জুমবাংলা ডেস্ক : হঠাৎ করে পেঁয়াজের বাজার অস্থির। এর দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় বিব্রত ও ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কীভাবে পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ হয়ে গেলো এর কারণ জানতে চেয়েছেন তিনি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের তার দফতরে ডেকে নিয়ে তিনি এই ক্ষোভ ও বিব্রত হওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেন বলে জানা গেছে। যেকোনও কিছুর বিনিময়ে পেঁয়াজের বাজারে সৃষ্ট এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে বলেছেন সরকারপ্রধান। একই সঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের কারে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। বাজারে গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়াতে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও মন্ত্রিপরিষদ সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
ভারত সরকার সম্প্রতি পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে। এই খবর পাওয়া মাত্রই বাজারকে অস্থির করে তোলে দেশের অসাধু ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা। একদিনের ব্যবধানে দাম বাড়িয়ে বাজারভেদে ১৮০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে পেঁয়াজ, যা শুক্রবারও (৮ ডিসেম্বর) ছিল ৯০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে। তবে শনিবার হঠাৎ পেঁয়াজের বাজারে অরাজকতা তৈরি হয়। এখনও যে যেমন পারছে দাম বাড়াচ্ছে।
ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণাকে পুঁজি করে দেশে পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তুলেছে কারা–সেই চক্রকে খুঁজে বের করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যেকোনও কিছুর বিনিময়ে এই সুযোগসন্ধানী সিন্ডিকেটকে খুঁজে বের করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বাজারসহ সর্বত্র গোয়েন্দা নজরদারি বাড়াতে বলেছেন। সোমবার (১১ ডিসেম্বর) মন্ত্রিসভার বৈঠকের আগেই নিজ দফতরে সংশ্লিষ্টদের ডেকে তিনি এসব নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরই পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জ জেলাকে বিশেষ নজরদারিতে আনা হয়েছে। বর্তমানে ওই চার জেলায় অন্তত ছয় লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। দেশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে। কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসক ও ইউএনওরা। ইতোমধ্যে রাজধানীর পাইকারি পেঁয়াজের বাজার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা গাঢাকা দিয়েছেন। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের কাউকে কাউকে শনাক্ত করেছে প্রশাসন। তারাই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করছে বলে বাজারে সংকটের গুজব ছড়িয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ গত সপ্তাহের তুলনায় দ্বিগুণ বা এর চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার মুদির দোকানসহ পাইকারি বাজারেও পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে ক্রেতাদের বিপাকে পড়ার খবর নজরে এসেছে প্রধানমন্ত্রীর। জাতীয় নির্বাচনের আগে বাজারের এমন পরিস্থিতি সরকার তথা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলেছে। এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার তদারকির প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শুক্রবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। শনিবার তা বিক্রি হয়েছে ১৮০-১৯০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০৫-১২৫ টাকা।
এদিকে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ ইতোমধ্যে বাজারে আসা শুরু করেছে। পেঁয়াজ মজুতদারদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তারা। পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে ইতোমধ্যে কিছু মজুতদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং এখনও যারা অচিহ্নিত রয়েছে তাদেরও চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। খাতুনগঞ্জ ও শ্যামবাজারের থরে থরে সাজানো পেঁয়াজ অভিযানের পরে কীভাবে উধাও হয়ে গেলো, কারা সেই পেঁয়াজ লুকিয়ে রেখেছে তাদের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন ভোক্তার ডিজি সফিকুজ্জামান।
পেঁয়াজের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, সম্প্রতি ভারত কোনও ধরনের পূর্বাভাস না দিয়েই হঠাৎ করে বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এতে দেশের বাজারে পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা দেখা দেয়। তবে আতঙ্কিত হয়ে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পেঁয়াজ কিনতে থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ পেঁয়াজের মজুত রয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলতি বছরের জুলাই থেকে এ পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৪ টন পেঁয়াজ, যা গত বছরের এ সময়ের তুলনায় ১ লাখ ৫৫ হাজার ২২৪ টন বেশি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।