জুমবাংলা ডেস্ক : শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী পাহাড়ি গ্রামগুলোতে হাতির অব্যাহত তাণ্ডব শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, চলতি আমন ধান ক্ষেতে প্রতি রাতেই ক্ষেতে হামলা করছে বন্যহাতির পাল। এ কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন পাহাড়ি এলাকার মানুষ। গ্রামবাসীরা তাদের জানমাল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
অন্যদিকে বন্যহাতি ও ফসল রক্ষায় তৎপরতা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা বন বিভাগের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় কৃষক প্রদীপ হাজং বলেন, ৪০-৫০টির মতো বন্যহাতির পাল খাবারের সন্ধানে উঠতি আমন ধানক্ষেতে হানা দিচ্ছে। এ সময় হাতির দল আমন ধানক্ষেতের থোরধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে। তাই চলতি আমন ফসল রক্ষায় কৃষকরা রাতে মশাল জ্বালিয়ে, ঢাকঢোল বাজিয়ে, টিন পিটিয়ে ও হৈ- হোল্লোর করে ধানক্ষেত পাহারা দিচ্ছেন।
কৃষক আজমত শেখ বলেন, দিনের বেলায় বন্যহাতির পাল গহীন অরণ্যে লুকিয়ে থাকে। আর সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেই খাদ্যের সন্ধানে বাড়িঘর ও ফসলের মাঠে তাণ্ডব চালায়। এ সময় ক্ষুধার্ত বন্যহাতিগুলো তাড়াতে গেলে তারাও মানুষের ওপর আক্রমণ করে। এতে মাঝে মধ্যেই হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। বন্যহাতির তাণ্ডব থেকে ফসলের ক্ষেত রক্ষা করতে গ্রামের লোকজন পালাক্রমে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, উপজেলার সীমান্তবর্তী পোড়াগাঁও ইউপির দাওধারা কাটাবাড়ি, ডালুকোনা, আন্ধারুপাড়া খলচান্দা, বুরুঙ্গা কালাপানি ও সমেশ্চুড়া গ্রামের বাসিন্দাদের এখন নির্ঘুম রাত কাটছে। বন্যহাতির তাণ্ডব থেকে ফসলের ক্ষেত রক্ষা করতে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কাবেজ উদ্দীন, টিপু মিয়া ও গহর মিয়া বলেন, গত মঙ্গলবার থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক বন্য হাতির একটি পাল খাবারের সন্ধানে পাহাড়ি গ্রামের ৩০-৩৫ জন কৃষকের আমনের ক্ষেত ও সামাজিক বনায়নের চারাগাছ নষ্ট করেছে। হাতিগুলো এলাকার বুরুঙ্গা কালাপানি লালটিলা নামক গভীর জঙ্গলে অবস্থান করছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেই লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। এ সময় গ্রামের লোকজন মশাল ও খড় জ্বালিয়ে, বাঁশি বাজিয়ে, হৈইচই করে, ঢাকঢোল পিটিয়ে এবং পটকা ফুটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
ভুক্তভোগী কৃষক সোবহান শেখ বলেন, বন্যহাতির অব্যাহত তাণ্ডবে অতিষ্ঠ আমরা। ফসল নষ্ট হওয়াতে আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়ছি। কৃষি ফসল ও চাষাবাদই আমাদের প্রধান আয়ের পথ। সেটিও এখন হুমকিতে পড়েছে। এছাড়া আশপাশের এলাকার কৃষকরাও হাতি আতঙ্কে রয়েছেন। তিনি বন্যহাতি ও ফসল রক্ষায় সরকারিভাবে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন।
উপজেলার বুরুঙ্গা গ্রামের কৃষক আব্বাস আলী, ইদ্রিস মিয়া ও ইব্রাহিম শেখ বলেন, এক সপ্তাহ ধরে প্রায় ৪০-৫০টি বন্যহাতির পালটি দিনে বুরুঙ্গা কালাপানি পাহাড়ি জঙ্গলে অবস্থান করছে। তাই ফসল রক্ষায় গ্রামের লোকজন হাতি প্রতিরোধে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন।
পোড়াগাঁও ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হযরত আলী বলেন, প্রতি বছর বন্যহাতির পাল খাবারের খোঁজে লোকালয়ে এসে ফসল নষ্টের পাশাপাশি প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। এই হাতিগুলো তাড়ানোর জন্য স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি। ফলে পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষ ও কৃষকরা হাতির ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটান। এর একটি স্থায়ী সমাধান হওয়া দরকার।
নালিতাবাড়ীর মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বন্য হাতির পালটি দিনে উপজেলার পাহাড়ি এলাকার গভীর জঙ্গলে অবস্থান করছে। আর সন্ধ্যা হলেই খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে নেমে আসছে। আমরা বন্যহাতি ও ফসল রক্ষায় তৎপর রয়েছি।
তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বন বিভাগের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করে সরকারিভাবে ফসলের ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন। তাই তিনি বন্যহাতিকে উত্ত্যক্ত করতে নিষেধ করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।