জুমবাংলা ডেস্ক : সরকার পতনের পর থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি ও বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দখল হওয়া ব্যাংকের মালিকানা পুনরুদ্ধার, অর্থপাচারে সহায়তাকারীদের অপসারণ ও অবৈধ নিয়োগ বাতিল, চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে ব্যাংকে-ব্যাংকে বিক্ষোভ চলছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে গত বুধবার নজিরবিহীন বিক্ষোভের পর বৃহস্পতিবারও গভর্নরের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ। এছাড়া আরও কয়েকটি ব্যাংকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে অভিযোগ করার মতো জায়গা পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো।
এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) দখলে নিয়েছেন মেজর (অব.) রেজাউল হক। আগে তিনিই ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এদিকে আগের মালিকানা ফিরে পাওয়ার জন্য গতকাল বেসরকারি খাতের আইএফআইসি, এসআইবিএল, ওয়ান, ইউসিবি, বাংলাদেশ কমার্সসহ কয়েকটি ব্যাংকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। বেসরকরি খাতের ইসলামী ব্যাংকে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকে বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তারা বিক্ষোভ করেছেন। গুঞ্জন আছে, এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন অন্যান্য ব্যাংকগুলোও আগের মালিকানায় থাকা ব্যক্তিরা দখল করতে পারেন। বিশেষ করে ইউনিয়ন ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক যে কোন সময় দখল হতে পারে। আর শঙ্কার মধ্যে আছে- ইসলামী ধারার এক্সিম ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড কমাশির্য়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) কথিত চেয়ারম্যান রুকমিলা জামান ও স্বামী সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের স্বেচ্ছাচারিতা, লুটপাট ও বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ করার জন্য পরিচালনা পরিষদ পুনঃগঠন করে পরিবারতন্ত্র ভেঙ্গে দিয়ে ব্যাংকে করপোরেট সংস্কৃতি চালু করার দাবি জানিয়েছেন শেয়ারহোল্ডাররা। তারা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে এ আবেদন জানান। একই সঙ্গে শেয়ারহোল্ডাররা স্বৈরাচার সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী দুর্নীতিবাজ, অবৈধভাবে লন্ডনে ইউসিবি ব্যাংকের ১২ হাজার কোটি টাকা পাচারকারী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ ও তার পরিবার থেকে ব্যাংককে মুক্ত করে লুটেরা প্রতিহত করার দাবিতে ব্যাংকের সামনে মানববন্ধ পালন করেছে। এদিকে ব্যাংক খাতে অস্থিরতার সুযোগ কাজে লাগাতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী এবং নানা অনিয়মে ব্যাংক থেকে বিতারিত একটি গ্রুপও। আবার মানি লন্ড্রারিংয়ের সুযোগ নিয়ে প্রবাসীদের ছদ্মনামে বা বেনামী শেয়ারহোল্ডাররাও সক্রিয় হয়েছেন।
এদিকে ইসলামী ব্যাংকে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়োগ বাতিলের দাবিতে আন্দোলন বৃহস্পতিবারও অব্যাহত ছিল। এই নির্বাহীরা এস আলম গ্রুপের নির্দেশে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত বলে গত মঙ্গলবার দাবি করেন কর্মকর্তারা। এই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার এস আলমের আমলে পদোন্নতি পাওয়া অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) কায়সার আলী ব্যাংকে এলে তাকে জোর করে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। এছাড়া এখনো যোগদান করেননি বিতর্কিত ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আকিজ উদ্দিন ও মিফতা উদ্দিন। অবশ্য ব্যাংকে না এসেই এই দু’জন মিলে আগের মতো বেনামি ঋণের মাধ্যমে অর্থ তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল এস আলমের জন্য। যদিও বেনামি এই ঋণের টাকা উত্তোলন ঠেকিয়ে দিয়েছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি। গত মঙ্গলবার ব্যাংক খোলার প্রথম দিনেই কর্মকর্তাদের তৎপরতায় ৮৮৯ কোটি টাকা উত্তোলন আটকে যায়।
এদিকে, বৃহস্পতিবারও অফিসে আসেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি কোথায় আছেন তাও জানেন না কর্মকর্তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।