”
জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ সন্তোষ মেহরোত্রা নিউজ১৮কে বলেছেন, ”এই জনসংখ্যা ভারতের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। কারণ, আমরা স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় যথেষ্ট বিনিয়োগ করিনি। অর্থনীতি খুব দ্রুত হারে বাড়ছে না। ঘটনা হলো, ১৫ থেকে ১৭ বছর আমরা হয়ত এই জনসংখ্যার সুবিধা পাব। তারপর চীনের মতোই বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাবে। চীনের তুলনায় শিক্ষা ও দক্ষ শ্রমিকের তুলনায় আমরা অনেক পিছিয়ে।”
যে প্রশ্নটা উঠেছে, ভারতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য কি আইন দরকার? বিশেষজ্ঞদের মতে, আইন করে জনসংখ্যা কমানো উচিত নয়। সমীক্ষা বলছে, ভারতে অধিকাংশ নারী বেশি বয়সে বিয়ে করতে চাইছে, তারা আগে চাকরি করতে চাইছে, তারা কম সন্তান চাইছে। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে শিক্ষা ও চাকরির ব্যবস্থা আগে করা দরকার।
বিশ্বে রেকর্ড হারে বৃদ্ধি পেতে পারে তাপমাত্রা, কারণ জানালেন বিজ্ঞানীরা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।