জুমবাংলা ডেস্ক : প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের দেশে পুঁটি মাছ ভীষণ জনপ্রিয়। একসময়ে আমাদের দেশের মিঠা পানির অঞ্চলের খাল, বিল, ধানক্ষেত, হাওর-বাওড় ও জলাশয়ে প্রচুর পরিমাণে পুঁটি পাওয়া যেত। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মায়ানমার ও চীনে এ পাওয়া যায়।
পুঁটি মাছ বাড়ির পুকুর অথবা ছোটখাট জলাশয়ে চাষ করা যায়। প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণের দক্ষতা, সম্পূরক খাবারের প্রতি আগ্রহ, বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশে টিকে থাকা ও অধিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে চাষিদের কাছে এর জনপ্রিয়তাও দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে খুব সহজেই এই মাছ চাষ করা যায়। ফলে পুঁটি মাছ চাষে মাছ চাষিদের আগ্রহও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
পুঁটি মূলত মিষ্টি পানির মাছ। এটি সাধারণত খাল এবং বিল এ পাওয়া যায়। তবে বর্তমানে আমাদের দেশে এই মাছকে পুকুর কিংবা ছোটখাট জলাশয়ে চাষ করা হচ্ছে। পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য প্রথমে উপযুক্ত পুকুর নির্বাচন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পুকুরের পাড় যেন সব সময় নিরাপদ ও বন্যামুক্ত থাকে। এছাড়াও পুকুরে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পড়ে ও পুকুরটি যেন জলজ আগাছামুক্ত থাকে।
সাধারণত বছরের যেকোনো সময়েই পুঁটি মাছের চাষ করা যায়। পুকুরে কিংবা যেকোন ধরণের ছোটখাট জলাশয়ে পুঁটির পোনা সকাল অথবা সন্ধ্যা ছাড়তে হবে। কারণ এসময় তাপমাত্রা সহনীয় অবস্থায় থাকে। তা না হলে মাছ মরে যেতে পারে। এপ্রিল-মে মাসে পুঁটি মাছ ডিম ছাড়ে। তাই এ সময় পুঁটি মাছ চাষ করার ভালো।
বাড়িতে পুকুর কিংবা যেকোন ধরণের ছোটখাট জলাশয়ে পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য প্রথমে পোনা সংগ্রহ করতে হবে। এ জন্য নিকটস্থ যেকোন হ্যাচারি থেকে পোনা সংগ্রহ করতে হবে। এছাড়াও প্রাকৃতিকভাবে খাল, বিল কিংবা যেকোন ধরনের জলাশয় থেকে পোনা সংগ্রহ করা যায়। তবে পোনা ছাড়ার পর সঠিক নিয়মে যত্ন নিতে হবে।
পুঁটিমাছ সাধারণত পুকুর-নদীতে বছরে দুইবার ডিম দেয় বলে এদের পোনা মজুদের প্রয়োজন হয় না। পুকুরে পুঁটি চাষ করার জন্য সঠিক নিয়ম মেনে চলতে হবে। পুকুরে পোনা ছাড়ার জন্য প্রথমে অক্সিজেন ব্যাগে পরিবহনকৃত পোনা ব্যাগসহ পানিতে ভাসিয়ে রাখতে হবে।
এরপর পরিবহনকৃত ব্যাগের পানি এবং পুকুরের পানির তাপমাত্রা একই মাত্রায় আনতে হবে। তারপর ব্যাগের মুখ খুলে পুকুরের পানি অল্প অল্প করে ব্যাগে দিতে হবে এবং ব্যাগের পানি অল্প অল্প করে পুকুরে ফেলতে হবে। ৪০-৫০ মিনিট সময় ধরে এভাবে পোনাকে পুকুরের পানির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে হবে।
পুঁটি মাছ চাষে আপনাকে নিয়মিত উপযুক্ত খাবার প্রয়োগ করতে হবে। এ মাছ স্বাভাবিকভাবে প্রাকৃতিক খাদ্য হিসেবে শেওলা খেয়ে থাকে। এছাড়াও এ মাছ সাধারণত সবধরনের খাবার খেয়ে থাকে। তাই এদের চাষ করার ক্ষেত্রে আলাদা কোনো খাবারের প্রয়োজন হয় না।
পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য পুকুরে বা জলাশয়ে সঠিক নিয়মে সার প্রয়োগ করতে হবে। মাঝেমধ্যে ইউরিয়া এবং অন্যান্য সার প্রয়োগ করতে হবে। এতে পানির গুণাগুণ বজায় থাকে এবং মাছের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং এতে মাছের বৃদ্ধি অনেক দ্রুত হয়।
বাড়িতে পুকুর কিংবা যেকোনো ধরণের ছোটখাট জলাশয়ে পুঁটি মাছ চাষ করার জন্য প্রথমে পুকুরের রাক্ষুসে মাছ দূর করতে হবে। যেমন শোল, টাকি, গজার, বোয়াল, মাগুর ইত্যাদি হচ্ছে রাক্ষুসে মাছ। এই মাছ পুঁটি মাছের পোনা খেয়ে ফেলে।
তাই সর্বপ্রথম রাসায়নিক সারের মাধ্যেমে এই সকল মাছ দূরীভূত করতে হবে। পুকুরের বা জলাশয়ের তলদেশ সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে পুকুর বা জলাশয় সম্পূর্ণ শুকিয়ে ফেলতে হবে। মাছের যত্ন নিতে হবে। বৃষ্টির দিনে বা মেঘলা আবহাওয়ায় মাছের খাবার বেশি দেওয়া যাবে না।
বাড়িতে পুকুর কিংবা যেকোনো ধরনের ছোটখাট জলাশয়ে সঠিক নিয়মে পুঁটি মাছ চাষ করলে সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে পুঁটি পাওয়া যাবে। যা আপনার পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয়ও সম্ভব।
পুঁটি মাছের অনেক ধরনের খাদ্য পুষ্টিগুণ রয়েছে। এ মাছে প্রচুর পরিমাণে আমিষ পাওয়া যায়, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও এ মাছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন রয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ জাগো নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।