জুমবাংলা ডেস্ক : গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর চরে পরিত্যক্ত জায়গায় শীতকালীন শাক-সবজি আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চরের নারীরা। সবজি চাষ করে তারা তাদের জীবন-জীবিকা নির্ধারন করছেন। নিজেদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর পাশপাশি বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারছেন।
জানা যায়, ফুলছড়ি উপজেলার এরেন্ডবাড়ী, ফজলুপুর, ফুলছড়ি, উড়িয়া, উদাখালী, কঞ্চিপাড়া ও গজারিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৬৫টি দ্বীপ চর রয়েছে। এইসব চারের নারীরা সবজির পাশাপাশি উন্নত জাতের ভেঁড়া পালন করেও স্বচ্ছল হওয়ার চেষ্টা করছেন। চরের পরিত্যাক্ত জমি ও বাড়ির আশেপাশের জায়গায় শীতকালীন ফসল হিসেবে লাউ, মাসকলাই, সরিষা, মুগডাল, ফুলকপি, শিম, পালং শাক, লাল শাক, পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, ধনে পাতা, ঢেঁরশসহ নানা জাতের শাক-সবজি চাষ করেছেন তারা। তাদের উৎপাদিত সবজি উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে জেলায়।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চরের প্রায় ২২ হাজার পরিবারের নারীরা এ ধরণের সবজি চাষের সাথে জড়িত।
নদীভাঙন ও বন্যাপ্রবন এইসব চরের মানুষ সারাবছর অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে দিন পার করেন। সরকারি ও বেসরকারি অনেক সংস্থার প্রকল্পের মাধ্যমে প্রায় ৩৫টি চরের মানুষ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বাড়ি ও রাস্তার পাশে পরিত্যাক্ত স্থানে বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজি আবাদ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন চরের নারীরা। চরাঞ্চলের উৎপাদিত ফসল ওই অঞ্চলের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রিও হচ্ছে।
কাবিলপুরের সোনাভান বেগম বলেন, বাড়িত এগলা (সবজি) আবাদ করি দু’পয়সা রোজগার হবা নচে। তাক দিয়্যা সংসারের টুকিটাকি খরচ, ছোলগুলার নেহাপড়ার খরচও চলবার নচে।
এরেন্ডবাড়ী ইউনিয়নের আলগার চর গ্রামের নারী কৃষক আকলিমা বেগম বলেন, আমরা কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়ির আশেপাশে ও পড়ে থাকা জমিতে লাউসহ বিভিন্ন সবজি চাষ করছি। জমি থেকে শাক-সবজি তুলে নিজেরাও খাই, আবার বিক্রি করে আয়ও করতে পারি। তিনি আরো বলেন, আমার স্বামী মানুষের জমিতে কাজ করে। সবজি চাষ করে যা আয় হয় তার পুরোটাই সংসারে খরচ হয়।
ফজলুপুরের খাটিয়ামারি গ্রামের কৃষাণী শাফলা বেগমের স্বামী আফজাল হোসেন বলেন, আমারা বস্তার মধ্যে দো-আশ মাটি ভরে ওই মাটির মাঝ খানে দু‘টা লাউয়ের বীজ রোপন করি। তারপর গাছের ডাল দিয়ে মাচা বানিয়ে বাঁশ দিয়ে সেই গাছ কে সেই মাচায় তুলে দেই। এখন পর্যন্ত ৫ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। আশা কারছি আরো ১ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারবো।
ফুলছড়ি ইউনিয়নের চর পিপুলিয়া গ্রামের ময়নুব বেগম বলেন, স্বামী অন্যের জমিতে কাজ করে যা টাকা পায় তাতে সংসার ঠিক মতো চলে না। তাই প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়ির আশেপাশে পড়ে থাকা জমিতে পেঁপের গাছ, শিম, পালং শাক, লাল শাক, মরিচ, ধনিয়া পাতা, ঢেঁরশ আবাদ করছি। এতে আমরাও সবজি খেতে পারছি আর বাজারে বিক্রি করে আয় করতে পারছি। এখন আমাদের সংসারের অভাব কমে গেছে।
ফুলছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: মিন্টু মিয়া বলেন, চলতি মৌসুমে ফুলছড়ি উপজেলায় ৪২০ হেক্টর জমিতে সবজি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলে প্রায় ২২ হাজার পরিবার বতসবাড়ির পতিত জমিতে সবজি আবাদ করেছে। চরের ৮০ ভাগ নারীই সবজি চাষের সাথে জড়িত। আমরা তাদের বিভিন্ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের মাধ্যমে তাদের সহযোগীতা করছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: বেলাল উদ্দিন বলেন, আগে চরের অনেক জমি পড়ে থাকতো। সেখানে কোনো ফসল বা সবজির আবাদ হতো না। বর্তমানে চরাঞ্চলে সবজির আবাদ হচ্ছে। সেখানকার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে বাজারে সবিজ ভালো দামে বিক্রি করতে পারছেন। আমরা তাদের সব ধরনের সহযোগীতা করছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।