মোঃ সোহাগ হাওলাদার, আশুলিয়া : সাভারের আশুলিয়ায় নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পরিচয় গোপন করে এখন অনেকেই সাংবাদিক বনে গেছেন। তাদের অনেকেই সাংবাদিক সেজে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে অন্তবর্তী কালীন সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম উস্কানি দিয়ে আসছে।
সাম্প্রতিক সময়ে কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তারা। এরা প্রতিনিয়ত সমাজের বিশিষ্টজন, ব্যবসায়ী, পুলিশ ও মূলধারার সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। তাদের অপপ্রচার থেকে বাদ যাচ্ছে না বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ছাত্রনেতারাও।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন জায়গায় অপপ্রচারের শিকার ভুক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ বা জিডি করলেও পুলিশকে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।
প্রশ্ন হলো কথিত সাংবাদিক পরিচয় দানকারী এই সকল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের থামাবে কে?
জানা গেছে, আশুলিয়া থানা শ্রমিক লীগের প্রচার সম্পাদক ও জাতীয় শ্রমিকলীগের আঞ্চলিক কমিটির সদস্য নাজমুল হক ইমু, তার বিশেষ সহকারী শ্রমিক লীগ নেতা সাব্বির আহমেদ ওরফে সাইকো সাব্বির, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি গুলি করা আ.লীগ নেতা সুমন আহমেদ ভূইয়ার ক্যাডার ও আওয়ামী লীগের কর্মী তিস্তা বাবু ও ভ্যালকা সোহেল ওরফে গুন্ডা রানা এই চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন।
সম্প্রতি শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার শিমুলিয়া এলাকায় ঘুরতে গিয়ে অপকর্মের প্রতিবাদ করায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ৯ ছাত্রনেতার ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেই হামলার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে সন্ত্রাসীদের পক্ষ নিয়ে হামলার শিকার ছাত্র নেতাদের চাঁদাবাজ বানানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে তারা। হামলার শিকার ছাত্র নেতাদের চাঁদাবাজ বানাতে বেশ কিছু ভুঁইফোর মিডিয়ায় সংবাদও প্রকাশ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রতবোধ করছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।
ভুল তথ্য ছড়িয়ে আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে অর্থের বিনিময়ে পরাজিত অপশক্তির সাথে হাত মিলিয়ে জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী সাংবাদিক সাকিব আসলামকেও ভিলেন চরিত্রে নিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করেছে চক্রটি। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতা ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমর্থক সাংবাদিকদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়টি বুঝতে পেরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও সমর্থনকারী সাংবাদিকরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় অপচেষ্টাকারীদের গলায় বিষাক্ত ঢোল বেজে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি গুলি করা আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত ইয়ারপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শীর্ষ সন্ত্রাসী সুমন আহমেদ ভূইয়ার একান্ত সহকারী আশুলিয়া থানা শ্রমিক লীগের প্রচার সম্পাদক ও জাতীয় শ্রমিকলীগের আঞ্চলিক কমিটির সদস্য নাজমুল হক ইমুর নামে আশুলিয়া থানায় অন্তত ৩টি ছাত্র-জনতা হত্যার মামলা ও অপপ্রচারের অভিযোগে ৫টি জিডিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তারপরেও কথিত সাংবাদিক পরিচয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই ছাত্র হত্যাকারী, মাঝে মাঝে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ফেসবুক লাইভ এর মাধ্যমে আশুলিয়া এলাকায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। খেয়াল-খুশি মত যার-তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, শুধু তাই নয় স্বাভাবিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে পুলিশকে বিব্রত করার জন্য নানা বিভ্রান্তিকর সংবাদ ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে এই শ্রমিকলীগ নেতার চক্রটি। এ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ভিতরে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সমাজের বিশিষ্টজন, ব্যবসায়ীসহ সাংবাদিকের নামে অপপ্রচারের অভিযোগে নাজমুল হক ইমুর অন্যতম সহযোগী সাব্বির আহমেদ ওরফে সাইকো সাব্বির এর নামে আশুলিয়া থানায় অন্তত ১ ডজন জিডি, অপহরণ ও ধর্ষণ সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে, তাতেও পুলিশ এসব চিহ্নিত অপরাধীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরাসরি গুলি করা আ.লীগ নেতা ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ ভূইয়ার ক্যাডার ও আওয়ামী লীগের কর্মী তিস্তা বাবু ও ভ্যালকা সোহেল ওরফে গুন্ডা রানার বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একাধিক জিডি ও অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না আশুলিয়া থানা পুলিশ।
পুলিশ ব্যবস্থা নিবে কিভাবে.? তাদের অপপ্রচার থেকে খোদ পুলিশই রেহাই পাচ্ছে না৷ কোনো অভিযোগ বা জিডির ব্যাপারে তাদেরকে ডাকা হলে সেই পুলিশ কর্মকর্তাকে নিয়েই মনগড়া লেখা শুরু করে তারা। ভুক্তভোগীর অভিযোগ তদন্তকারী কর্মকর্তারাই শেষে এসব মনগড়া অপপ্রচারের বিরুদ্ধে থানায় নিজে বাদী হয়ে জিডি করেছেন এমন ঘটনাও ঘটেছে।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আশুলিয়া থানার অন্তত ৫ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই) এই চক্রের অপপ্রচারের শিকার হয়েছেন। শুধু সরকারি চাকরির সুবাদে তাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলতে রাজি হননি তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশুলিয়া থানার এক এসআই বলেন, কিছুদিন আগে আমার বিরুদ্ধে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা খুশি তাই লিখে অপপ্রচার চালিয়েছে। শুধু অপপ্রচার চালিয়ে ক্ষান্ত হননি, তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা ভিত্তিহীন একটি সংবাদও প্রচার করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে আমার স্থানে আমার অন্য এক সহকর্মীর ছবি ব্যবহার করা হয়।
সাভারের স্থানীয় সাংবাদিক সোহাগ হাওলাদার বলেন, গত মাস থেকে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের নায়ক অপপ্রচারকারী শ্রমিকলীগ নেতা ইমু ও সাইকো সাব্বির চক্র আমাকে নিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যা ইচ্ছে তা লিখে দিচ্ছে। তারা কখনও আমাকেই আওয়ামী দোসর বানিয়ে দিচ্ছে তো, কখনও দালাল বানিয়ে দিচ্ছে। বিষয়টি আমি একাধিকবার থানা পুলিশকে জানিয়েছি। তারা লিখিত দিতে বলেছে।লিখিত অভিযোগের পরেও প্রশাসনের নীরব ভূমিকা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ছাত্রনেতা ও এনসিপির অঙ্গসংগঠন শ্রমিক উইং এর কেন্দ্রীয় সংগঠক রিফাত আহমেদ ইমন বলেন, ফেসবুকে অসত্য তথ্য দিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন যেভাবে বক্তব্য দিচ্ছে এটা আসলে সত্যিই অনেক বিব্রতকর এবং এটার জন্য আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। জুলাই গণঅভুথ্যানে আমরা মাঠ পর্যায়ে কিভাবে আন্দোলনে ছিলাম, কিভাবে আমরা কাজ করেছি সেগুলো সবাই জানেন। তবে এ ধরনের আচরণ খুব হতাশার। নীতি নির্ধারকদের সাথে আলোচনার পর এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি বেশ কিছু দিন ধরে জুলাই আন্দোলনরত ছাত্র-জনতাকে টার্গেট করে হামলা ও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনুসারীরা, অনেকেই আবার নিজেদের সাংবাদিক পরিচয় দিচ্ছেন। নিশ্চিত তারা দেশের ভাল চায় না। তারা ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগকে পূর্ণবাসনের সুযোগ সৃষ্টির অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ছাত্রনেতা মোঃ হৃদয় হাসান বলেন, আমি জুলাই আন্দোলনে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের দ্বারা গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হই, বর্তমানে সাভার উপজেলা শাখা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র মুখ্য সংগঠক হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করছি। আমরা বিভিন্ন সমাজসেবা মূলক কাজে নিয়োজিত। ইতিমধ্যে বেশ কিছু দৃশ্যমান কাজও আমরা করে দেখিয়েছি। গত বুধবার রাতে আমাদের উপর নৃশংসভাবে হামলা করা হয়। এতে আমরা ৯ জন আহত হই। তার মধ্যে ৪জন গুরুতর অবস্থায় এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তিনি আরও বলেন, এখন আমরা বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। ঢাকা ১৯ এর পতিত এমপি খুনি সাইফুল ইসলাম ও খুনি সুমন আহমেদ ভুইয়ার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আওয়ামী লীগের একটি চক্র সাংবাদিক পরিচয়ে আমাদের নামে বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি তারা সবাই আওয়ামী লীগের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত, চরিত্র বদল করা গিরগিটিদের এসব কর্মকাণ্ড রোধে আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চেয়েছি।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহীনুর কবীর বলেন, যেসব হলুদ সাংবাদিক তথ্য প্রমান ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুতই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আমরা লেগুনা আপেলকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছি। বাকি সহযোগীদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ, সাংবাদিক ও জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী ছাত্র-জনতাকে নিয়ে যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা পতিত সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাড়া অন্য কিছু করছে না। আমরাও এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।