বিনোদন ডেস্ক : আজ শনিবার, ২৬ আগস্ট ২০২৩। ৬৮ বছর আগে, ১৯৫৫ সালের এ দিনে মুক্তি পেয়েছিল সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালী’। বাস্তবতাবাদধর্মী বর্ণনার এ ছবিটি চলচ্চিত্রপ্রেমী ও বোদ্ধাদের কাছে এখনও সমানভাবে জনপ্রিয়। মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও, যেমন এ বছর (২০২৩ সাল) জনপ্রিয় টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ বছরের সেরা সিনেমার তালিকায় একমাত্র বাংলা সিনেমা হিসেবে ঠাঁই করে নিয়েছে ‘পথের পাঁচালী’।
মুক্তির পর যে সিনেমাটির এত জয়জয়কার, সে সিনেমা কিন্তু তৈরি হতে নিয়েছিল পাক্কা ৩ বছর। আবার মাঝে এক বছর অর্থের অভাবে থমকে ছিল ছবির কাজ। তারপরও লাভ- লোকসানের হিসাব ছেড়ে বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে দর্শকের কাছে পৌছায় ‘পথের পাঁচালী’। ছবিটি নির্মাণের প্রতিটি পদে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু চমকপ্রদ তথ্য।
নির্মাণকালীন সেসব অজানা গল্প জেনে নেয়া যাক-
১। ছবি আঁকতে গিয়েই পরিচয়
সিগনেট প্রেসের একজন গ্রাফিক ডিজাইনার ছিলেন সত্যজিৎ রায়। শিশু- কিশোরদের উপযোগী বইগুলো নতুন করে ছাপাতো প্রকাশনা সংস্থাটি। আর বইগুলোর প্রচ্ছদ ও ভেতরের ছবি আঁকার দায়িত্ব ছিল সত্যজিতের। এরকমই এক সময় তার হাতে এসে পড়ে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আম আঁটির ভেঁপু’ বইটি। ছবি আঁকতে গিয়েই প্রথমবারের মতো সত্যজিৎ পথের পাঁচালী পড়ার সুযোগ পান। পরবর্তীকালে এ কাহিনিই তাকে চলচ্চিত্র নির্মাণে উৎসাহী করে তোলে।
২। ১০০টি ছবি দেখতে হয়েছিল পরিচালককে
উপন্যাসটি পড়ার পর থেকেই চিত্রনাট্য ঘুরছিল সত্যজিতের মাথায়। কিন্তু চলচ্চিত্র তৈরি করবেন কী করে? চলচ্চিত্র নির্মাণে তার কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তবে উৎসাহেরও কমতি ছিল না। বিশেষ করে, সিগনেট প্রেসে কর্মসূত্রে এ পরিচালক যখন লন্ডনে ছিলেন তখন প্রায় ১০০টি ছবি দেখে ফেলেছিলেন ৬ মাসে। এর মাঝে একটি ছবি বিশেষভাবে তার নজর কাড়ে। সত্যজিৎ তার ‘মাই ইয়ারস উইথ অপু’ বইটিতে উল্লেখ করেন, কিভাবে ‘লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে’ নামক ইতালীয় এক সিনেমা তাকে অণুপ্রেরণা দিয়েছিল বাস্তব স্থানগুলোতে দৃশ্যধারণ করতে। এছাড়াও ভারতীয় সিনেমা ‘দো বিঘা জামিন’ ও জাপানি সিনেমা ‘রাশমনো’ তাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।
৩। স্ক্রিপ্ট নয়, স্টোরিবোর্ড
সিনেমা তৈরি করার পূর্ব শর্ত হলো স্ক্রিপ্ট তৈরি করা। কিন্তু মজার বিষয় হলো সত্যজিৎ কোনো স্ক্রিপ্টই তৈরি করেননি। স্কেচ ও নোটগুলোই ছিল ভরসা। পরে তিনি একটি স্টোরিবোর্ড তৈরি করেছিলেন। সেখানে ক্রমান্বয়ে সাজানো হয়েছিল স্কেচগুলো, যার নিচে যুক্ত করে দেয়া হতো সংলাপ। আর এভাবেই নির্মাণ হয় এ কালজয়ী চলচ্চিত্র।
৪। সড়ক নির্মাণের টাকায় তৈরি হয়েছিল সিনেমাটি
সিনেমা তৈরির সব বিপত্তি কাটিয়ে প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছিল অর্থ সংকট। প্রযোজক জোগাড় করা যাচ্ছিল না কোনোভাবেই। জানা যায়, অর্থ সংগ্রহ করতে সত্যজিৎ নিজের গ্রামোফোন রেকর্ডগুলো বিক্রি করে দিয়েছিলেন, বন্ধক রেখেছিলেন জীবন বিমা। এক পর্যায়ে চাকরিও নিয়েছিলেন, শুধু ছবিটি তৈরি করবেন এ আশায়। শেষে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধান চন্দ্র রায়ের হস্তক্ষেপে বাকি ফান্ড জোগাড় হয়েছিল। কিন্তু জনশ্রুতি রয়েছে, সরকারের হর্তা- কর্তারা ভেবেছিল এ সিনেমাটি একটি প্রামাণ্যচিত্র। যাতে গ্রামীণ উন্নয়ন সম্পর্কিত তথ্য থাকবে। তাই সড়ক নির্মাণের জন্য যে উন্নয়ন খাত রয়েছে তা থেকেই ঋণ দেয়া হয়েছিল সত্যজিৎকে।
৫। ছবি মুক্তির আগেই মারা গিয়েছিলেন অভিনেত্রী
সব চরিত্র মন মতো হলেও ‘ইন্দিরা ঠাকুরন’ চরিত্রটির জন্য যুতসই কাউকে পাচ্ছিলেন না পরিচালক। পরে অনেক খোঁজ করে কলকাতার রেড লাইট ডিস্ট্রিক্ট থেকে ৮০ বছরের বৃদ্ধ নাট্য অভিনেত্রী চুনীবালা দেবীকে পেয়েছিলেন। তবে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে ছবি মুক্তির আগেই চুনীবালা দেবী মারা যান।
৬। বাস্তবের মা- মেয়ে যখন পর্দায় একই চরিত্রে
এ সিনেমায় ‘সর্বজয়া’ চরিত্রটিতে অভিনয় করেছিলেন করুণা ব্যানার্জি আর দুর্গার ছোটবেলার চরিত্রটিতে রুনকি ব্যানার্জি। মজার বিষয় হলো, সর্বজয়া আর দুর্গা যেমন মা- মেয়ে তেমনি করুনা আর রুনকিও একই সম্পর্ক। অর্থাৎ বাস্তবের সম্পর্কই পর্দায় প্রতিফলিত করেছিলেন পরিচালক।
৭। ট্রেন দেখার আইকনিক দৃশ্যটি ছিল না মূল উপন্যাসে!
চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে অনেক সময় মূল উপন্যাসের কিছু দৃশ্য ও চরিত্রে পরিবর্তন ঘটাতে হয়। পথের পাঁচালীতেও এরকমটা ঘটেছিল। এন্ড্রু রবিনসনের লেখা ‘সত্যজিৎ রায়: দ্য ইনার আই’ গ্রন্থটি থেকে জানা যায়, অপু-দুর্গার ট্রেন দেখে দৌড়ানোর দৃশ্যটি মূল উপন্যাসে ছিল না। সিনেমটির আইকনিক দৃশ্যটি সত্যজিৎ রায়ের সৃষ্টি।
টাকার লোভে বসের সাথে রোমান্সে সুন্দরী যুবতী, ভুলেও বাচ্চাদের সামনে দেখবেন না
৮। লক্ষীপেঁচা অতিথি
সত্যজিৎ রায়ের স্ত্রী বিজয়া রায়ের আত্মজীবনী ‘মানিক ও আমি’তে এক অদ্ভুত ঘটনার উল্লেখ আছে। সত্যজিৎ যখন অর্থকষ্টে ভুগছেন, ফান্ডিংয়ের আশায় বসে আছেন, তখন তাদের বাড়িতে এক সাদা পেঁচা আশ্রয় নেয়। আর শাস্ত্র মতে, সাদা পেঁচা হলো লক্ষ্মীর বাহন। তাই অন্যরা পেঁচাটি নিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু কোনোভাবেই পেঁচাটিকে সড়ানো যাচ্ছিল না। অদ্ভুত হলেও সত্যি তার কিছুদিন পরেই মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে সুখবর পান তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।