জুমবাংলা ডেস্ক : থানা পুলিশের হাজতখানা যেন দুর্গন্ধ, অপরিষ্কার, দম বন্ধ হওয়া এক জায়গার নাম। কেউ এক রাত থেকে সকালে আদালতে চালান হন। কেউবা রিমান্ডে এলে থানার হাজতে থাকতে হয়। জেলখানার চাইতে হাজতখানায় কষ্ট বেশি বলে মনে করেন আসামিরা। তবে চিত্র বদলাচ্ছে।
সুন্দর পরিপাটি হাজতখানা তৈরি করা হয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা পূর্ব থানায়। যেখানে নামাজ পড়ার জন্য রয়েছে টাইলস করা স্থান, সময় কাটানোর জন্য রাখা হয়েছে বই। নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য রয়েছে সেলফ।
হাজতখানাটি সুন্দর করে তোলার কারিগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান। এ সময় থানার হাজতখানা ঘুরে দেখান তিনি।
হাজতখানায় আসামিদের জন্য বই পড়ার ব্যবস্থার বিষয়ে ওসি বলেন, ‘থানাহাজতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা, বই পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো আসামি বা হাজতি যেন হতাশ না হন তাই সুন্দর সময় কাটানোর জন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আসামিদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করায় আমার বিরল কিছু অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনেক আসামি দেখেছি যারা এক ওয়াক্ত নামাজও বাদ দেন না। অনেকের ঘুম আসে না, সারারাত পায়চারি করেন। অনেকে হতাশায় দেয়ালের সঙ্গে মাথা ঠুকতে থাকেন। অনেক আসামি হাজতে আত্মহত্যা করেছেন, অনেকে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন। আসামিদের এসব দেখে আমার মনে হয়েছে, তাদের জন্য যদি সময় কাটানোর একটা ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে তাদের হতাশা কমবে। তাদের মন শান্ত থাকবে।’
‘যারা নামাজ পড়েন, তারা নামাজ পড়তে পারবেন। অন্ততপক্ষে যারা হাজতে থাকবেন একরাত বা দুই-তিন রাত তাদের অস্বস্তিতে থাকতে হবে না। কারণ, অপরাধ করলেও তারা মানুষ। ভালো পরিবেশ পেলে হয়তো তারা নিজেদের ভুল শোধরে আলোর পথে আসতে পারেন।’
সভায় মাদক নিয়ন্ত্রণ, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ, হাইওয়েতে মোবাইল ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ দমনে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন ওসি।
‘মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স মেনে চলছি’
ওসি জহিরুল ইসলাম বলেন, গত এক বছরে উত্তরা পূর্ব থানায় থানায় ৪৫২ জন মাদকের আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রায় ১৮ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ২৬ কেজি গাঁজা, ১২ গ্রাম হেরোইন, ১৪৩ বোতল ফেন্সিডিল, ২৩ বোতল চোলাই মদ উদ্ধার করেছি। ভিক্টিম উদ্ধার করা হয়েছে ৬৮ জন, গাড়ি উদ্ধার ৫টি, মোবাইল উদ্ধার ১৫১টি, ছিনতাইকারী আটক ৩৬ জন। ৫২৪ প্রসিকিউশনে আটক ৬৫৬ জন, মামলায় গ্রেফতার ২৮৭ জন, পরোয়ানার মূলে গ্রেফতার ৫২ জন।
‘মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স মেনে চলছি। থানা এলাকায় সকল ফুটপাত উচ্ছেদ করেছি। কারণ, ফুটপাতের হকাররা হকারি করার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা করছিল। তাই সকল হকার উচ্ছেদ করেছি। থানার কোনো পুলিশ সদস্য যদি মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৫টি সিসি ক্যামেরার আওতায় পুরো উত্তরা পূর্ব থানা মনিটরিং করা হয়। থানা থেকে বসে আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে শুরু করে থানা এলাকার গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে নজরদারি করা যাচ্ছে। ফুটপাতের হকার মুক্ত করা হয়েছে। হাইওয়েতে বাসের যাত্রীদের কাছ থেকে জালানা দিয়ে মোবাইল ছিনতাই রোধে কাজ করা হচ্ছে। এজন্য সিসি ক্যামেরাগুলো ভালো উপকারে লাগছে। সিসি ক্যামেরা দেখে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা যাচ্ছে।’
‘সবাই সমস্যার কথা মন খুলে বলতে পারেন’
ওসি বলেন, ‘কোনো সেবা প্রার্থী থানায় এসে যদি ফিরে যান তাহলে সে বিষয়ে ডিউটি অফিসারকে জবাবদিহি করতে হয়। ওসির রুমে যে কারোর প্রবেশে কোনো বাধা দেওয়া হয় না। সবাই সমস্যার কথা মন খুলে বলতে পারেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।