জুমবাংলা ডেস্ক : জায়গা স্বল্পতার কারণে বাংলাদেশে ভাসমান সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি জোট। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি মনে করে পরিবেশ রক্ষায় বিকল্প জ্বালানি হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ হওয়া উচিত বিশে^র প্রথম পছন্দ। সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনে খরচ কমানোর জন্য গবেষণা চলছে। কর্মকর্তারা আশা করেন খুব শীঘ্রই এই খরচ সকলের হাতের নাগালে চলে আসবে। এজন্য সৌরশক্তি জোট কাজ করে চলেছে। ভারতে সফররত একদল বাংলাদেশী সাংবাদিকের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি জোটের কর্মকর্তারা এসব কথা বলেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন সংগঠনের চিফ অব অপারেশন জসুয়া ওয়েকলিফ এবং প্রকল্প প্রধান রমেশ কুমার।
নয়াদিল্লি থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে গুড়গ্রামে ভারতীয় সৌরশক্তি কার্যালয়ে দুটি ফ্লোর নিয়ে চলছে আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি জোটের কার্যালয়। খুব শীঘ্রই তারা নিজস্ব ভবনে চলে যাবে। সারা বিশে^ পরিবেশবান্ধব জ¦ালানি উৎপাদনে উৎসাহিত করার জন্য প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানের সদস্য সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১১৬টি। বাংলাদেশ এই জোটের সদস্য হয়েছে ২০২০ সালে। বর্তমানে বাংলাদেশ এই জোটের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছে। জোটের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের অগ্রগতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়। এখানে বলা হয়, এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ২২ মোগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বাংলাদেশে ৫০ লাখ লোক বর্তমানে সোলার বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। ভিশন ’৪১-এর কথা উল্লেখ করে জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়, এজন্য তারা জোটের সঙ্গে ‘পারস্পেক্টিভ প্ল্যান’ বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছে। বর্তমানে বিশে^ সাড়ে ৯ গিগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এটি বৃদ্ধি পাচ্ছে খুব দ্রুত। ভারতে ৯ শতাংশ মানুষ এখন সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে।
২০১১ সালে প্রথমবার ভারত সরকারের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের ১১ জন সাংবাদিকের সঙ্গে আমিও ভারত সফর করেছিলাম। সেই সময় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বলতে কিছু ইস্যু ঘুরে ফিরেই আসত। এই যেমন দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা, তিন বিঘা করিডর, পানির হিস্যা, সীমান্তে হত্যা, টিপাইমুখে বাঁধ, এলওসি, বিদ্যুৎ আমদানি, ট্রানজিট ইত্যাদি। গত এক যুগে এসব ইস্যু অনেকই সমাধান হয়েছে। এখন বার্নিং ইস্যু বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন এবং পশ্চিমাদের সরকারবিরোধী অবস্থানে ভারতের ভূমিকা কি হবে। বাংলাদেশের মানুষ এখনো বিশ^াস করে ১১ সালের মতো ভারত যদি বাংলাদেশের পাশে থাকে তবে অনেক সংকটই সমাধান হয়ে যায়।
ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশন থেকে যখন ২০১১ সালের মতো আবারও আমাকে ভারত সরকারের আমন্ত্রণের কথা জানানো হলো, তখন প্রত্যাখ্যান করতে পারিনি। এর মূল কারণ বাংলাদেশ এই মুহূর্তে ভারতের অবস্থান কী, তা জানার আগ্রহ। আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এটি খুবই স্পষ্ট, ভারত শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গেই কমফোর্ট অনুভব করছে। এর বহুমুখী কারণও রয়েছে। এগুলো হয়তো পরে কোনো লেখায় আলোচনা করা যাবে।
অরিন্দম বাগচী ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের খুবই প্রতিভাবান কর্মকর্তা। বাঙালি এই কর্মকর্তার বাঙালিপ্রীতি থাকাই স্বাভাবিক। সুযোগ পেলেই তিনি বাংলায় কথা বলতে শুরু করেন এবং এতে বেশ গর্ব অনুভবও করেন। একই সঙ্গে তিনি শতভাগ প্রফেশনাল। আনুষ্ঠানিক আলোচনায় কিন্তু বাংলা বা বাঙালিপ্রীতি কোনোভাবেই প্রকাশ করতে রাজি নন। ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ২৮ জন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি শতভাগ জবাব দেন পেশার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে। এর মধ্যেও পেশাবজীবী সাংবাদিক হিসাবে ধারণা করতে পারি, এবার ভারতের ভূমিকা ২০০১ সাল কিংবা ২০০৭ সালের মতো নয়। এই দুই সালের অভিজ্ঞতা থেকে তারা হয়তো বুঝতে পেরেছেন কি তাদের ভুল ছিল।
বাংলাদেশ নিয়ে তাদের ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত। অরিন্দম বাগচী বদলি হয়ে গেছেন। তার পরবর্তী কর্মস্থল হবে অন্য কোথাও। তিনি যতই কূটনৈতিক ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করুন না কেন তার বাঙালিপ্রীতি বুঝতে কারও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ভারতীয় কর্মকর্তারা সরকারের নীতির বাইরে একটি কথাও বলেন না এটি সবাই জানেন।
আমাদের সফরসঙ্গী হয়েছেন ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের প্রথম সেক্রেটারি প্রেস ও পলিটিক্স শীলাদিত্ত হালদার। অমায়িক বাঙালির ছেলে হয়তো আর বেশিদিন বংলাদেশে কাজ করার সুযোগ পাবেন না। তিনিও চলে যাবেন সরকারের অন্য কোনো দায়িত্ব পালন করতে। তার সঙ্গেও দফায় দফায় কথা বলে বোঝা গেছে, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের অবস্থান।
দিল্লি সফরের দ্বিতীয় দিন আন্তর্জাতিক সৌরশক্তি জোটের কার্যালয় ছাড়াও সাংবাদিকদের ঘুরিয়ে দেখানো হয় দিল্লি ন্যাশনাল মিউজিয়াম এবং প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা। ন্যাশনাল মিউজিয়ামে মহেঞ্জোদারো সভ্যতা থেকে শুরু করে ভারতবর্ষের সকল সময়ের অসংখ্য সংগ্রহ দর্শকদের দৃষ্টি কাড়বে। আমাদের সময় ছিল খুবই কম। তাড়াতাড়ি দেখা শেষ করতে হয়েছে। সারা দিন সময় নিয়ে কেউ দেখতে চাইলে খুঁজে পাবে এই উপমহাদেশের সভ্যতার ইতিহাস। প্রধানমন্ত্রীর সংগ্রহশালা এক কথায় দারুণ। ভারতের সংবিধান রচনা থেকে শুরু প্রথমে ভারত প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি ধারাবাহিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর বাসভবনে তার মৃত্যুর পর এটিকে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়। নেহেরু এবং ইন্দিরা গান্ধীর বেডরুম, ড্রইংরুম, অফিস কক্ষ আজো অপরিবর্তিত রয়েছে। নেহেরুর বাড়ির পেছনে বর্তমান সরকার নির্মাণ করেছে আধুনিক সংগ্রহশালা। নেহেরু থেকে শুরু করে মনমোহন সিং পর্যন্ত ভারতের সকল প্রধানমন্ত্রীর কিছু না কিছু স্মৃতি, বিদেশ থেকে পাওয়া উপহার এবং ইতিহাস সেখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে যত্নের সঙ্গে। বাংলাদেশের মক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের ভূমিকা এবং নানা কর্মকাণ্ডের দশ মিনিটের একটি ডকুমেন্টারিও দেখানো হচ্ছে দর্শকদের। নরেন্দ্র মোদি যেহেতু এখনো প্রধানমন্ত্রী রয়েছেন, তার কোনো জিনিসপত্র ওখানে ঠাঁই দেওয়া হয়নি। সংগ্রহশালার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তার ব্যবহৃত সব কিছুই সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি যখন প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না তখন এগুলো সংগ্রহশালায় স্থান পাবে। নরেন্দ্র মোদির শাসনামলে তার ব্যক্তিগত উদ্যোগেই এই আধুনিক সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ‘২২ সালে উদ্বোধন হয়েছে এই সংগ্রহশালাটি। এটি পরিদর্শনে মনে হয়েছে এর প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়া রাখা হয়েছে সকল রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধারা হয়েছে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নান্দনিক সৌন্দর্যের এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহশালা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।