বিনোদন ডেস্ক : প্রকৃতি কি মানুষ আর ফুলে কোনো পার্থক্য করে? এই প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়, একেবারেই না। প্রকৃতির কাছে মানুষ যা, ফুলও তা। এই দুনিয়ায় একমাত্র মানুষই ভেদাভেদের প্রবক্তা—এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করা বেশ কঠিন। বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চালানোই যায়, তবে খারিজ করা যায় না। মানুষ যে কেবল অন্য প্রাণী বা উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বিভেদের সূচনা করেছে, তা কিন্তু নয়। বরং নিজের প্রজাতির মধ্যেও চরম বৈষম্যের সৃষ্টি করেছে এবং সেটিকে টিকিয়েও রেখেছে। আর এই বিষয়টিই উঠে এসেছে ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ সিনেমায়।
কিংবদন্তি পরিচালক মার্টিন স্করসিস বানিয়েছেন এই চলচ্চিত্র। পরিচালক ছাড়াও চিত্রনাট্য রচয়িতার তালিকায় আছেন এরিক রথ ও ডেভিড গ্রান। মূলত একটি বই থেকে গল্পটি নেওয়া হয়েছিল। পরে তা চিত্রনাট্যে রূপ পায়। এতে প্রধান প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন, লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, রবার্ট ডি নিরো ও লিলি গ্লাডস্টোন। সিনেমার কাহিনি গড়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা রাজ্যের পটভূমিতে, ১৯২০–এর দশকের সময়কালে। ওই সময় ওকলাহোমা রাজ্যটি ওসেজ নেশন ল্যান্ডের অধীনে ছিল, বেশির ভাগ অধিবাসী ছিলেন ওসেজ ইন্ডিয়ান বা আদিবাসী। হঠাৎ করেই ওই রাজ্যে তেলের খনি আবিষ্কৃত হতে থাকে। আর তাতেই বদলে যায় পুরো অঞ্চলের আর্থ–সামাজিক অবস্থা। সেই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কেমন অমানবিক সংকটের সৃষ্টি করেছিল কিছু মানুষ, তা নিয়েই গল্প এগিয়েছে ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ ছবিটির। কেবল অর্থ ও সম্পদের জন্য ধীরে ধীরে নিকেশ করে দেওয়া হচ্ছিল আদিবাসীদের। কখনো বন্ধু হয়ে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে, আবার কখনো স্বামী হয়ে স্ত্রীর দেহে বিষ ঢুকিয়ে!
এখানে একটি বিষয় উল্লেখযোগ্য যে, ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’ সিনেমায় অনেকাংশে ওসেজ ইন্ডিয়ান নামে পরিচিত আদিবাসীদের প্রতি শ্বেতাঙ্গদের একটি অংশের বিদ্বেষ এবং ষড়যন্ত্রপূর্ণ কার্যকলাপের সত্য ঘটনাকে তুলে আনা হয়েছে। যে আইনি লড়াই দেখানো হয়েছে ছবির শেষাংশজুড়ে, সেটি একটি সত্য মামলা। আদালতে যে রায় হয়েছিল, বা বিভিন্ন চরিত্রের ভবিষ্যতে কী হয়েছিল—সেই সম্পর্কেও বেশ থিয়েট্রিক্যাল মোডে জানিয়ে দেওয়া হয় সিনেমায়। এই অংশটি সত্যিই অন্য এক স্বাদ দেবে দর্শকদের।
ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি নিয়ে আলাদা করে বলার কিছু নেই, স্রেফ অসাধারণ। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরও দারুণ। অভিযোগের কোনো সুযোগই রাখা হয়নি। চলচ্চিত্রটির গল্প যে বহুমাত্রিক, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরে গেছেন। অনুযোগের সুরে শুধু এটুকুই বলা যায় যে, আরেকটু দ্রুত লয়ে কাহিনি এগোলে হয়তো মন্দ হতো না! তবে পরিচালক মার্টিন স্করসিসের আরও সৃষ্টি যারা অবলোকন করেছেন, তাঁরা জানেনই যে, স্করসিসের গল্প বলার ধরনটাই এমন। সুতরাং এ নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করে আসলে লাভ নেই; বরং ধৈর্য্য ধরাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। উহাই তাহার অলস সৌন্দর্য। তবে হ্যাঁ, প্রথমার্ধের তুলনায় কাহিনির দ্বিতীয়ার্ধে গল্পের গড়িয়ে চলার গতি কিছুটা বেশি ছিল। সেটি ভালোই লেগেছে।
এবার আসা যাক অভিনয়ের প্রসঙ্গে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেওয়া সৈন্য হিসেবে ভাগ্যান্বেষণে ওকলাহোমা রাজ্যে আসা ব্যক্তির চরিত্রে ছিলেন লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও। তাঁর চাচার চরিত্রে ছিলেন রবার্ট ডি নিরো। আর এই দুজনের জন্য ডলারের খনি হিসেবে ছিলেন লিলি গ্লাডস্টোন। এই তিনজনই ৯৯.৯৯ শতাংশ নিখুঁত অভিনয় করেছেন। তবে দেখার মতো ছিল ডি ক্যাপ্রিও ও ডি নিরোর যুগলবন্দী। এই দুজন যতবারই একসঙ্গে ক্যামেরার ফ্রেমে আসছিলেন, ততবারই যেন আশপাশের সকল চরিত্রকে ভুলে যেতে হচ্ছিল! এর চেয়ে বরং বলা ভালো যে, এই দুজন অন্যদের ফ্রেম থেকে হটিয়ে দিচ্ছিলেন। ডি ক্যাপ্রিও–ডি নিরোর যুগলবন্দীর একটি উত্তম উদাহরণ হতে পারে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার আগে জেলখানায় এই দুজনের কথোপকথনের দৃশ্যটি। এতটা সাবলীল অভিনয়ের দৃষ্টান্ত সর্বশেষ কবে হলিউড দেখেছে, তা বলা বেশ কঠিন!
গত বছর মুক্তির পর থেকে বক্স অফিসে ভালোই ব্যবসা করেছে ‘কিলারস অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’। বিভিন্ন পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে প্রায় ৪০০ মনোনয়ন পেয়েছে এই ছবি। জিতেছে ১১৩টি পুরস্কার। আর এবারের অস্কারের মঞ্চে মার্টিন স্করসিসের এই সৃষ্টি সেরা চলচ্চিত্রসহ মোট ১০টি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে। অনেক সমালোচকই নিঃশঙ্ক চিত্তে নিচ্ছেন স্করসিস–ডি নিরো–ডি ক্যাপ্রিওর পক্ষ। এই ত্রয়ী শেষ হাসি হাসতে পারে কিনা, তা–ই এখন দেখার।
রেটিং: ৪.৭/৫
পরিচালক: মার্টিন স্করসিস
চিত্রনাট্য: মার্টিন স্করসিস, এরিক রথ ও ডেভিড গ্রান
অভিনয়শিল্পী: লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও, রবার্ট ডি নিরো ও লিলি গ্লাডস্টোন
ভাষা: ইংরেজি
ধরন: ক্রাইম ড্রামা
মুক্তি: ২০ অক্টোবর ২০২৩
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।