জুমবাংলা ডেস্ক : সবজি চাষে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার দুই শিক্ষিত যুবক আব্দুল হালিম ও ওসমান গনি। লেখাপড়ার পাশাপাশি এলাকায় ছয় একর জমি ইজারা নিয়ে আবাদ করছেন বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি সবজি। ‘রুপাই ভ্যালি অ্যাগ্রো ফার্ম’ নামে তাদের এই প্রজেক্টে ফলন হয়েছে ভালো। সবজি ক্ষেত থেকে এখন তাদের প্রতি মাসে আয় লাখ টাকা। সবজি চাষে আব্দুল হালিম ও ওসমান গনির সাফল্যের কথা ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাজুড়ে।
দূর-দূরান্ত থেকে অনেকেই ফটিকছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকা ১ নম্বর বাগান বাজার ইউনিয়নের চিকনেরখীল এলাকায় আসছেন তাদের সবজিক্ষেত দেখতে। অনেকেই তাদের পরামর্শ নিয়ে ঝুঁকছেন সবজি চাষে। এ প্রকল্পের উদ্যোক্তারা জানান, রুপাই ভ্যালি অ্যাগ্রো ফার্মে উৎপাদিত সব সবজি কীটনাশকমুক্ত। প্রাকৃতিক এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবজি চাষাবাদ করা হচ্ছে। এ কারণে এসব সবজি খাওয়া নিরাপদ এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।
বর্তমানে দুই যুবক সবজি চাষে এলাকায় সাফল্যের আলো ছড়ালেও তাদের শুরুর গল্পটা ছিল ঠিক উল্টো। আবদুল হালিম বলেন, ‘শুরুটা হয় ২০২০ সালে। ফেনী সরকারি কলেজ থেকে আমি অর্থনীতিতে এবং বন্ধু ওসমান গনি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স শেষ করি। এরই মধ্যে বেশকিছু স্থানে চাকরির জন্য ধরনা দিয়েছি। এর মধ্যে শুরু হয় করোনা মহামারি।
এক অবরুদ্ধকর অবস্থা। তাই দুই বন্ধু মিলে কিছু একটা করবো– এমন ভেবে সিদ্ধান্ত নিলাম সবজি চাষের। আমরা দুজন লেখাপড়া করে সবজি চাষ করবো তা কিন্তু এলাকার লোকজন প্রথম দিকে ভালোভাবে নেয়নি। পরিবার থেকেও বেশি সাপোর্ট ছিল না। পরিবারের সদস্যরা চেয়েছিলেন লেখাপড়া করেছি, ভালো চাকরি করবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে ছয় একর জমি ইজারা নিয়ে সবজি চাষ শুরু করি। এসব জমিতে চাষাবাদের জন্য প্রথমে তিন লাখ টাকা করে দুই বন্ধু ছয় লাখ টাকা পুঁজি দিয়েছি। প্রথমে এক দশমিক ৮ বিঘা জমিতে পেঁপে, দুই দশমিক এক বিঘাতে মুলা, তিন দশমিক এক বিঘাতে ধনেপাতা, চার দশমিক পাঁচ বিঘাতে খিরা, পাঁচ বিঘাতে কুল চাষ করা হয়েছে। পেঁপে চাষের ছয় মাসের মধ্যে ফলন তোলা শুরু হয়।
সবকটি গাছে ভালো ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে ৫০০ পেঁপে গাছ লাগানো হয়। সেগুলো থেকে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। বর্তমানে নতুন করে আরও দুই হাজার পেঁপে চারা লাগানো হয়েছে।
আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে এসব গাছে ফলন দেওয়া শুরু হবে। পাশাপাশি আড়াই একর জমিতে লাগানো হয়েছে কাকরল। খিরার ফলন খুব ভালো হয়েছে। লাউ, চিচিঙ্গাসহ অন্যান্য সবজিও অত্যন্ত ভালো হয়েছে। ‘রুপাই ভ্যালি অ্যাগ্রো ফার্মে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় কাঁকরোল। সাত বিঘা জমিতে গত বছর প্রায় ৮০ টন কাকরোল উৎপাদিত হয়। যা কমপক্ষে ১২ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়।
এবার আড়াই একর জমিতে কাকরল চাষ করা হয়েছে। এসব সবজি বিক্রির জন্য বাজারে নিতে হয় না। পাইকাররা, বিশেষ করে, চট্টগ্রাম ও ফেনী থেকে এসে ক্ষেত থেকেই কিনে নিয়ে যান।’
ফার্মের অপর উদ্যাক্তা ওসমান গনি বলেন, ‘আমরা ক্ষেতে তেমন একটা কীটনাশক ব্যবহার করি না বললেই চলে। নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য এক ধরনের হলুদ কার্ড ও পেরোমোন ব্যবহার করা হয়। এ দুই পদ্ধতিতে কম খরচে ক্ষেতের পোকামাকড় দমন সহজ হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে আমরা ভালভাবে চলছি। আমার মনে হচ্ছে, চাকরির চেয়ে ভালো আছি। আয়ও ভালো হচ্ছে। আশা করছি, সামনে আরও ভালো আয় করবো। চাষের পরিধি আরও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি আমরা ফেনী সরকারি কলেজ থেকে এমবিএ করছি।’
ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ফটিকছড়ির সীমান্তবর্তী এলাকায় সবজি ও ফল চাষাবাদে সাফল্য পেয়েছেন দুই যুবক। তারা কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করছেন। তাদের আমরা কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।