আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আসন্ন মৃত্যু সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যা ৭২ বছর বয়সি এই রুশ নেতার স্বাস্থ্য নিয়ে দীর্ঘদিনের জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে।
জেলেনস্কির দাবি, ‘তিনি (পুতিন) শীঘ্রই মারা যাবেন এবং এটি একটি বাস্তবতা’। খবর সামা নিউজের।
জেলেনস্কি গত বুধবার প্যারিসে ইউরোভিশন নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনই মন্তব্য করেন। সেইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেন, রাশিয়ার বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতা শিথিল করা উচিত নয়, বিশেষ করে যখন ইউক্রেন যুদ্ধ নিরসনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চলছে।
‘তিনি খুব শিগগিরই মারা যাবেন, এটি একটি বাস্তবতা এবং সবকিছু শেষ হয়ে যাবে’, জেলেনস্কির এমন মন্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়েছে দ্য কিইভ ইন্ডিপেনডেন্টও। যদিও তিনি তার দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি।
পুতিনের স্বাস্থ্য নিয়ে জল্পনা
মূলত, পুতিনের স্বাস্থ্যের অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা গুজব ও জল্পনা-কল্পনা হয়েছে। যার মধ্যে ক্যান্সার, পারকিনসনস রোগ এবং অন্যান্য গুরুতর অসুস্থতার কথা শোনা গেছে।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর থেকে পুতিনের স্বাস্থ্য নিয়ে তীব্র জল্পনা চলছে।
তবে, রাশিয়ার সরকার এ ধরনের দাবিগুলোকে ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করেছে। পুতিন নিজেও ২০২২ সালের জুন মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গ আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ফোরামে মার্ক টোয়েনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘আমার মৃত্যুর গুজব অত্যন্ত বাড়িয়ে বলা হয়েছে’।
ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা প্রধান অ্যাডমিরাল টনি রাডাকিন ২০২২ সালের জুলাই মাসে পুতিনের স্বাস্থ্যের অবনতির গুজবকে ‘ইচ্ছাপূর্ণ চিন্তা’ বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে, রাশিয়ার নেতৃত্ব স্থিতিশীল।
মূলত গত বছরের অক্টোবরে পুতিনের হাতে ইন্ট্রাভেনাস (IV) ইনজেকশনের চিহ্ন দেখা গিয়েছিল, যা তার ক্যান্সারের চিকিৎসা সম্পর্কিত নতুন গুজবের জন্ম দেয়।
এছাড়াও, তার চোখ লাল দেখানো, হাতে অজানা কালশিটে দাগ এবং ঘাড়ের একটি দাগকে থাইরয়েড সার্জারির সম্ভাব্য লক্ষণ হিসেবে মনে করা হয়।
কিছু প্রতিবেদনে, বিশেষ করে একটি মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য ফাঁসে দাবি করা হয়েছিল যে, পুতিন কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। পাশাপাশি, তার চলাফেরার ধরণ নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
তাকে প্রায়ই একটি টেবিল শক্ত করে ধরে থাকতে এবং অস্বাভাবিকভাবে পা কাঁপাতে দেখা গেছে, যা শারীরিক দুর্বলতার ইঙ্গিত দিতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া
পুতিনের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সব জল্পনাকে ক্রেমলিন বরাবরই অস্বীকার করেছে। গত বছর রাশিয়ার সরকারি সংবাদ সংস্থা টিএএসএস জানিয়েছিল, পুতিনের কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা নেই এবং তার হাসপাতাল পরিদর্শন ছিল কেবল নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা।
পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এ ধরনের দাবিকে ‘পশ্চিমা প্রচারণা’ বলে অভিহিত করেছেন।
২০২৩ সালের নভেম্বরে কাজাখস্তানের এক অনুষ্ঠানে পুতিনের পা অনিয়ন্ত্রিতভাবে কাঁপছিল—এমন ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে ক্রেমলিন এটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়।
ভূরাজনৈতিক প্রভাব
মূলত জেলেনস্কির সাম্প্রতিক এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে, যখন রাশিয়া ও ইউক্রেন কৃষ্ণ সাগরে এবং জ্বালানি অবকাঠামো সংক্রান্ত সংঘর্ষে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছেছে।
আলোচনাটি মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে রাশিয়ার বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশাধিকারের প্রসার নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন : ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত মিয়ানমারের পাশে দাঁড়ালো বাংলাদেশ
তবে জেলেনস্কি এটিকে বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেছেন। তার ভাষায়, ‘আমার বিশ্বাস, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে আমেরিকা এখন পুতিনকে এই বৈশ্বিক বিচ্ছিন্নতা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য না করে। এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটি সবচেয়ে বিপজ্জনক মুহূর্তগুলোর একটি’।
এদিকে, ক্রেমলিন নিশ্চিত করতে চাইছে, পুতিন এখনো সুস্থ এবং দেশের নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, পুতিনের স্বাস্থ্যগত অবস্থার আরও অবনতি হলে রাশিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্মুখীন হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।