আতিক আবদুর রাফি : ইসলামি শরিয়তে অপরাধের শাস্তিকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। ‘হুদুদ’, ‘কেসাস’ ও ‘তাজিরাত’। যেসব অপরাধের শাস্তি কোরআন ও সুন্নাহ নির্ধারণ করে দিয়েছে তা হলো ‘হুদুদ’ ও ‘কিসাস’। পক্ষান্তরে যেসব অপরাধের কোনো শাস্তি কোরআন ও সুন্নাহ নির্ধারণ করেনি; বরং বিচারকদের অভিমতের ওপর ন্যস্ত করেছে, সেসব শাস্তিকে শরিয়তের পরিভাষায় ‘তাজিরাত’ তথা দণ্ড বলা হয়। এর নিয়ম হলো বিচারক স্থান, কাল ও পরিবেশ বিবেচনা করে অপরাধ দমনের জন্য যেরূপ ও যতটুকু শাস্তির প্রয়োজন মনে করবেন, ততটুকুই দেবেন।
যেসব অপরাধের শাস্তিকে আল্লাহর হক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, সেসব শাস্তিকে ‘হুদুদ’ বলা হয়। শরিয়তে ‘হুদুদ’ মাত্র পাঁচটি। যথা : ডাকাতি, চুরি, ব্যভিচার, ব্যভিচারের অপবাদ ও মদপানের শাস্তি। প্রথম চারটির শাস্তি কোরআনে বর্ণিত রয়েছে। আর পঞ্চমটি একাধিক হাদিস এবং সাহাবায়ে কেরামের ঐকমত্য দ্বারা প্রমাণিত। এই পাঁচটি শাস্তিতে কোনো পরিবর্তন নেই।
যেসব শাস্তিকে বান্দার হক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে, সেগুলোকে ‘কেসাস’ বলা হয়। এর শাস্তি হুদুদের মতোই সুনির্ধারিত। প্রাণের বিনিময়ে প্রাণসংহার করা এবং জখমের বিনিময়ে সমান জখম করা। কিন্তু পার্থক্য এই যে, হুদুদকে আল্লাহর হক হিসেবে প্রয়োগ করা হয়। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ক্ষমা করলেও তা ক্ষমা হবে না। কিন্তু কেসাস হলো এর বিপরীত। কেসাসে বান্দার হক প্রবল হওয়ার কারণে হত্যাকারীকে নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীর এখতিয়ারে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে ইচ্ছা করলে কেসাস হিসেবে তাকে মৃত্যুদণ্ড করাতেও পারে, আবার ক্ষমাও করে দিতে পারে। জখমের কেসাসও অনুরূপ।
ভয় দেখিয়ে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে মানুষের সম্পদ হরণ করাই ডাকাতি। চুরিতে মানুষের জীবন ও সম্মানের ওপর আক্রমণ করা হয় না, তবে ডাকাতি ও অপহরণের সময় মানুষের জীবন, সম্পদ ও ইজ্জত-আবরুর ওপর আক্রমণ করা হয়। তাই ইসলাম এ অপরাধের কঠোর শাস্তির বিধান দিয়েছে। কোরআনে ডাকাতদের ‘আল্লাহ ও রাসুলের সঙ্গে যুদ্ধকারী’ এবং ‘পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারী’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।
ডাকাতির শাস্তি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায় তাদের শাস্তি কেবল এটাই যে, তাদের হত্যা করা হবে বা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে বা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে বা তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। দুনিয়ায় এটাই তাদের লাঞ্ছনা। আর আখেরাতে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।’ (সুরা মায়েদা ৩৩)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।