জুমবাংলা ডেস্ক: বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বত্র, সর্বাবস্থায় হিজাব ও নিকাব পরার অধিকার এবং ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে নামাজের জায়গার দাবিতে ‘Protest cell against hijabophobia in DU’–ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) ঢাবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা হিজাব পরিধানকারী ছাত্রীদের সমস্যার কথা তুলে ধরে মোট দুটি দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হলো-
১.বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বত্র, সর্বাবস্থায় হিজাব ও নিকাব পরার অধিকার নিশ্চিত করা।
২.ছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে নামাজের জায়গার ব্যবস্থা করা।
এই দুটি দাবি তুলে ধরে তারা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব নিকাব পরার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকাব পরা অধিকাংশ ছাত্রী তার ছাত্রত্ব থাকাকালীন কখনো না কখনো অপমান, টিজিং, হেনস্তা অথবা বুলিংয়ের শিকার হয়। ক্লাসমেট, বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র, কর্মকর্তা-কর্মচারী এমনকি ক্লাসরুমে শিক্ষকরা পর্যন্ত হিজাব ও নিকাব পরা ছাত্রীর প্রতি বিরূপ আচরণ করে। কেউ বিদ্রুপ করে, কেউ বাজে মন্তব্য করে। এমনকি অনেক শিক্ষক নিকাব পরার কারণে ক্লাস থেকে বেরও করে দেন। হিজাব ও নিকাবের প্রতি একটা বিদ্বেষ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। যা বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত হয়।
তারা বলেন, ‘আমরা অনেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে অভিযোগ শুনেছি, পরীক্ষার হল ও ভাইভাতে নিকাব খুলতে বাধ্য করা হয়। আমরা বলতে চাই, একটা মেয়ে নিকাবকে তার ধর্মীয় আদেশ মনে করে। তাকে নিকাব খুলতে বাধ্য করাটা অন্যায়।
এসময় তারা হিজাব/নিকাব পরিধানকারীদের সমস্যার একটি জরিপ উত্থাপন করেন। জরিপে অংশ নেয়া ২২১ জন ছাত্রীর ১৪৮ জন হিজাব/নিকাবের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ও হলে বৈষম্যের সম্মুখীন হন। অর্থাৎ প্রতি ৩ জন পর্দানশীল ছাত্রীর একজন কোনো না কোনো ভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। নামাজের সুব্যবস্থার জরিপে বলা হয়, প্রতি তিনজন ছাত্রীর দুইজনই জানাচ্ছেন তাদের ডিপার্টমেন্টে নামাযের সুব্যবস্থা নেই। পাশাপাশি অনেক হলেও এই সমস্যা রয়েছে বলে জানানো হয়।
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় নামাজের জায়গার সংকট ও হিজাবের কারণে হেনস্থার শিকার হওয়ার অনেক ঘটনা বর্ণনা করেন।
তারা বলেন, প্রথম বর্ষের ভাইভা রুমে ঢোকার সাথে সাথেই ভাইভা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিজাব পরা এক শিক্ষার্থীকে বলে উঠলেন, বোরকা নিকাব করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসছো কেন? মাদ্রাসায় পড়তে পারো না? বোরকা পরলে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার শখ হয় কেন? তারপর একপ্রকার নিকাব খুলতে বাধ্য করা হয়।
আবার একটি হলের ভাইভাতে এক ম্যাম বলেছিলেন, জঙ্গি দলের সাথে কানেকশন আছে নাকি? হলে কিন্তু এগুলো করা যাবে না, ঝামেলা হবে পরে। এগুলো ছাড়াও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে বলে জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো শিক্ষক যাতে কোনো ছাত্রীকে হিজাব খুলতে বাধ্য না করে এই দাবি জানান। তারা বলেন, এর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাতে করে একজন ছাত্রীকে তার চেহারা দেখানো ছাড়াও বৈজ্ঞানিকভাবে সনাক্ত করা যায়। আর যদি সেটি সম্ভব না হয় তবে যেন অন্তত একজন শিক্ষিকা দ্বারা সেই ছাত্রীকে সনাক্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার, অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তাসফিহা তাহসিন ইমা, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী নাফিসা সিদ্দিকা, নিশাত তামান্নাসহ অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য গত দুই মাস ধরে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হিজাবোফোবিয়া নিয়ে কাজ করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীর সাক্ষাৎকার, অনলাইনে-অফলাইনে তাদের সাথে মতবিনিময় করে তারা হিজাব পরিধানকারী মেয়েদের সমস্যার জরিপ পরিচালনা করেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।