আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গত ৮ ডিসেম্বর থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। ঘোষণা অনুসারে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বহাল থাকবে এ নিষেধাজ্ঞা। আর তারই প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে গুজরাট ও মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ উৎপাদনকারী কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।
গুজরাটজুড়ে টানা এক সপ্তাহ ধরে তাদের এগ্রিকালচারাল প্রডিউস মার্কেট কমিটিগুলো (এপিএমসি) তাদের পণ্যের নিলাম বন্ধ রেখেছে। সেই সাথে বিভিন্ন জাতীয় সড়কগুলোতে দফায় দফায় অবরোধ করে চলেছে। যার ফলে দেশটিতে পেঁয়াজের দামে প্রভাব পড়েছে।
শুক্রবার গুজরাটের গোন্ডালের কৃষকরা ২৭ নম্বর জাতীয় সড়কে পেঁয়াজ ফেলে রেখে অবরোধে সামিল হয়। তারা পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার রাজ্যটির গোন্ডালের এপিএমসি মান্ডি গেটও অবরুদ্ধ করে রাখে। ফলে সাময়িকভাবে ইয়ার্ডে যানবাহন চলাচল স্তব্ধ হয়ে পড়ে। পেঁয়াজসহ অন্য পণ্যের নিলামেও ব্যাঘাত ঘটে। এ সময় বিক্ষোভকারীদের থামাতে পুলিশকে ডাকতে হয়। বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা স্লোগান দিতে থাকে। পুলিশ এসে চার বিক্ষোভকারী কৃষককে আটক করে নিয়ে যায়, যদিও পরে সন্ধ্যাবেলার দিকে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
গোন্ডাল এপিএমসি সচিব তরুণ পাচানি বলেন, ‘কৃষকরা সাময়িকভাবে এপিএমসির গেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়। যদিও পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পেঁয়াজকে বাদ দিয়ে, কৃষকরা আমাদের এখানে অন্য যেসব পণ্য নিয়ে আসছে তা আমরা নিলাম করতেই পারি।’
বৃহস্পতিবারও পেঁয়াজ ফেলে ২৭ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে কৃষকরা। সেইসাথে এপিএমসি প্রশাসনকে পেঁয়াজ নিলাম পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে।
রাজ্যটির ধোরাজিতে ঠিক একইভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে আসছে সেখানকার পেঁয়াজ চাষিরা। পাশাপাশি এপিএমসিগুলোকে পেঁয়াজের বেচাকেনা স্থগিত রাখতে বাধ্য করেছে।
এদিকে সরকার তার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করলে নিজের জীবন বলি দেবেন বলে শুক্রবারই হুমকি দেন রাজকোটের ধোরাজির কৃষক বিমল ওরফে লালা বাঘাসিয়া। এরপরই বিমলসহ তিন বিক্ষোভকারী কৃষককে গোন্ডাল শহরের এপিএমসি মান্ডির সামনে থেকে বি ডিভিশন থানার পুলিশ আটক করে।
জুনাগড় জেলার ভিসাভাদরে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এমনকি রাজকোট এপিএমসি মান্ডিতেও পেঁয়াজের নিলাম স্থগিত ছিল। যদিও ইতোমধ্যে পেঁয়াজের আরেকটি অন্যতম বড় পাইকারি বাজার ভাবনগর জেলার মহুভা এপিএমসিতে পেঁয়াজের বেচাকেনা শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে মহুভা এপিমসি-এর সেক্রেটারি বিশাল পাঁচানি বলেন, চলমান বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের এপিএমসি চত্বরে পুলিশ মোতায়েন করার কথা বলেছিলাম। কারণ, কিছু কৃষক এখনও তাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে এবং আমাদের এপিএমসি ইয়ার্ডের গেট বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল কিন্তু আমরা পুনরায় পেঁয়াজ নিলাম শুরু করার জন্য তাদের রাজি করিয়েছিলাম।
পেঁয়াজ চাষিদের এই টানা বিক্ষোভের ফলে পাইকারি ও খুচরো বাজারে পেঁয়াজের দাম অনেকটা পড়ে গেছে বলে জানালেন পাঁচানি। পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারির আগ পর্যন্ত খুচরো বাজারে এর দাম ছিল কোথাও ৭০, কোথাও ৮০ রুপি। এরপরই পেঁয়াজের দামে লাগাম টানতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে কেন্দ্রীয় সরকার।
তিনি বলেন, ‘রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার আগে, এপিএমসি মান্ডিতে পাইকারি বাজারে কুইন্টাল প্রতি পেঁয়াজের গড় দাম ছিল প্রায় ৪০০০ রুপি, কিন্তু ৮ ডিসেম্বর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পর সেই দাম কুইন্টাল প্রতি ২৫০০ রুপিতে নেমে আসে।’
ব্যবসায়ীদের অভিমত, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ৮ ডিসেম্বর থেকে হঠাৎ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার আগেই ১ হাজারের বেশি পেঁয়াজ ভর্তি ট্রাক বাংলাদেশের উদ্দেশে পাড়ি দেয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা জারির পর সেই পেঁয়াজ ভর্তি টাক যখন দেশটির স্থানীয় বাজারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তার দাম অনেকটাই পড়ে যায়।
ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন মহুভা এপিএমসি’এর কর্মকর্তা প্যাটেল।
পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার কৃষকরাও বিক্ষোভ দেখায়। অবরোধ করা হয় মুম্বাই-আগ্রা মহাসড়ক। সেই সাথে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণা দেয় বিক্ষোপকারী কৃষকরা। পূর্বঘোষণা ছাড়াই এভাবে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার ঘটনা ক্ষুব্ধ করেছে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও রপ্তানিকারকদের। এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল করা, যদিও কৃষকদের যুক্তি কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে তাদের বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। কারণ, অমৌসুমি বৃষ্টি ও খরায় নাসিকের পেঁয়াজ উৎপাদন ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে অভিমত পেঁয়াজ উৎপাদনের সাথে সংশ্লিষ্ট মহলের।
এরই মধ্যে বিক্ষোভকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও মহারাষ্ট্রের এনসিপি দলের সভাপতি শারদ পাওয়ার। দুই দিন আগেই নাসিকের চাঁদোয়ারে কৃষকদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার দাবি জানান তিনি। তার দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের কঠোর পরিশ্রমকে উপেক্ষা করছে। চাষিদের মধ্যে ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে শারদ পাওয়ার বলেন, দিল্লিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবেন এবং চলমান সংসদ অধিবেশনে বিষয়টি উত্থাপন করবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।