রাধিকা যাদব। ভারতের সম্ভাবনাময়ী এক টেনিস খেলোয়াড়। রাজ্য পর্যায় থেকে ধীরে ধীরে উঠে আসছিলেন আন্তর্জাতিক র্যাঙ্কিংয়ে। পরিচালনা করতেন একটি টেনিস একাডেমিও। কিন্তু, ২৫ বছরেই শেষ হয়ে গেল এই সম্ভাবনাময়ীর যাত্রা। নিজের বাবার হাতেই প্রাণ দিতে হলো রাধিকাকে।
মেয়ের আয়ে চলতে হয়, প্রতিবেশীদের কাছ থেকে হরহামেশাই এমন কথা শুনতে হচ্ছিল রাধিকার ৫৪ বছর বয়সী বাবা দীপক যাদবকে। অতিষ্ঠ হয়ে শেষ পর্যন্ত গুলি করেই শেষ করে দিলেন মেয়েকে। খবর দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের।
হরিয়ানা রাজ্যের গুরগাঁও জেলার সুশান্ত লোক-টু এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন দীপক। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নিজের লাইসেন্স করা রিভলবার দিয়ে পাঁচটি গুলি করেন তিনি রাধিকাকে। জ্বরে ভোগা তার মা এ সময় অন্য কক্ষে ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, বুলেট বিদ্ধ হয়ে এক তরুণীর মৃত্যুর খবর একটি বেসরকারি হাসপাতাল তাদের জানায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে। পুলিশের একটি দল তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে গিয়ে নিহতের চাচা কুলদীপকে পায়। সেখানে নিহতের বাবা-মা ছিলেন না। এরপর পুলিশ যায় ঘটনাস্থলে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়ের বাবা দীপককে পেয়েছে। সংবাদমাধ্যমটিকে পুলিশ জানিয়েছে, দীপক তাদের বলেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যে টেনিস খেলোয়াড়কে গুলি করেছেন, সে তার মেয়ে।
পুলিশ এরপর তার লাইসেন্স করা পয়েন্ট ৩২ বোরের রিভলবারটি জব্দ করে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দীপককে আটক করে। পরে সেদিন সন্ধ্যায় তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গুরগাঁয়ে ৫৬ নম্বর সেক্টরের পুলিশ স্টেশনে হত্যার অভিযোগে একটি এফআইআর (ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্ট) করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি।
পুলিশ স্টেশনের হাউস অফিসার ইন্সপেক্টর বিনোদ কুমার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, দীপক বেশ কিছুদিন ধরেই হতাশায় ভুগছিলেন। কারণ, মেয়ের আয়ের ওপর নির্ভর করে চলছেন এলাকাবাসীর এমন কটূক্তি নিয়মিত শুনতে হচ্ছিল। এলাকাবাসীর কথায় রাধিকাকে অনেকবার একাডেমিতে কাজ বন্ধ করতে বলেছেন তিনি, কিন্তু মেয়ে তার কথা শোনেনি। এরপর তিনি আর সহ্য করতে পারেননি। পুলিশ জানিয়েছে, দীপকের অল্প কিছু ভূসম্পত্তি আছে, যেখান থেকে তিনি ভাড়া পেতেন।
ভারতের আরেক সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেকে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাধিকার রিল বানানো নিয়ে রাগান্বিত ছিলেন তার বাবা দীপক। পরিবারের জন্য এটা লজ্জার বলে ভেবেছিলেন তিনি। পুলিশকে দীপক বলেছেন, যখনই গ্রামে যেতেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়েকে নিয়ে প্রতিবেশীদের কটূক্তি শুনতে হতো তাকে। গত ১৫ দিন এসব নিয়ে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভোগার পর এমন ভয়ংকর পদক্ষেপ নেন দীপক।
২০০০ সালের ২৩ মার্চ জন্ম নেওয়া রাধিকা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন টেনিস টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। অল ইন্ডিয়া টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের (এআইটিএ) রেকর্ড অনুযায়ী, মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যায়ে ক্যারিয়ার–সেরা ৭৫তম র্যাঙ্কিংয়ে উঠেছিলেন রাধিকা। ডাবলসে র্যাঙ্কিংয়ে ছিলেন ৫৩তম এবং সিঙ্গেলসে ৩৫তম।
ছবিটি জুম করে দেখুন একটি শব্দ লুকিয়ে আছে খুঁজে বের করার চ্যালেঞ্জ নিন
আন্তর্জাতিক টেনিস ফেডারেশন (আইটিএফ) অঙ্গনেও সক্রিয় ছিলেন রাধিকা, যেখানে তিনি র্যাঙ্কিংয়ে ১১৩তম। তবে, ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, দুই বছর আগে পাওয়া চোটের কারণে প্রতিযোগিতামূলক টেনিস থেকে রাধিকা সরে দাঁড়ান। কয়েক মাস ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার চেষ্টায় ছিলেন রাধিকা। বিশেষ করে ইনস্টাগ্রামে ছিল তার সরব উপস্থিতি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।