রংপুর বিভাগীয় সমাবেশে যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

মোহাম্মদ নুর আলম সিদ্দিকী মানু : আগামী বুধবার (২ আগস্ট) রংপুরে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় মহাসমাবেশে ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকার ২৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং নতুন করে আরও পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা দেওয়ার আগে এসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রংপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, কাজ শেষে প্রস্তুত হওয়া শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিংপুল, পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ের জলাবদ্ধতা নিরসন শীর্ষক প্রকল্প, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, পালিচড়া স্টেডিয়াম, নলেয়া নদী পুনঃখনন, আলাইকুমারী নদী পুনঃখনন, পীরগাছা চৌধুরানী জিসি হতে শঠিবাড়ি আরএইডি ৫৭৯ মি. সড়ক (পীরগাছা অংশ), পীরগঞ্জ ভেন্ডাবাড়ি হতে খালাশপীর জিসি সড়ক পুনর্নির্মাণ, কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর জিসি হতে পাওটানা জিসি ভায়া ভায়ারহাট সড়ক পুনর্নির্মাণ, মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট-পীরগাছা ভায়া বালারহাট সড়কের গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর উপর ৯৬ মিটার পিএসসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট জিসি-কাকিনা আরএইডি সড়কে ৪০ মি. আরসিসি ভেরিয়েবল ডেপথ গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, কাউনিয়া উপজেলায় তিনতলা পল্লীমারী সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম ফ্লাড শেল্টার নির্মাণ, রংপুর মেডিকেল কলেজ মাল্টিপারপাস ভবন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় ভবন, মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ১০ শয্যাবিশিষ্ট বেগম রোকেয়া মর্ডান হাসপাতাল, হেলেঞ্চা ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, খালাশপীরে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, মাদারগঞ্জে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রাসফন্ট প্লান্ট ও স্টোর ইয়ার্ড নির্মাণ, ভারারদহ বিল, পাটোয়া কামরী বিল পুনঃখনন, চিতলী বিল পুনঃখনন, রংপুর সিটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, নৈমুন্না বিল পুনঃখনন এর উদ্বোধন করবেন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার নির্মাণ, রংপুর জেলায় বিটাক কেন্দ্র স্থাপন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অফিস ভবন এবং লেডিস হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

এছাড়াও, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, পীরগঞ্জ খালাশপীর কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, রংপুর মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা, শ্যামপুর চিনিকলসহ বিভাগের বন্ধ চিনিকলগুলো পুনরায় চালু, বিশেষ মেগা প্রকল্প, অর্থনৈতিক জোনসহ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কিছু দিবেন এমনটা আশা করছেন রংপুরবাসী। তারা মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে রংপুর অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষিনির্ভর ভারী শিল্প স্থাপন, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা, চিকিৎসা, খেলাধুলার সুযোগ তৈরি, শ্যামাসুন্দরী খাল খনন, শিল্পকারখানা স্থাপনসহ নানান স্বপ্ন পূরণের ঘোষণা আসবে।

রংপুরের উন্নয়ন বিশ্লেষকরা প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে বলছেন, রংপুরের মহাসমাবেশ থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্হাপন, রংপুরে আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ ও ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ দ্রুত গ্যাস সংযোগ দিয়ে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা এলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের পক্ষে একটি বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। একইসঙ্গে তরুণ প্রজন্মের কাছে রংপুরের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা হয়ে উঠবেন মাইলফলক উদাহরণ।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উন্নয়ন বিশ্লেষক বলেন, রংপুর ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দিকে তাকালে রংপুর বিভাগের উন্নয়ন বৈষম্যটা ফুটে উঠে। এই অঞ্চলের মানুষের জন্য উন্নয়ন বরাদ্দ কম,কোনো মেগা প্রকল্প নেই। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর আগমনে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগকে এগিয়ে নিতে আরও বেশি উন্নয়নের ঘোষণা আসুক আমরা এটাই প্রত্যাসা করছি। আমরা বুকভরা আশা নিয়ে আছি প্রধানমন্ত্রী এসে উত্তরের টেকসই উন্নয়নে বড় ধরনের ঘোষণার প্রত্যাশা দিবেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের সুপারিশ ও চাওয়া থাকবে- রংপুর বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড গঠন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার জন্য অর্থ বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন, রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বন্ধ চিনিকল চালু ও চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অর্থ বরাদ্দ, কর, ভ্যাট, শুল্ক,আলাদা শিল্প ও ঋণনীতি ঘোষণা, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ওয়াসা গঠন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ, কর্মসংস্থানভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে রংপুরে দারিদ্র দূরীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ।

এর আগে ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এক জনসভায় জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ❛রংপুরের সার্বিক উন্নয়নের সকল দায়িত্ব আমার কাঁধে নিলাম। পুত্রবধূ হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব তো আছে❜। এক যুগ পরে এসে বলাই যায়, সেদিনের তার সেই ঘোষণা যে নিতান্তই কথার কথা ছিল না তা ২আগস্ট মহাসমাবেশ থেকে প্রমাণিত হবে।

এদিকে রংপুরের মহাসমাবেশকে ঘিরে উজ্জীবিত রংপুর বিভাগ আওয়ামী লীগ ও তাদের সকল সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থকরা। আর এই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়েই তৃণমূলকে শক্তিশালী করে বিরোধী জোটের আন্দোলনের মাঠে মোকাবিলা ও রংপুর বিভাগকে আওয়ামী লীগের ঘাটিতে রূপান্তর করার স্বপ্ন দেখছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগন।