স্পোর্টস ডেস্ক : প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠে ইতিহাস গড়েছে মরক্কো। উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে স্বাভাবিকভাবেই বয়ে যাচ্ছে উৎসবের বন্যা। যে কারণে, প্রিয় দলের সমর্থনে কাতারে উড়ে যেতে তর সইছে না মরক্কানদের।
তাইতো, অধীর আগ্রহে বসে থাকা সমর্থকদের জন্যই এবার কাতারে যাওয়ার জন্য করা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।
মরক্কান সমর্থকদের কাতারে যাওয়ার জন্য ৩০টি ফ্লাইটের ব্যবস্থা করছে দেশটির বিমান সংস্থা ‘রয়্যাল এয়ার মারোক’। ক্যাসাব্লাঙ্কা থেকে দোহা পর্যন্ত সরাসরি আগামী মঙ্গলবার ও বুধবার চলবে এই ফ্লাইটগুলো। এমনটাই জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
বিশ্বকাপের আগেও যাদের ঘিরে তেমন কোনো প্রত্যাশাই ছিলো না, সেই বোনো-হাকিমিদের খেলা দেখার জন্য এখন অধীর হয়ে অপেক্ষা করছেন মরক্কানরা। এজন্য কাতারের টিকিট কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন অনেকে।
আগামী বুধবার ফ্রান্সের বিপক্ষে মরক্কোর ঐতিহাসিক সেমিফাইনাল স্টেডিয়ামে বসেই দেখতে চান তারা। এজন্যই নতুন করে ৩০টি ফ্লাইট চালু করা হচ্ছে। বিমান সংস্থাটি জানিয়েছে, দোহায় যে মরক্কানরা এরইমধ্যে খেলা দেখার জন্য অবস্থান করছেন, তাদের জন্য থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা।
গত ১০ ডিসেম্বর পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে মরক্কো। এই জয় তাদের ইতিহাসে স্থায়ীভাবে জায়গা করে দিয়েছে। কারণ প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে মরক্কানরা।
এর আগে আফ্রিকান দলগুলো বড়জোর কোয়ার্টার পর্যন্ত উঠতে পারে। ১৯৯০ বিশ্বকাপে ক্যামেরুন, ২০২২ বিশ্বকাপে সেনেগাল এবং ২০১০ বিশ্বকাপে ঘানা শেষ আট থেকে বিদায় নেয়। কিন্তু মরক্কো তাদের সবার কীর্তিকে ছাড়িয়ে গেল এবার।
মরক্কোর কীর্তিগাঁথা যুগ যুগ ধরে আফ্রিকান ফুটবলে উচ্চারিত হবে। এর শুরুটা তারা করেছে গ্রুপ পর্বে। প্রথমেই তারা ২০১৮ বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকে রুখে দেয়। গোলশূন্য ড্রয়ে শেষ হয় ম্যাচটি। এরপর ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর দল বেলজিয়ামকে হারায় ২-০ গোলে। শেষ ম্যাচে কানাডাকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠে যায় শেষ ষোলোয়। তাদের কারণে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় বেলজিয়ানরা।
শেষ ষোলোয় মরক্কোর শিকার হয়ে বিদায় নেয় ২০১০ বিশ্বকাপজয়ী স্পেন। টাইব্রেকারে গড়ানো ম্যাচে স্প্যানিশরা একবারও জালে বল পাঠাতে পারেনি। তাদের গোলরক্ষক ইয়াসিন বোনো দেয়াল হয়ে দাঁড়ান স্প্যানিশদের সামনে। আর শেষ আটে পর্তুগালের মতো দলকে হারিয়ে দিয়েছে তারা। তিন ভাগের বেশি সময় বল দখলে রেখেও মরক্কোর গোলমুখ খুলতে পারেনি পর্তুগিজরা। ফলে কাঁদতে কাঁদতে বিদায় নেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরা। অন্যদিকে রূপকথার জন্ম দিয়ে মাঠ ছাড়লেন হাকিম জিয়াচরা।
শুধু আফ্রিকান হিসেবেই নয়, আরব দেশগুলোর মধ্যেও বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠা প্রথম দল মরক্কো। এর আগে এই মরক্কো ১৯৮৬ বিশ্বকাপে, সৌদি আরব ১৯৯৪ বিশ্বকাপে এবং আলজেরিয়া ২০১৪ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠেছিল; যা এতদিন আরবদের সেরা সাফল্য ছিল।
আর মুসলিম প্রধান দেশগুলোর মধ্যে সেরা সাফল্য ছিল তুরস্কের। ২০০২ জাপান-দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল তারা। সেমিতে ব্রাজিলের কাছে ০-১ গোলে হারের পর স্থান নির্ধারনী ম্যাচে কোরিয়ানদের হারিয়ে তৃতীয় হয়েছিল তুর্কিরা। এবার তাদের সেই কীর্তি স্পর্শ করল মরক্কো।
এবার আরবের প্রথম দেশ হিসেবে বিশ্বকাপ আয়োজন করেই ইতিহাস গড়ে কাতার। কিন্তু মাঠে তারা কোনো সাফল্য পায়নি। আয়োজকরা না পেলেও এবার প্ররথম বিপ্লব ঘটায় সৌদি আরব। গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তারা হারিয়ে দেয় আসরের অন্যতম ফেভারিট আর্জেন্টিনাকে।
এছাড়া ডেনমার্কের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে আফ্রিকার আরেক আরব দেশ তিউনিসিয়া। এই দলগুলো অবশ্য আর কোনো সাফল্য পায়নি। কেবল মরক্কো টিকে আছে বীরদর্পে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।