জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানী ঢাকার কাছেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পূর্বাচল নতুন শহর। রূপগঞ্জ থানা ও কালীগঞ্জ থানা এলাকার ৬ হাজার ১৫০ একর জায়গা জুড়ে করা হয়েছে এ আবাসন প্রকল্প। যেখানে রয়েছে ৩০টি সেক্টরের অধীনে ২৬ হাজার আবাসিক প্লট। অথচ বরাদ্দপ্রাপ্তির ২৮ বছরেও সেখানে গড়ে উঠেনি বসতি। বেশির ভাগ প্লট খালি পড়ে রয়েছে।
২৬ হাজার ভবন ওঠার কথা থাকলেও সেখানে এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০০টির মতো নকশা অনুমোদন নিয়েছেন বরাদ্দপ্রাপ্তরা। রাজউক বলছে, বেশ কয়েকটি সেক্টরে বিদ্যুৎ, পানিসহ ভবন করার মতো সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পরেও মানুষ প্লট ফেলে রাখছে। সুবিধা পাওয়ার পরও যারা ভবন করবেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের বরাদ্দ বাতিল হতে পারে।
দেশের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা ইত্তেফাক এর সাংবাদিক নিলয় মামুন-এর প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
রাজধানীতে জনসংখ্যার চাপ কমাতে এবং নাগরিক আবাসন সমস্যা দূর করতে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। নতুন এ শহরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের বাসস্থানের সংস্থান হবে। রাজউক নব্বইয়ের দশকে এ প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু করে। বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। শেষ করার কথা ছিল ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে। পরে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
রাজউক সূত্রে জানা গেছে, ২৬ হাজার ২১৩টি আবাসিক প্লটের মধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে ২২ হাজার। এর মধ্যে বাড়ি তৈরির জন্য অনুমোদন নেওয়া হয়েছে মাত্র ৩০০ প্লটে। এছাড়া ৪৭২টি প্রাতিষ্ঠানিক ও ১ হাজার ৩৩টি বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে। প্রকল্প এলাকার ভেতরে ৩১৯ দশমিক ২৮ কিলোমিটার রাস্তা, ৬৪০ কিলোমিটার সারফেস ড্রেন, ৬১টি ব্রিজ, ৪৩ কিলোমিটার লেক উন্নয়ন ও প্রোটেকশন, ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ ও পাঁচটি স্কুল ভবন নির্মাণ হচ্ছে। প্রকল্পের ১৯ নম্বর সেক্টরে থাকবে ১৪০ তলার আইকনিক টাওয়ার। আর ১ নম্বর সেক্টরে শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের প্রস্তাবনা রয়েছে।
তাছাড়া ১৫ নম্বর সেক্টরে বঙ্গবন্ধু স্কয়ার নির্মাণের জন্য জায়গা বরাদ্দ রাখা আছে। তাছাড়া প্রকল্পের বিভিন্ন সেক্টরে ১৪টি ব্লকে হাইরাইজ অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে ৬২ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ প্লট মালিক প্লটের মধ্যে বাউন্ডারি দিয়ে রেখেছেন। কিছু কিছু প্লটে সবজি চাষ করা হচ্ছে। আবার কিছু প্লট এমনি পড়ে আছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বরাদ্দপ্রাপ্তদের থেকে কিনে অনেকে জমির দাম বাড়ানোর জন্য এভাবে ফেলে রেখেছেন। এলাকাটি সিটি করপোরেশনের বাইরে হওয়ায় রাজউক তাদের জনবল বাড়িয়ে সিটি করপোরেশনের আদলে এ এলাকায় সেবা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এ নিয়ে একটি কমিটিও ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট-১৯৫২ এর ধারা ৬৫ অনুযায়ী রাজউক নির্মিত যে কোনো অবকাঠামো সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের বিধান রয়েছে।
রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক বলেন, পূর্বাচলে পরিষেবা দেওয়ার জন্য তেমন কোনো কার্যকরী লোকাল অথরিটি নেই, আছে ইউনিয়ন পরিষদ, তাদের তো আসলে তেমন কোনো ক্যাপাসিটি নেই এই নতুন শহরকে ডেভেলপ করার। যতক্ষণ পর্যন্ত এটি কোনো সিটি করপোরেশনের অধীনে বা এখানে নতুন কোনো সিটি করপোরেশন না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত রাজউক তাদের নিজস্ব মেইনটেইনেন্সে চালাবে। এখানে পরিষেবা দেওয়ার জন্য একটি কমিটি করা হয়েছে। তারা কাজ করছে। তবে আমরা বসবাস উপযোগী করার জন্য ইতিমধ্যে বিদ্যুৎ, পানি ও সড়কের কাজ করছি। আমরা ২০১৮ সাল থেকে পিপিপি পদ্ধতিতে পানি দিচ্ছি। এখন প্রথম পর্যায়ের প্রায় কাজ শেষ ১,২,৩ নম্বর সেক্টরে। পরবর্তী সময়ে আরও ১০টি সেক্টরে পানি যাবে। এভাবে আমরা ২০২৪ সাল নাগাদ পুরো প্রকল্প এলাকায় পানির ব্যবস্থা করতে পারব।
তিনি আরও বলেন, আসলে এখানে বসতি গড়ে না ওঠার মূল কারণ হলো, যাদের প্লট দেওয়া হয়েছে এদের বেশির ভাগই বিভিন্ন কারণে বাড়ি করছে না। এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের ১০ হাজার প্লট দেওয়া হয়েছে। তারা হয়তো আগামী ১০ বছরেও বাড়ি বানাবে কী না বলা যাচ্ছে না। তাদের বেশির ভাগেরই আর্থিক সংকট, আবার কিছু লোক বর্তমানে সরকারি আবাসনে থাকে। অথবা নিজের হয়তো কোথাও ফ্ল্যাট আছে। ৭ হাজার লোক আছে তারা হয়তো ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে অথবা নিজে ছোট ঘর নিয়ে আছে। এখানেই প্রায় ১৭ হাজার বাদ। এছাড়া ৪ হাজার আছে বিদেশি। তারাও বেশির ভাগ বিক্রি করে দিয়েছে। আর যাদের কাছে বিক্রি করেছে তার তো সম্পদ আছে আগে থেকেই, ফলে সে-ও বাড়ি বানাচ্ছে না। আর বাকি ২-৩ হাজার প্লট রয়েছে। এর মধ্যেই বাড়ি নির্মাণ হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৩০০ বাড়ির প্ল্যান অনুমোদন হয়েছে। আমরা তাদের এখন বাধ্য করব বাড়ি করার জন্য। আমরা যেহেতু পানি দিচ্ছি, বিদ্যুৎ দিচ্ছি, রাস্তাও করে দিয়েছি, এখন বাড়ি বানাতে হবে। নয়তো প্লট বাতিল করার মতো হার্ডলাইনে যাব আমরা।
সূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।