বিনোদন ডেস্ক : সায়েন্স ফিকশন বা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী নির্ভর সিনেমা নানা ধরনের হয়। কিছু কিছু আছে, যেগুলোতে ভিএফএক্সের কারিকুরিতে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। সায়েন্স ফিকশন মানেই যেন ভরপুর ভিএফএক্স। তবে ইদানিং এই প্রচলিত ধারণায় পরিবর্তন আসছে। আজকের দুনিয়ার অন্য রূপ তুলে আনতে প্রতি বছরই এমন কিছু সাই-ফাই মুভি তৈরি হয়, যেগুলোতে গ্রাফিক্স বা ইফেক্টসের জৌলুস থাকে কম। বরং মানুষের মানবিক সংকট ও গল্পগুলোকেই তুলে আনার চেষ্টা হয় বেশি।
এমনই একটি সাই-ফাই মুভি হলো ‘এলেভ্যাশন’। চলতি বছরের নভেম্বরের শুরুর দিকে হলিউডের এই সিনেমা মুক্তি পায়। বর্তমানে সিনেমাটি ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম অ্যাপল টিভি প্লাসে দেখা যাচ্ছে।
পোস্ট-অ্যাপোক্যালিপ্টিক ঘরানার সিনেমা ‘এলেভ্যাশন’ পরিচালনা করেছেন জর্জ নোলফি। চিত্রনাট্য লিখেছেন জন গ্লেন, জ্যাকব রোমান ও কেনি রায়ান। অভিনয়ে আছেন অ্যান্থনি ম্যাকি, ম্যাডি হ্যাসন, মোরেনা বাখারি প্রমুখ।
গল্পের জায়গায় আসা যাক এখন। এমন এক সময়ের গল্প বলা হয়েছে এই সিনেমায়, যখন রিপারস নামের রহস্যময় এক অচেনা প্রাণির আক্রমণে সারা পৃথিবী ছারখার হয়ে গেছে। এই প্রাণিগুলো হুট করেই একদিন সিংকহোল দিয়ে আবির্ভূত হয়েছিল। এরপর একের পর এক আক্রমণে কোটি কোটি মানুষকে মেরে ফেলে। অবস্থা এতটাই খারাপ হয় যে, মানবসভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়ে। প্রাণিগুলোর হাত থেকে বাঁচার উপায় একটাই। তা হলো, ৮ হাজার ফুট বা তার বেশি উচ্চতায় থাকা। একমাত্র এই উচ্চতাতেই উঠতে পারে না এসব প্রাণি। আর তাই অল্প যে কিছু মানুষ বেঁচে ছিল, তারা ছোট ছোট সম্প্রদায় গঠন করে পাহাড়ি উপত্যকায় (অবশ্যই ৮ হাজার ফুট বা তার বেশি উচ্চতায়) বাসা বাঁধে। এভাবেই প্রাণ বাঁচায় অল্পসংখ্যক মানুষ। ওদিকে সারা পৃথিবীতে চষে বেড়াতে থাকে রিপারস নামের ভয়ংকর প্রাণিগুলো। আরও অদ্ভুত বিষয় হলো, নাগালে পেলেই মানুষ মারে এসব প্রাণি। কিন্তু প্রাণে মারলেও মানুষ এগুলোর খাদ্য নয়! অর্থাৎ, অ্যাপেক্স প্রিডেটর হলেও রিপারসদের খাদ্যচক্রে মানুষের স্থান নেই। তাহলে সেগুলো কেন হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে?
এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা হয় সিনেমার শেষ দিকে এসে। তবে তার আগেই চলে আসে আরেক প্রাণঘাতী সংকট। পাহাড়ি উপত্যকায় উঠে প্রাণ বাঁচানো উইল তার ছেলেকে নিয়ে বিপদে পড়ে। ছেলের অসুস্থতার কারণে কিছু ওষুধের ব্যবস্থা তাকে করতেই হবে। নইলে হারাতে হতে পারে ছেলেকে। স্ত্রীর মৃত্যুর পর ছেলেই একমাত্র অবলম্বন উইলের। আর সেজন্য ছেলেকে বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করতেও পিছপা হয় না উইল। উদ্যোগ নেয় রিপারস দিয়ে ভরা অঞ্চলে নেমে ওষুধ সংগ্রহের। তার সঙ্গী হয় নিনা ও কেটি। আর সেই রোমাঞ্চকর অভিযান নিয়েই এগোয় ‘এলেভ্যাশন’-এর কাহিনী। সেই অভিযানের পদে পদে জীবন হারানোর শঙ্কা। কারণ ৮ হাজার ফুটের নিচে নামলেই হত্যা করতে তেড়ে আসে রিপারস। এদের বুলেট বা বোমা দিয়ে মারা যায় না। চলতে হয় লুকিয়ে, গা বাঁচিয়ে।
সিনেমার পর্দায় বেশির ভাগ সময়ই একেবারেই বাস্তব পৃথিবীকে দেখানো হয়েছে। আমরা প্রতিদিন যেমন রাস্তাঘাট, যেমন পৃথিবী দেখি, ঠিক তেমনটাই। শুধু সেখানে মানুষের অভাব। ধু ধু করে বিরান ভূমি। আর ভয় হয়, কখন এসে পড়ে রিপারস! ফলে সাই-ফাই বলতেই ভিএফএক্সে অভ্যস্ত চোখের জন্য অন্যরকম অভিজ্ঞতা মেলে। বিশ্বাসযোগ্যও অবশ্য। আর অভিনয়ের দিক থেকে বললে, অ্যান্থনি ম্যাকি ভালো নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন ম্যাডি হ্যাসন ও মোরেনা বাখারি।
দেশের বেস্ট ব্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড ৯ ক্যাটাগরিতে অ্যাওয়ার্ড পেল এমজিআই
সমস্যা হলো, ‘এলেভ্যাশন’-এর কাহিনী আসলে হলিউডের আর ১০টা সাই-ফাই মুভির মতোই। চমকে ওঠার মতো তেমন কিছু নেই। সিনেমার শেষের দিকে যে সত্য উদঘাটিত হয়, সেটিও সায়েন্স ফিকশনে অভ্যস্ত যেকোনো দর্শক আগেভাগেই অনুমান করতে পারবেন। অবশ্য এই সিনেমার সিক্যুয়েল নিয়ে আসার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। তবে তাতেও যে রহস্যের গন্ধ পাওয়া যায়, সেটিও অনুমানযোগ্য।
ক্র্যাভেন কেমন?ক্র্যাভেন কেমন?
সুতরাং, ‘এলেভ্যাশন’ আদতে একটি অ্যাভারেজ সাই-ফাই সিনেমা। কাহিনীতে টুইস্ট কম, রহস্যও কম। তবে হ্যাঁ, কেবলই অলস সময় কাটাতে চাইলে দেখা যেতে পারে। চমকে হয়তো যাবেন না, কিন্তু একেবারে মুখ বেঁকিয়ে বলেও দিতে পারবেন না যে—‘বাজে সিনেমা’! তাই হাতে অঢেল সময় থাকলে দেখতেও পারেন ‘এলেভ্যাশন’।
রেটিং: ৩.৮০ / ৫.০০
পরিচালক: জর্জ নোলফি
চিত্রনাট্য: জন গ্লেন, জ্যাকব রোমান ও কেনি রায়ান
অভিনয়শিল্পী: অ্যান্থনি ম্যাকি, ম্যাডি হ্যাসন, মোরেনা বাখারি প্রমুখ
ভাষা: ইংরেজি
ধরন: সাই-ফাই, থ্রিলার, অ্যাকশন
মুক্তি: ৮ নভেম্বর ২০২৪
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।