সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সাম্প্রদায়িক বক্তব্য দেওয়ার অভিযাগে এনে মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুদেব কুমার সাহা।
মঙ্গলবার(৭ মে) দুপুরে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে চেয়ারম্যান প্রার্থী সুদেব কুমার সাহা লিখিত বক্তব্যে সাবেক সংসদ সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, উপজেলা পরিষধ নির্বাচনের আগে সংসদ সদস্যসহ সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি কিংবা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। শুধু ভোটার হলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে সুদেব সাহা লিখিত বক্তব্য বলেন, ‘সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক তার আপন ফুফাতো ভাই মোঃ ইসরাফিল হোসেন সদর উপজেলা পরিষদের দুইবার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃতীয়ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমপি তার ভাইয়র পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তার মনোনীয়ত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করলে, দলীয় পদ থাকবে না বলে বিভিন্ন ফোরামে দলীয় পদধারী নেতা-কর্মীদের ধমকও দিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত দলের বিভিন্ন ফোরামকে ডেকে তার ফুফাতো ভাইয়ের পক্ষে কৌশলে প্রভাব বিস্তার করছেন। একজন সংসদ সদস্য হওয়ার পরও উপজেলা নির্বাচনে একজন প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি অবস্থান নেওয়ায় দলীয় কর্মী ও সমর্থকদের মাঝে সমালোচনাসহ নানা প্রক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে নির্দলীয় নির্বাচন হলেও দলীয় নেতা-কর্মীদের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে এবং নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতিসঞ্জার হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন সুদেব কুমার সাহা।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, ‘গতকাল সোমবার(৬ মে) সদর উপজেলায় গড়পাড়া এলাকায় শুভ্রসেন্টারে উপজেলার ঈমাম, মোয়াজ্জেম, মাদ্রাসা শিক্ষক ও অধ্যক্ষদের নিয়ে সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে ভাই মোঃ ইসরাফিল হোসেনের পক্ষে এক সভা করেন। সেখানে তিনি আপত্তিজনক ও সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য তুলে ধরেন। ফলে ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট ও সংখ্যালঘুদের মাঝে অনাস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। তাছড়া কৃষ্ণপুর ইউনিয়নে নির্বাচনের পূর্বে সরকারি প্রকৌশলীকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পেরট আশ্বাস প্রদান করছেন। যা নির্বাচনি আচরণবিধির লঙ্ঘনের সামিল। বর্তমান জনপ্রতিনিধি ও সাবেক জনপ্রতিনিধিদের ডেকে এমপি তার আপন ফুফাতো ভাইয়ের পক্ষে কাজ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। এতে জনপ্রতিনিধিরা অসহায় বোধ করছেন।
সুদেব কুমার সাহা বলেন, ‘শুধু তাই নয় জনপ্রতিনিধিদের দলীয় এমপি জাহিদ মালেক তার প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যে সকল মাদ্রাসা শিক্ষকবৃন্দ নির্বাচনের দায়িত্বপালন করবেন তাদেরকে ইসরাফিল হোসেনের পক্ষে কাজ করার জন্য বলেছেন। এটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এমপি হস্তক্ষেপের কারণে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংশয় রয়েছে।
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী সুদেব সাহা আক্ষেপ করে বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জ সদর, পৌরসভার ও সাটুরিয়ার কয়েকটি ইউনিয়নে তার নির্বাচনী প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেছি। তার জন্য দীর্ঘ ৩৫ বছর কষ্ট করেছি। বিগত ৫ টি জাতীয় নির্বাচনে তাকে জয়ী করার জন্য নিরলস কাজ করেছি। আজকে উপজেলা নির্বাচনে তার ভাইয়ের বিপক্ষে চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছি বলে সংসদ সদস্যের মুখ থেকে আমার বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক কথা বলেন এবং অবমূল্যায়ন করনে। আমি জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছি। চেম্বার অব কমার্সের তিনবারের সভপতির ছিলাম। জেলা আওয়ামী লীগের দুই বারের সাংগঠনিক সম্পাদক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার দুইবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এতোগুলো পদপদবী থাকার পরও একজন সংসদ সদস্যর কাছ থেকে এমন কথা সমিচীন নয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে সুদেব সাহার সঙ্গে ছাত্রলীগ যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে সংসদ সদস্য জাহিদ মালেকের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে জাহিদ মালেকের ফুপাতো ভাই আরেক চেয়ারম্যান প্রার্থী মো: ইসরাফিল হোসেন বলেন, খুব শীঘ্রই সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।