জুমবাংলা ডেস্ক : মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে মিথ্যা ও অপতথ্য দিয়ে ধরা খেয়েছেন আওয়ামী পন্থী বাংলাদেশি সাংবাদিক দস্তগীর জাহাঙ্গীর।
বুধবার (১৯ মার্চ) অনুষ্ঠিত ওই সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসকে প্রশ্ন করার সময় ভুয়া তথ্য দেন পতিত স্বৈরাচারের দোসর এই সাংবাদিক।
সম্প্রতি বাংলাদেশে ‘ইসলামি খেলাফতি’ বিভিন্ন গ্রুপের উত্থান হচ্ছে মর্মে তুলসি গ্যাবার্ড যে বক্তব্য দিয়েছিলেন তা বাংলাদেশ সরকার প্রত্যাখ্যান করেছে এবং গ্যাবার্ডের বক্তব্যকে সারবত্তাহীন এবং উদ্দেশ্যমূলক বলে অভিহিত করেছে। বাংলাদেশ সরকারের এই বক্তব্যকে অসত্য প্রমাণের জন্য গতকাল স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশি সাংবাদিক দস্তগীর জাহাঙ্গীর পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসকে একটি প্রশ্ন করেন।
বাংলাদেশে যে বর্তমানে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটছে তার পক্ষে ”প্রমাণ” হিসেবে একটি ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, “মাত্র গতকালই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাল একটি খিলাফতপন্থী মিছিল হয়েছে”। কিন্তু দস্তগীরের দেখানো ছবিটি গতকালের বা তার প্রশ্ন করার আগের দিন ১৮ মার্চের নয়। তিনি যে ছবি দেখিয়েছে সেটি একটি ভিডিও থেকে নেয়া এবং সেই ভিডিওটি ফেসবুকে প্রথম পোস্ট করা হয়েছিল ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট। ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন ফেসবুক পেইজ ও একাউন্ট থেকে ভিডিওটি পোস্ট করে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীরের এমন প্রকাশ্যে মিছিল করা নিয়ে উদ্বেগ জানানো হয়।
ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, হিজবুত তাহরীরের ব্যানারসহ একটি মিছিল ঢাবির কার্জন হল এলাকা থেকে বের হচ্ছে এবং বিভিন্ন স্লোগান দেয়া হচ্ছে।৬ আগস্ট বাংলাদেশ মূলত সরকারবিহীন ছিল এবং ড. ইউনূসের সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে ৮ আগস্ট সন্ধ্যায়। কিন্তু পুরনো ওই ভিডিওকে অবলীলায় ১৯ মার্চ ২০২৫ সালে বসে ‘গতকালের মিছিলের ভিডিও’ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলো।
এএফপির ফ্যাক্ট-চেকিং এডিটর কদর উদ্দিন শিশির তার ফেইসবুক টাইমলাইনে বিষয়টি তুলে ধরে লিখেছেন, আওয়ামী লীগের (এবং ভারতের) ডিসইনফরমেশন ছড়ানোর মেকানিজম বেশ বড় এবং শক্ত। এগুলো নিয়ে সামনের দিনগুলোতে বেশ কিছু কাজ করার আছে। সময় সুযোগ হলে করবো। আপাতত গতকালের একটি উদাহরণ দিই।
এদিকে, বাংলাফ্যাক্ট এর ফেসবুক পেজে একটি ফটো কার্ড শেয়ার করা হয়েছে। এতে লেখা হয়েছে, গত ১৯ মার্চ স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফিংয়ে স্পোকসপার্সন ট্যামি ব্রোসকে সাংবাদিক দস্তগীর জাহাঙ্গীর একটি ছবি দেখিয়ে বলেছেন, ‘মাত্র গতকালই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশাল একটি খিলাফতপন্থী মিছিল হয়েছে’। এটি হিযবুত তাহরীরের সাম্প্রতিক কোনো মিছিলের দৃশ্য নয়। মূলত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে গত ০৬ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিযবুত তাহরীরের মিছিলের সময়ে ধারণকৃত ভিডিও এটি।
অন্যদিকে, ওই সংবাদ সম্মেলনে, বাংলাদেশে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা জানান পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র। একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকার সংখ্যালঘুসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেটিকে স্বাগত জানান তিনি।
বাংলাদেশ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসি গ্যাবার্ডের মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ব্রুস বলেন, এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা কমাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে যুক্তরাষ্ট্র স্বাগত জানায়।
তিনি বলেন, আমরা যেকোনো দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি সহিংসতা বা অসহিষ্ণুতার ঘটনায় নিন্দা জানাই। বাংলাদেশে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই। এটাই আমরা পর্যবেক্ষণ করছি এবং প্রত্যাশাও করি, যা অব্যাহত থাকবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।