হাসিন আরমান, কুবি প্রতিনিধি : দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একে একে ছাত্র সংসদ কার্যক্রম শুরু হলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) এ নিয়ে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কমিটি গঠন করলেও বাস্তবায়নের পথে গতি নেই, ফলে দাবি থেকে যাচ্ছে কেবল কাগজে-কলমে।
গত ২৯ জুলাই (মঙ্গলবার) কুবি প্রশাসন পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (কুকসু) গঠনের প্রস্তাবনা ও সুপারিশ দিতে বলা হয় কমিটিকে। তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও এখনো কার্যক্রমে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
অন্যদিকে, কমিটির সদস্যরা জানান, কমিটি নিয়মিত বৈঠক করছে এবং শিক্ষার্থীদের মতামত নেয়ার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। তবে প্রতিবেদন প্রস্তুত ও সুপারিশ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বাস্তবিক কোনো অগ্রগতি দেখানো সম্ভব নয়। তার পাশাপাশি কমিটিতে নতুন দুইজন সদস্য যুক্ত হয়েছেন। তাঁরা হলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো: আব্দুল হাকিম ও জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ এমদাদুল হক।
এ বিষয়ে কুবি ছাত্র সংসদ গঠনের জন্য গঠিত কমিটির আহ্বায়ক ও ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম.এম. শরিফুল করিম বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইনে ছাত্র সংসদের কোনো বিধান নেই। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে আগে এ ব্যবস্থা ছিল না, যেমন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, তারা ইতোমধ্যে তা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এ ধরনের প্রক্রিয়ায় অধ্যাদেশ বা সংসদীয় অনুমোদন প্রয়োজন হয়। আমরা সেই অনুযায়ী চেষ্টা করছি। খসড়া প্রস্তুত করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) পাঠাতে হবে, আর এ নিয়ে আগামী সপ্তাহে আমাদের আরেকটি বৈঠকও হওয়ার কথা রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কমিটির দায়িত্ব হলো পুরো প্রক্রিয়াটিকে দৃশ্যমান করা। আমরা দেখেছি বর্তমান আইনের মধ্যে ছাত্র সংসদ কার্যক্রম চালানো সম্ভব নয়, তাই কিভাবে আইনের আওতায় আনা যায় সেটি নিয়েই আমরা কাজ করছি। আইনি কাঠামোর মধ্যে এলে তবেই নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি বাজেটের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আগে ছাত্র সংসদ ছিল না, পরে তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সর্বশেষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসিতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে। ‘
তিনি বলেন, ‘তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে বিষয়টি কতটা আন্তরিকতার সঙ্গে এগোবে, তা বলা কঠিন। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও মতামতকে প্রক্রিয়ায় যুক্ত করতে। তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে চাই, তারা কীভাবে ছাত্র সংসদ দেখতে চায়। ‘
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হলেও কুবিতে শুধু আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ফার্মেসী বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী নাঈম ভূঁইয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচন সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে একটা আমেজ সৃষ্টি করেছে। আমাদেরও কুকসু নির্বাচনের অপেক্ষা চলছে। কিন্তু প্রশাসন শুধু কমিটি করে সময় পার করছে, কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যখন প্রস্তুতি নিচ্ছে, আমাদের প্রশাসন নীরব। আমরা প্রয়োজনে কঠোর অবস্থানে যাবো সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে। ‘
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইসিটি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘একে একে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন করছে, ডাকসুও অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু কুবিতে কোনো অগ্রগতি নেই। এটা আসলে কার ব্যর্থতা—প্রশাসনের নীরবতা, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নাকি শিক্ষার্থীদের ঐক্যের ঘাটতি? যখন অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ তৈরি হচ্ছে, তখন আমরা এখনো সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন তিন মাসের সময়সীমা বেঁধে দিলেও কাজের কোনো ধারাবাহিকতা নেই। এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। প্রশাসন যদি আমাদের অধিকারের বিষয়ে সচেতন না হয়, ডাকসু নির্বাচনের পর আমরা নিজস্ব কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।’
যা বলছেন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ:
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভ বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ছাত্র সংসদ গঠনের দাবি জানাচ্ছে, আমরা এই দাবিকে স্বাগত জানাই। তবে ঢাবি, চবি ও রাবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় ছাত্র সংসদগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যেখানে দলমত নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা মত প্রকাশ করতে পারে এবং প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারে। কিন্তু, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। গত বছরের ৫ আগস্ট কিছু শিক্ষার্থীর দাবির প্রেক্ষিতে কথিত উপাচার্য মঈন সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদেরও প্রত্যাশা, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে তার আগে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির পরিবেশ উন্মুক্ত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যদি রাজনীতি চালু থাকে, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের প্রার্থী মনোনয়ন দিতে পারবে এবং শিক্ষার্থীরাও স্বাধীনভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে। ছাত্র সংসদও এক ধরনের রাজনীতি। তাই আগে রাজনীতির দ্বার উন্মুক্ত করে পরে ছাত্র সংসদ প্রতিষ্ঠা করা উচিত। অন্যথায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ রেখে আবার ছাত্র সংসদ করার চেষ্টা একটি দ্বিচারিতা ছাড়া কিছু নয়।’
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ প্রয়োজন। এবিষয়ে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে কমিটির কাজ কতদূর অগ্রসর হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি উন্মুক্ত থাকলেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তা নিষিদ্ধ। সেই ক্ষেত্রে ছাত্র সংগঠনগুলোকে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হবে কি না, সেটি এখনো প্রশ্নসাপেক্ষ।’
ডাকসু নির্বাচনে পেয়েছেন একটি ভোট, সেই ভোটারকেই বিয়ে করতে চান রাকিব
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে বা হওয়া উচিত, তাই সবার জন্য সমান সুযোগ থাকা জরুরি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সে নিশ্চয়তা থাকতে হবে। নির্বাচন হলে সেটি অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।