জুমবাংলা ডেস্ক : গত এক দশকেরও বেশি সময় চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে নাব্য সঙ্কট ও বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠায় রূপালি ইলিশের দেখা অনেকটাই কমেছে। এখন আর বছরজুড়ে পদ্মা-মেঘনায় জেলেদের বিচরণ থাকে না। বেকার না থেকে অনেক জেলে নিষেধাজ্ঞা শেষে জুলাই মাসে চলে যান সাগরে ইলিশ আহরণ করতে। মেঘনা উপকূলীয় মতলব উত্তর, সদর ও হাইমচর উপজেলার শত শত জেলে সাগরে মাছ ধরার জন্য এখন সর্বশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা ছিল সম্পূর্ণ নিষেধ। আজ নিষেধাজ্ঞা শেষ। তাই ওই দিন রাতেই জেলেরা নোয়াখালীর হাতিয়ার উদ্দেশে রওনা হবেন।
সম্প্রতি সময়ে সদর দক্ষিণ ও হাইমচর উপজেলার জেলে পল্লী এলাকায় গিয়ে জেলেদেরকে জাল প্রস্তুত করতে দেখা গেছে। একই ধরনের প্রস্তুতি আনন্দ বাজার এলাকার জেলেদের। টানা তিন মাস সাগরে ইলিশ আহরণ করবেন জানালেন জেলেরা।
চাঁদপুর সদরের সীমান্তবর্তী এলাকা আখনের হাট মেঘনা পাড়ে জাল মেরামত করছেন প্রায় ২০-২৫ জন জেলে। তাদের জিজ্ঞাসা করা হয় ইলিশ পাওয়া যায় কিনা। বললেন, আমরা পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ আহরণ করি না। সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের গোবিন্দিয়া গ্রামের জেলে হাসান চৌকিদার বলেন, আমাদের এখানে ৮টি ফিশিং ট্রলার আছে। প্রত্যেক ট্রলারে কমপক্ষে ১৩-১৪ জন জেলে থাকে। এসব ফিশিং ট্রলারের মহাজন হচ্ছে হরিণা ফেরিঘাট এলাকার মোজাম্মেল হোসেন টিটু গাজী। এখন সাগরে ইলিশ ধরার জন্য রওয়ানা হব। গত কয়েক দিন জাল মেরামতের কাজ করছি। তিনি আরও বলেন, গত বছর সাগরে গিয়ে কাঙ্খিত পরিমাণ ইলিশ পাইনি। ৩ মাসে খাওয়া খরচ শেষে পেয়েছি মাত্র ৮ হাজার টাকা। এ বছর এখন পর্যন্ত সাগরের অবস্থা ভাল। ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। একই এলাকার জেলে জুয়েল মাঝি, মনির ও ইয়াছিন গাজী বলেন, সাগরে মাছ আহরণ করতে গেলে প্রতি এক মাস পর পর বাড়িতে আসা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিলে সাগর এলাকার কূলে আশ্রয় নিতে হয়। আর আহরণকৃত ইলিশগুলো মহাজনের অতিরিক্ত ট্রলার করে চাঁদপুর মাছঘাটে নিয়ে আসে।
আখনের হাট এলাকার জেলে সুলতান হাওলাদার, সুমন হোসেন ও হানিফ গাজী একই ফিশিং ট্রলারে কাজ করেন। এর মধ্যে অভিজ্ঞ জেলে হানিফ গাজী। তিনি বলেন, আমরা নদী ভাঙ্গনের শিকার। ৩ বার আমাদের বাড়িঘর ও ফসলী জমি মেঘনাগর্ভে বিলীন হয়েছে। মাছ আহরণই আমাদের একমাত্র পেশা। বেড়িবাঁধের পাশে আশ্রয় নিয়ে থাকি। হাইমচর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ জানান, চাঁদপুরের পদ্মা ও মেঘনা উপকূলীয় এলাকার অনেক জেলেই সাগরে মাছ আহরণ করতে যায়।
শরণখোলা
সংবাদদাতা, শরণখোলা, বাগেরহাট থেকে জানান, বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণে ৬৫ দিনের অবরোধ শেষ হচ্ছে শনিবার। তাই কর্মচঞ্চল হয়ে উঠেছে উপকূলীয় বাগেরহাটের শরণখোলার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও জেলে পল্লীগুলো। ট্রলারে জাল উত্তোলন, বরফ বোঝাই ও অন্য মালামাল সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত সময় পার করছে জেলেরা। শনিবার মধ্যরাতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে সমুদ্রযাত্রা।
তবে, উপকূলীয় এলাকার অসংখ্য অসাধু জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আগেই সাগরে গিয়ে মাছ ধরছে, যা মৎস্য অবরোধের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। শরণখোলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন জানান, শরণখোলায় সমুদ্রগামী প্রায় তিনশ’ ফিশিং ট্রলার রয়েছে। তারা সঠিকভাবে নিষেধাজ্ঞা পালন করেছেন। তবে, এদের অনেকেই এখনও মাছ ধরতে যেতে অপ্রস্তুত। আর্থিক সঙ্কটে ট্রলার মেরামত করা সম্ভব হয়নি অনেকের। পর্যায়ক্রমে তারা সাগরে যাত্রা করবে। শরণখোলা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় জানান, কিছু অসাধু জেলে অবরোধকালীন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সমুদ্রে জাল ফেলেছে। এদের অনেকের বিরুদ্ধে নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড ব্যবস্থাও নিয়েছে।
ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশের আশায় জেলেরা
স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, সাগরে মাছ ধরতে পারলেই জোটে অন্ন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা থাকলে আয় বন্ধ। নিষেধাজ্ঞার সময়টিতে জেলেপল্লীগুলোতে অভাবের কান্না। নিবন্ধিতরা বরাদ্দের চাল পেলেও নেই বিকল্প আয় ও কর্মসংস্থান। সাগরে মৎস্য শিকারের ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে শনিবার মধ্যরাতে। সে রাতেই সাগরে নেমে পড়বেন মৎস্যজীবীরা। তাই উপকূলীয় প্রান্তিক জেলেরা ক্ষণ গণনা শুরু করেছেন। জেলেপল্লী ও মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে সাগরযাত্রার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে। বিশেষ করে মালিকানাধীন নৌযানের জেলেরা জ¦ালানি তেল, চাল, ডাল, পানি এবং মেরামত করা জাল বোটে তোলার কাজটিই সারছেন। অপরদিকে, প্রান্তিক জেলেরা মহাজন থেকে দাদন নিয়ে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের প্রত্যাশা, মৌসুমের শুরুতে আশানুরূপ না পেলেও এবার কাক্সিক্ষত রূপালি ইলিশের দেখা মিলবে। জুটবে দু’বেলা খাবার। চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট, ফিশারিঘাট মৎস্য অবতরণকেন্দ্র, ব্রিজঘাট, মাঝিরঘাট, পতেঙ্গার ১৫ নম্বরঘাট এবং কাট্টলীর সমুদ্রপাড়ের জেলেরা প্রস্তুত।
এতদিন তারা ফিশিং বোট, ট্রলার ও ছোট ছোট ইঞ্জিন নৌকা ডাঙ্গায় তুলে রেখেছিল। কেউ বোট মেরামত, কেউ আবার জালসহ উপকরণ সংগ্রহে প্রায় দুই মাস কাটিয়ে দিয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালি ইলিশ শিকারের আশা নিয়ে জেলেরা শনিবার মধ্যরাত থেকেই সাগরে যাত্রা শুরু করবে। কাট্টলী এলাকার জেলেরা জানান, চলতি মৌসুমে আশানুরূপ ইলিশ না মেলায় এবারও বরাবরের মতো দেনাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
সীতাকু- থেকে কাট্টলী উপকূলের কাছাকাছি ছোট আকারের বোট নিয়ে মাছ ধরেন উত্তর চট্টলা উপকূলীয় জলদাস সমবায় কল্যাণ সমিতির সদস্য জেলেরা। করোনা মহামারীর সময় থেকে তাদের আয়-রোজগারে টান। সেই ক্ষত এখনও বয়ে বেড়াচ্ছে তারা। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার সময় কমানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে আবেদনও জানিয়েছিল তারা। নিষেধাজ্ঞার কবলে চরম অভাব জেলেপল্লীগুলোতে। চট্টগ্রামের ৩৮টি জেলেপল্লীর প্রায় ৫ লাখের অধিক লোক মাছ ধরার জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন। নিষেধাজ্ঞার সময়ে শুধু সরকারী বরাদ্দের চালে পরিবার-পরিজন নিয়ে অভাব-অনটনে দিন পার করছেন জেলেরা। দারিদ্র্যের গ্রাসে লাখো জেলের জীবন। এ অবস্থায় বরাদ্দের চালের পাশাপাশি বিকল্প আয় ও কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়েও কোন লাভ হয়নি তাদের। উপকূলীয় এলাকার জেলেপল্লীগুলোতে এখনও চলছে ক্ষুধার কান্না।
চট্টলা উপকূলীয় মৎস্যজীবী জলদাস সমবায় ফেডারেশনের সভাপতি লিটন জলদাস বলেন, একটি পরিবারে চাল দিয়ে কিছু হয় না। ছোট নৌকা দিয়ে মাছ শিকার করি। মৎস্য বিভাগ অন্তত সীতাকু-ের সন্দ্বীপ চ্যানেলে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা কমাতে পারে। তাহলে কিছুটা চলতে পারতাম। পাশের দেশ ভারতে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত জেলেদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়, আমাদের সেই সুযোগটা দেয়া হয় না। এখন সাগরে নামার জন্য জেলেরা দাদন নিচ্ছে। কারণ, কারও হাতে টাকা নেই। এ ছাড়া অনিবন্ধিত জেলেদের অবস্থা আরও করুণ। এসবের পরও শনিবার রাত থেকে সাগরে যাওয়ার জন্য ছুটোছুটি থেমে নেই।
সংগঠনের সহসভাপতি উপেন্দ্র জলদাস বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে শনিবার মধ্যরাত থেকে জেলেরা সাগরে নামবে। গত মৌসুমে মাছ শিকার ভাল হয়নি। সূত্র : জনকন্ঠ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।