দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগে এতদিন ৬০ শতাংশ কোটা সুবিধা পেতেন নারী চাকরিপ্রার্থীরা। ফলে এ পেশায় নারীদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ রয়েছে। প্রাথমিকে কর্মরত শিক্ষকদের নারী-পুরুষের হার দেখলেও তা স্পষ্ট হয়। তবে এবার নতুন নিয়োগ বিধিমালায় নারী কোটা বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
শিক্ষাবিদদের মধ্যে কেউ কেউ এটিকে ‘বৈষম্যমুক্ত’ পদ্ধতি বললেও অনেকে সমালোচনা করছেন। সমালোচকদের ভাষ্য, প্রাথমিকে যেহেতু শিশু শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে, সেজন্য শ্রেণিকক্ষে নারী শিক্ষকদের উপস্থিতি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। নারী কোটা বাতিলে নিয়োগে নারীদের উপস্থিতি কমবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সবশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৬৫ হাজার ৫৬৫টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ শিক্ষক ১ লাখ ২৭ হাজার ৩৯ জন। আর নারী ২ লাখ ৩৫ হাজার ৬৭০ জন।
জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’ জারি করে সরকার। এতে শিক্ষক নিয়োগে বড়সড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় নারী কোটা বাতিল। এ কোটা বাতিলে পুরুষ প্রার্থীদের মধ্যে উৎফুল্লতা দেখা গেছে। অন্যদিকে নারী প্রার্থীরা হতাশ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে সরকারি চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন আফসানা আক্তার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলা বিভাগে পড়েছি, শিক্ষকতা করাটা আমার স্বপ্ন। সেটা প্রাথমিক হোক কিংবা মাধ্যমিকে। তবে সরকারি প্রাথমিকের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ওখানে নারীদের কোটা ছিল। নতুন নিয়মে কোটা না রাখায় আমরা নারী প্রার্থীরা হতাশ। আশা করি, কিছুটা কমিয়ে হলেও নারীদের জন্য কোটা রাখার বিষয়টি সরকার পুনর্বিবেচনা করবে।
তবে তার সঙ্গে একমত নন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘নারীরা অনেক ক্ষেত্রে কোটা সুবিধা নিয়ে এগিয়ে গেছে। এখন পরিস্থিতি এমন যে, নারীদের কোটা দিতে গিয়ে মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও পুরুষরা বেকার থাকছেন। এতে পরিবার, সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। সেজন্য সবার জন্য চাকরির ক্ষেত্র উন্মুক্ত রাখাটাই যৌক্তিক।’
পরামর্শক কমিটির সুপারিশ মানা হয়নি
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে পরামর্শক কমিটি গঠন করে। এ কমিটি তাদের প্রতিবেদনে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় নারী শিক্ষকদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনায় নারী শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন। তাতে শিশুদের শেখার ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
তবে সেই সুপারিশের প্রতিফলন নেই নতুন নিয়োগ বিধিমালায়। পরামর্শক কমিটির প্রধান ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ বলেন, অবশ্যই শিক্ষক নিয়োগে নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। বিষয়টি পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদনে রয়েছে। আমি মনে করি, বিচ্ছিন্ন সিদ্ধান্ত না নিয়ে সামগ্রিক সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
শিক্ষক নিয়োগে কোটা পদ্ধতি আগে যেমন ছিল, আর এখন যেমন
২০১৯ সালের বিধিমালা অনুযায়ী—সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী কোটা ছিল। বাকি ৪০ শতাংশের মধ্যে ২০ শতাংশ ছিল পোষ্য কোটা। আর অবশিষ্ট ২০ শতাংশ পুরুষ প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের কথা উল্লেখ ছিল।
তবে গত ২৮ আগস্ট জারি রকা নতুন বিধিমালায় ৬০ শতাংশ নারী কোটা বাদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পোষ্য ও পুরুষ কোটার কথাও উল্লেখ নেই। শুধু মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তান, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীদের জন্য মোট ৭ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছে। বাকি ৯৩ শতাংশ নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে। তবে তার মধ্যে ২০ শতাংশ পদ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক করা প্রার্থীদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।