বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : শুয়ানটাই প্রসেসরটি তৈরিতে গবেষণা চালিয়েছে আলিবাবার দামো একাডেমি। ২৮ ফেব্রুয়ারি নতুন এই প্রযুক্তিপণ্য উন্মোচিত হয়েছে বেইজিংয়ের এক প্রযুক্তি প্রদর্শনীতে। শুয়ানটাই সি৯৩০ নামের এই সিপিইউটির ডিজাইনের পাশাপাশি তৈরিও করছে আলিবাবারইনিজস্ব সেমিকন্ডাক্টর ইউনিট টি-হেড। অর্থাৎ সি৯৩০-এর মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তিতে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীলতা কমানোতে আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল চীন।
ওয়েব সার্ভার, ডেটা সেন্টার এবং প্রাতিষ্ঠানিক ওয়ার্কস্টেশন কম্পিউটিংয়ে ব্যবহারের জন্য বানানো হয়েছে এই প্রসেসর। প্রযুক্তিবিদদের অভিমত, চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া নানা প্রযুক্তিগত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে চীনের লড়াইয়ের বড় অংশ হতে যাচ্ছে এটি। এর মধ্যেই আলিবাবার এই প্রসেসর চীনা প্রযুক্তি নির্মাতা ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে।
রিডিইউসড ইনস্ট্রাকশন সেট কম্পিউটিং বা রিস্ক ঘরানার সিপিইউ আর্কিটেকচারের মধ্যে আছে রিস্ক-ফাইভ।
এটি পুরোপুরি ওপেন সোর্স ইনস্ট্রাকশন সেট আর্কিটেকচার, ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্যাটেন্ট বা লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই। বহুল ব্যবহৃত দুই প্রসেসর আর্কিটেকচার, ইন্টেলের এক্স৮৬ ও এআরএমের বিকল্প এটি। কোনো ব্যক্তি বা প্রাতিষ্ঠানিক মালিকানা না থাকায় রিস্ক-ফাইভ প্রসেসর তৈরির ওপর কোনো পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়, যা এআরএম বা এক্স৮৬-এর বেলায় দেওয়া সম্ভব। এ কারণেই চীনা নির্মাতারা এটি ব্যবহারে ঝুঁকেছেন।
এ ধরনের প্রসেসরগুলো সাধারণত এমবেডেড সিস্টেম, ক্লাউড কম্পিউটিং, এআই, ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসে ব্যবহৃত হয়। প্রসেসরগুলো ৩২, ৬৪ ও ১২৮ বিট ইনস্ট্রাকশন সেটের হয়ে থাকে। ফলে রিস্ক-ফাইভ প্রসেসরগুলো খুবই উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন। এই আর্কিটেকচারের প্রসেসর তৈরি করছে বেশ কিছু নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ডেটা সেন্টার, স্মার্ট গাড়ি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে এসব প্রসেসর।
বহুদিন ধরেই আলিবাবা কাজ করছে রিস্ক-ফাইভ প্রসেসর তৈরিতে। এর আগে ২০১৯ সালে সি৯১০ এবং ২০২৩ সালে সি৯২০ নামের দুটি প্রসেসর তারা বাজারে এনেছে। নতুন সি৯৩০ প্রসেসরটি এর মধ্যেই বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য নির্মাতার কাছে পাঠিয়েছে আলিবাবা।
এসব প্রতিষ্ঠানের অভিমত, উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসরটিকে তারা ইন্টেল জেনন এবং এএমডি এপিক সিপিইউয়ের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব। তবে এ ছাড়া কোনো পারফরম্যান্স বেঞ্চমার্ক পাওয়া যায়নি। আলিবাবার দাবি, স্পেকিন্ট২০০৬ বেঞ্চমার্কে সি৯৩০ স্কোর প্রতি গিগাহার্জে ১৫ পয়েন্ট স্কোর করেছে। এখন দেখার পালা আরো আধুনিক বেঞ্চমার্কে প্রসেসরটির পারফরম্যান্স দেখার।
চীনের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে এআই ও ক্লাউড অবকাঠামো উন্নয়ন করতে ৩৮০ বিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে চীনা সরকার। এর বড় অংশ আলিবাবা বিনিয়োগ করেছে সার্ভারের জন্য প্রসেসর তৈরির গবেষণায়।
গাইবান্ধায় ১০ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ৭০ বছরের বৃদ্ধ আটক
হ্যাংজুভিত্তিক স্টার্ট-আপ ডিপসিকের তৈরি উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন এআই মডেলগুলোর জনপ্রিয়তায় চীনে এআই সার্ভারের চাহিদা বাড়ছে দ্রুত। এই চাহিদা মেটাতে নতুন প্রসেসরগুলো গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছে আলিবাবা। কয়েক দশক ধরেই এআইশিল্পে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান।
চীনজুড়ে আরো ডেটা সেন্টার নির্মাণ করবে তারা। ডিপসিক যেমন কম খরচে উচ্চ কার্যক্ষমতাসম্পন্ন এআই সেবার মাধ্যমে ওপেনএআইয়ের একচেটিয়া আধিপত্য ভেঙে দিয়েছে, তেমনি রিস্ক-ফাইভ প্রসেসর এআইশিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাবে, এটাই প্রতিষ্ঠানটির আশা।
চীনা প্রসেসরগুলো ইন্টেলের আধিপত্যকে চোখ-রাঙানি দিচ্ছে। এরই মধ্যে চীন সরকার প্রতিটি কম্পিউটারে রিস্ক-ফাইভ প্রসেসর ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা জারি করেছে। বিশ্বব্যাপী এই প্রসেসরগুলোর চালান ২০৩০ সালের মধ্যে ১৬.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে ধারণা করে হচ্ছে, ২০২৩ সালে যা ছিল মাত্র ১.৩ বিলিয়ন ডলার। আগামী দিনে আর্ম ও এক্স৮৬-এর পাশাপাশি বাজারে রিস্ক-ফাইভভিত্তিক কম্পিউটারও জনপ্রিয় হবে বলেই ধারণা করছেন প্রযুক্তি বিশ্লেষকরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।