বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : গবেষকরা মুরগি থেকে চর্বি বের করতে প্রথমে একটি ‘গ্যাস ফ্লেম গান’ ব্যবহার করেন, যেখানে ‘ফ্লেম উইক’ নামের পদ্ধতি ব্যবহার করে চর্বির গলে যাওয়া তেল পুড়িয়ে ফেলা হয়।
সম্প্রতি মুরগির চর্বি দিয়ে পাওয়ার স্টোরেজ ডিভাইস তৈরির দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা।
গোটা বিশ্ব এখন টেকসই পরিবেশবান্ধব শক্তি উৎপাদনের দিকে ঝোঁকায় এগুলো মজুদ করার মতো পাওয়ার স্টোরেজ ডিভাইস তৈরির চাহিদাও বেড়েছে।
তবে, এ ধরনের ডিভাইস তৈরিতে এতোদিন ব্যবহৃত বেশ কিছু উপাদান ব্যয়বহুল হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
এর বিকল্প এনার্জি স্টোরেজ ডিভাইস তৈরির চ্যালেঞ্জ সমাধানে সহায়ক হতে পারে বিভিন্ন এমন বস্তু, যেগুলো সাধারণত ফেলে দেওয়া হয়।
‘আমেরিকান কেমিকাল সোসাইটি’র জার্নাল ‘এসিএস অ্যাপ্লায়েড ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড ইন্টারফেইস’-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে গবেষকরা এমন একটি পদ্ধতি তুলে ধরেছেন, যার মাধ্যমে মুরগির চর্বিকে কার্বনভিত্তিক ইলেক্ট্রোকোডে রূপান্তর করা যাবে। আর সেইসব ইলেক্ট্রোকোড এমন ‘সুপারক্যাপাসিটরে’ ব্যবহার করা যাবে, যার মাধ্যমে শক্তি সংরক্ষণ ও এলইডি লাইটে বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়।
২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা এর আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়েছে বলে প্যারিসভিত্তিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি’র তথ্যে উঠে এসেছে।
কিন্তু, সে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ কোথাও না কোথাও সংরক্ষণ করতে হবে যাতে পরবর্তী সময়ে এর থেকে গোটা বিশ্ব লাভবান হয়। এর উদাহরণ হিসেবে ধরা যায়, সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার রৌদ্রোজ্জ্বল দিনগুলোতে বিভিন্ন ছাদের সৌর প্যানেল থেকে যে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে, তার নেতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে এর দামে।
উচ্চক্ষমতার স্টোরেজ ডিভাইস নকাশ করার সাম্প্রতিক প্রচেষ্টাগুলোয় গ্রাফিনের মতো কার্বনভিত্তিক উপাদান ব্যবহার করতে দেখা গেছে। এর কারণ, এদের মধ্য দিয়ে সহজে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হতে পারা ও সহজলভ্যতা। তবে এগুলো তৈরি করা খরচসাপেক্ষ। এমনকি এতে পরিবেশের দূষণ ঘটিয়ে গ্রিন হাউজ গ্যাস তৈরির ঝুঁকিও আছে।
একটি বিকল্প কার্বন উৎসের উপাদান খোঁজার মাধ্যমে এই গবেষণার গবেষক মোহন রেড্ডি পাল্লাভোলু, জা হাক জং, সাং উ জু ও তাদের সহকর্মীরা এমন এক সহজ ও সাশ্রয়ী পদ্ধতি বানাতে চেয়েছিলেন, যেখানে মুরগি থেকে ফেলে দেওয়া চর্বিকে বৈদ্যুতিক পরিবাহী ‘ন্যানোস্ট্রাকচার’-এ রূপান্তর করে ‘সুপারক্যাপাসিটর এনার্জি স্টোরেজ ডিভাইস’ তৈরি করা সম্ভব।
গবেষকরা মুরগি থেকে চর্বি বের করতে প্রথমে একটি ‘গ্যাস ফ্লেম গান’ ব্যবহার করেন, যেখানে ‘ফ্লেম উইক’ নামের পদ্ধতি ব্যবহার করে চর্বির গলে যাওয়া তেল পুড়িয়ে ফেলা হয়, অনেকটা তেলের বাতি জ্বালানোর মতো করে। পরবর্তীতে তারা একটি ফ্লাস্কের নিচে এর কালি সংগ্রহ করেন, যা ঝুলে ছিল শিখার ওপর।
পরবর্তীতে অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা যায়, এতে কার্বনভিত্তিক ন্যানোস্ট্রাকচার আছে, যা দেখতে অনেকটা পেঁয়াজের বিভিন্ন স্তরের থাকা গোলাকার জালির মতো।
আর কার্বনের বিভিন্ন ন্যানোপার্টিকেলের বৈদ্যুতিক সক্ষমতা বাড়াতে সেগুলোকে অর্গানোসালফার যৌগ ‘থিওরিয়া’র দ্রবণে ডুবিয়ে পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা।
এ গবেষণায় ‘অ্যাসিমেট্রিক সুপারক্যাপাসিটর’-এর ঋণাত্মক ইলেক্ট্রোডের সঙ্গে মুরগির চর্বি সমন্বয় করার পর দেখা গেছে, এগুলোতে কার্বন ন্যানোপার্টিকেলের ধারণক্ষমতা ও স্থায়িত্ব বেশ ভাল।
এদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ঘনত্বও বেশি, যা পরবর্তীতে আরও উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে থিওরিয়ায় দ্রবীভূত কার্বন ন্যানোপার্টিকেল দিয়ে বিভিন্ন ইলেক্ট্রোকোড তৈরি করার পর।
Get the latest News first— Follow us on Zoombangla Google News, Zoombangla X(Twitter) , Zoombangla Facebook, Zoombangla Telegram and subscribe to our Zoombangla Youtube Channel.