জুমবাংলা ডেস্ক : মসলাজাতীয় ফসল চাষে দেশের পাহাড়ি এলাকাগুলোকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এতে সফলতাও পাচ্ছে কৃষি বিভাগ। গবেষকরা মনে করছেন, টিলা-পাহাড়ে বসবাসকারীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে মসলাজাতীয় ফসলের চাষ হতে পারে অনন্য অবলম্বন। তেমনি সিলেটের পাহাড় বা টিলা এলাকাগুলোয় বহুবর্ষজীবী লতাজাতীয় উদ্ভিদ ‘গোলমরিচ’ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন গবেষকরা। সিলেটের জৈন্তাপুরে বেশ কয়েকজন কৃষক গোলমরিচ চাষে সফলতার মুখও দেখছেন। এতে খুশি গোলমরিচ নিয়ে গবেষণারত সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, দেশে গোলমরিচের চাষ হলে আমদানিনির্ভরতা কমে আসবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১-২২ অর্থবছরের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশে ৩৬৩ মিলিয়ন ডলার অর্থ মূল্যের মসলা আমদানি হয়েছে, যার মধ্যে একটি বড় জায়গা দখল করে আছে গোলমরিচ। বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি ও মার্কিন কৃষি বিভাগের (বিএএস-ইউএসডিএ) আর্থিক সহযোগিতায় ‘সিলেট অঞ্চলে গোলমরিচের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ নিয়ে গবেষণা করছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান ও চা উৎপাদন প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান এবং কৃষি বনায়ন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার। তারা মনে করছেন, সিলেটের বিভিন্ন পাহাড়ি অঞ্চলের খাসিয়া পুঞ্জিতে গোলমরিচ গাছ থাকলেও ভালো পরিচর্যার অভাবে তার উৎপাদন তেমন হয় না। এছাড়া বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি জমে থাকা ও শীত মৌসুমে পানির অভাব, খুঁটি ব্যবহার না করাসহ সার ব্যবস্থাপনার অজ্ঞতা দূর করতে পারলে গোলমরিচ চাষ করে ব্যাপক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেটের জৈন্তাপুরের খাসিয়া অধ্যুষিত মোকাম পুঞ্জিতে পরিবারের চাহিদা পূরণের জন্য কিছু চাষী গোলমরিচ চাষ করেন। এ রকম ১৫-২০ জন চাষী রয়েছেন, যারা কোনো প্রকার ব্যবস্থাপনা ছাড়া নিজেদের মতো চাষ করছেন। তেমনই একজন গোলমরিচ চাষী পুরিনা মানার। তিনি বলেন, ‘আমার গোলমরিচ গাছ আগে থেকেই ছিল, তবে এর উৎপাদন সম্পর্কে খুব একটা জ্ঞান ছিল না। এখন মনে হচ্ছে একটু পরিশ্রম করলে আরো ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।’
অন্য গোলমরিচচাষী অপিন পাত্র বলেন, ‘আগে আমরা এটি কেবল নিজেদের জন্য চাষ করতাম, এটা যে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব, জানা ছিল না। কৃষি বিভাগের লোকজন কিছুদিন ধরে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এখন চিন্তা করছি পানের সঙ্গে গোলমরিচ চাষেও গুরুত্ব দেব।’
অন্যদিকে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, গোলমরিচ মূলত গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলোয় ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হয়। এটি বহুবর্ষজীবী লতাজাতীয় উদ্ভিদ। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলংকা, ব্রাজিল, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য গ্রীষ্মপ্রধান দেশে গোলমরিচ বেশি চাষ করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশের বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় স্বল্প পরিসরে গোলমরিচের চাষ হচ্ছে। ব্যাপক হারে গোলমরিচ চাষ ও দেশে এর বর্তমান অবস্থা নিয়ে চলছে নানা গবেষণা। এরই অংশ হিসেবে সিলেট অঞ্চলের পাহাড় ও টিলাগুলোয়ও গবেষণা চলছে।
পাহাড়ি এলাকায় গোলমরিচ চাষের জন্য শুষ্ক মৌসুমে পানি ব্যবস্থাপনা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন গবেষক ড. মো. মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘প্রায় সাত-আট মাস গোলমরিচ গাছে ফল থাকে, ফলে গাছ থাকে শারীরিকভাবে দুূর্বল। সঠিক পরিচর্যা ও পুষ্টি উপাদান সরবরাহের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান অনেকাংশেই দূর করা সম্ভব।’
তিনি জানান, সিলেট অঞ্চলে চাষ হওয়া গোলমরিচের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, যে গাছগুলোয় কোনো ধরনের ব্যবস্থাপনা নেয়া হয়নি, সেগুলোয় তুলনামূলক ফুল ও ফলের পরিমাণ কম। এমনকি তাদের ফলের আকৃতিও ছোট ছিল। আবার পানি ও সারের পাশাপাশি একটু যত্ন নেয়া গাছগুলোয় ফলের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেছে। এমনকি সেগুলোর আকৃতিও বেশ বড় ছিল, যা আসলেই সম্ভাবনাময়।
গোলমরিচ গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদার বলেন, ‘গোলমরিচ একটি লাভজনক ফসল। পানের মতো প্রতিদিন বা সপ্তাহ শেষে বিক্রির সুযোগ না থাকলেও বছর শেষে শুকনো গোলমরিচ বিক্রি করে কৃষক মোটা অংকের টাকা পাবেন।’ যা কৃষকদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। সিলেট অঞ্চলে এর বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে সে সুযোগকে কাজে লাগানো যেতে পারে।
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শামিমা আক্তার বলেন, ‘রাজস্ব কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষকদের জন্য বেশকিছু প্রদর্শনী হয়। যার অংশ হিসেবে কিছু গোলমরিচচাষীকে এর আওতায় আনা গেছে। তাদের পরামর্শ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদের গবেষণার অংশ হিসেবে চাষীদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন।’
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি তাহমিন আহমদ বলেন, ‘কেবল গোলমরিচ নয়, সিলেটে কফিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদজাতীয় কৃষিপণ্য চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে এর সুফল পাওয়া যাবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।