লাইফস্টাইল ডেস্ক : জাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম। প্রত্যেক সম্পদশালী ব্যক্তির পক্ষ থেকে জাকাত আদায় করা ফরজ। দ্বিতীয় হিজরি সন থেকে জাকাত ফরজ হয়েছে। জাকাতের আভিধানিক অর্থ বর্ধিত ও পবিত্র। জাকাত ও উশুর দেওয়ার ফলে সম্পদে বরকত হয় ও দোষ-ত্রুটিমুক্ত হয়ে পবিত্র হয়। জাকাত না দেওয়া কুফুরির শামিল। পবিত্র কোরআনে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে ৮২ আয়াতে জাকাতের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জাকাত : গুরুত্ব ও মাসায়েলআল কোরআনের বাণী : নিশ্চয় যারা আল্লাহতায়ালার ওপর ইমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে, নামাজ প্রতিষ্ঠা করেছে, জাকাত আদায় করেছে, তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা সেদিন চিন্তিতও হবে না। (সুরা আল বাকারা, আয়াত-২৭৭) হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে- হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াজ (রা.)-কে ইয়ামান প্রদেশে (গভর্নররূপে) প্রেরণ করেছিলেন। আল্লাহতায়ালা তাঁদের ওপর তাঁদের মালের মধ্যে জাকাত নির্ধারণ করেছেন, তা তাঁদের সম্পদশালীদের কাছ থেকে আদায় করে গরিবদের মাঝে বিতরণ করা হবে। (বুখারি, মুসলিম)। জাকাত অস্বীকারকারীদের বিষয়ে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বলেছিলেন, আল্লাহর শপথ! যে ব্যক্তি নামাজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করবে আমি তার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হব। (বুখারি)।
জাকাত অনাদায়ে শাস্তি :
আর যারা সোনা ও রুপা পুঞ্জীভূত করে রাখে আর তা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে না, তুমি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সংবাদ দাও। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা গরম করা হবে, অতঃপর তা দ্বারা তাদের কপালে, পার্শ্বে এবং পিঠে সেঁক দেওয়া হবে। (আর বলা হবে) ‘এটা তা-ই, যা তোমরা নিজদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ কর’। [সুরা আত-তাওবাহ, আয়াত : ৩৫, ৩৬]
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যাকে আল্লাহতায়ালা ধনসম্পদ দান করেছেন কিন্তু সে এ মালের জাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দান করে তার গলায় মালা পরিয়ে দেওয়া হবে, সাপটি তার মুখের দুই পাশ কামড় দিয়ে বলতে থাকবে- আমি তোমার সম্পদ আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ। (বুখারি)।
তারপর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াত করেন, ‘আর আল্লাহ যাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তা নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন ধারণা না করে যে তা তাদের জন্য কল্যাণকর, বরং তা তাদের জন্য অকল্যাণকর। যা নিয়ে তারা কৃপণতা করেছিল, কিয়ামত দিবসে তা দিয়ে তাদের বেড়ি পরানো হবে। আর আসমানগুলোও জমিনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই জন্য। আর তোমরা যা আমল কর সে ব্যাপারে আল্লাহ সম্যক জ্ঞাত।’ [সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০]।
জাকাত আদায়ের খাতগুলো : নিশ্চয়ই সদকা (জাকাত) হচ্ছে- ১. ফকির, ২. মিসকিনদের জন্য, ৩. এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, ৪. আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) ইসলামের জন্য আকৃষ্ট, নও মুসলিম, ৫. দাস আজাদ করার ক্ষেত্রে (ইসলামের প্রথম যুগে যখন দাসপ্রথা ছিল), ৬. ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, ৭. আল্লাহর রাস্তায় এবং ৮. মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা তওবা, আয়াত-৬০)।
আত্মীয়স্বজনকে জাকাত দেওয়া যাবে কিনা? মূলত সহোদর ভাইবোন, ফুফু-ফুফা, খালা-খালু, মামা-মামি যেহেতু উসুল বা ফুরু অর্থাৎ জাকাতদাতার মূল বা শাখা নয়। তাই তাদের জাকাত দেওয়া যাবে, যদি তারা জাকাত গ্রহণের উপযোগী হয়। অন্তরে জাকাতের নিয়ত রেখে মুখে তা উল্লেখ না করে দিয়ে দিলেও জাকাত আদায় হয়ে যাবে। (হিদায়া : ১/২০৬)।
কোনো নর বা নারী কর্তৃক জাকাতের মাল তার দরিদ্র ভাই, বোন, চাচা, ফুফুসহ সব দরিদ্র আত্মীয়স্বজনকে দিতে পারবেন। তবে পিতা ও মাতা ব্যতীত; তাদের বংশীয় স্তর যত ঊর্ধ্বে হোক না কেন (অর্থাৎ দাদা, পরদাদা, নানা, পরনানা-দাদি, পরদাদি-নানি, পরনানি)। এবং ছেলে ও মেয়ে সন্তান ব্যতীত; তাদের বংশীয় স্তর যত নিম্নে হোক না কেন, এরা গরিব হলেও এদের জাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে না; বরং সামর্থ্য থাকলে তাদের খরচ চালানো আবশ্যিক কর্তব্য; যদি নিজেদের খরচ চালানোর মতো তাদের অন্য কেউ না থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।