মোমবাতির নরম আলোয় যখন অন্ধকার ঘরটিকে স্নিগ্ধ করে, তখন কী ভেবেছেন কখনও? ওই আলোককণাগুলো আসলে কী? কণা, না তরঙ্গ? নাকি একইসাথে দুটোই? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই তো জন্ম নিয়েছিল কোয়ান্টাম ফিজিক্সের এক অবিশ্বাস্য জগৎ! রোজকার জীবনে আমরা যা দেখি, যা অনুভব করি—পদার্থের স্থিরতা, সময়ের ধারাবাহিকতা—সবকিছুকেই চ্যালেঞ্জ করে বসে এই বিজ্ঞান। মনে হয় না কি, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের গভীরে লুকিয়ে থাকা কোনও রহস্যজালে আমরা আটকে গেছি? কিন্তু চিন্তা করবেন না, কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সহজ ব্যাখ্যা দিয়েই আজ আমরা সেই জট খুলে দেব। এ যেন আলোর স্পন্দনে লেখা এক মহাকাব্য, যেখানে পরমাণুর নাচ আর শক্তির খেলাই হয়ে উঠেছে আমাদের অস্তিত্বের মূল সুর।
কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সহজ ব্যাখ্যা: যেভাবে শুরু হলো এক মহাবিপ্লব
১৯০০ সালের ডিসেম্বর মাস। জার্মানির বার্লিনে এক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে দাঁড়িয়ে পদার্থবিদ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক এক অভিনব ধারণা উপস্থাপন করলেন। তিনি বললেন, শক্তি আসলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ‘প্যাকেটে’ বা কোয়ান্টায় বিন্যস্ত! তাঁর এই ‘কোয়ান্টাম হাইপোথিসিস’ই ছিল বিপ্লবের সূচনা। কিন্তু তখন কেউ জানত না, এই ধারণা পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসকে চিরতরে বদলে দেবে। এরপর এলেন আলবার্ট আইনস্টাইন, ১৯০৫ সালে। তিনি দেখালেন, আলোও আসলে শক্তির কোয়ান্টাম দিয়েই গঠিত—এগুলোই পরে ফোটন নাম পায়। আইনস্টাইনের এই কাজ তাঁকে নোবেল পুরস্কার এনে দিলেও, স্বয়ং আইনস্টাইনই পরবর্তীতে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কিছু দিক নিয়ে সন্দিহান ছিলেন!
কোয়ান্টাম জগতের সবচেয়ে মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো বুঝতে হলে আমাদের প্রথমেই মানতে হবে দুটি অবিশ্বাস্য সত্য:
- কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা: ইলেকট্রন, প্রোটন এমনকি পুরো অণুও একইসাথে কণা এবং তরঙ্গের মতো আচরণ করতে পারে! ১৯২৭ সালে ক্লিনটন ডেভিসন ও লেস্টার জার্মারের ইলেকট্রন বিবর্তন পরীক্ষা এটি প্রমাণ করে। ভাবুন তো, ঢেউয়ের মতো ছড়িয়ে পড়া একটা ইলেকট্রন আচমকাই কণার মতো আচরণ করে—এ যেন পদার্থের দুই রূপের অবিরাম নাটক।
- অনিশ্চয়তা নীতি: ভের্নার হাইজেনবার্গ ১৯২৭ সালে বললেন, কোনো কণার সঠিক অবস্থান এবং সঠিক গতিবেগ একসাথে নির্ণয় করা অসম্ভব! যত নিখুঁতভাবে আপনি একটি মাপবেন, অন্যটি ততই অনিশ্চিত হয়ে যাবে। এটা পরিমাপ যন্ত্রের সীমাবদ্ধতা নয়, মহাবিশ্বেরই মৌলিক নিয়ম।
এই ধারণাগুলোকে গাণিতিক রূপ দিতে এগিয়ে এলেন নীলস বোর, এরউইন শ্রোডিংগার, পল ডিরাকের মতো দিকপালরা। বোরের ‘কোপেনহেগেন ব্যাখ্যা’ বলল, কোনো কণা আসলে সম্ভাবনার তরঙ্গ হিসেবে থাকে, যতক্ষণ না আমরা তা পর্যবেক্ষণ করি! “পর্যবেক্ষণই বাস্তবতাকে সৃষ্টি করে”—এই মন্ত্রই কোয়ান্টাম জগতের প্রাণকেন্দ্র। ১৯২৫-১৯৩০ সালজুড়ে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে বোরের ইনস্টিটিউটে এই তত্ত্বের ভিত্তি রচিত হয়েছিল, যা আজও আমাদের মাথা ঘুরিয়ে দেয়।
কোয়ান্টাম জগতের ম্যাজিক: সুপারপজিশন থেকে এনট্যাঙ্গেলমেন্ট পর্যন্ত
একটি ইলেকট্রন কল্পনা করুন। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা অনুসারে, পর্যবেক্ষণের আগে এটি একইসাথে সব সম্ভাব্য অবস্থায় থাকতে পারে! এই ঘটনাকেই বলা হয় সুপারপজিশন। শুধু কণাই নয়, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ‘কিউবিট’ও এই সুপারপজিশনে থাকতে পারে—একই সময়ে 0 এবং 1 এর মান ধারণ করে। এটাই এটাকে শক্তিশালী করে তোলে। কিন্তু এরচেয়েও রহস্যময় ঘটনা হলো এনট্যাঙ্গেলমেন্ট বা কোয়ান্টাম জটলা। ১৯৩৫ সালে আইনস্টাইন, পোডোলস্কি ও রোজেন এক চিন্তন পরীক্ষার মাধ্যমে এটাকে ‘ভুতুড়ে দূর-ক্রিয়া’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তাঁদের ধারণা ছিল, এই ঘটনা পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম ভঙ্গ করে। কিন্তু ১৯৮২ সালে ফরাসি পদার্থবিদ অ্যালেন আস্পেক্টের যুগান্তকারী পরীক্ষা প্রমাণ করল, এনট্যাঙ্গেলমেন্ট সত্যিই বিদ্যমান!
কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট কীভাবে কাজ করে?
- দুটি কণা (যেমন, দুটি ফোটন) যদি জটলাবদ্ধ হয়, তাহলে তাদের বৈশিষ্ট্য চিরতরে সংযুক্ত হয়ে যায়।
- আপনি যদি একটি কণার স্পিন মাপেন, অন্যটির স্পিন অমনি নির্ধারিত হয়ে যায়—এমনকি যদি তারা মহাবিশ্বের দুই প্রান্তেও থাকে!
- দূরত্ব বা সময়ের কোনও প্রভাবই এই সংযোগকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। আইনস্টাইন যাকে ‘spooky action at a distance’ বলেছিলেন, সেটাই এখন কোয়ান্টাম যোগাযোগ ও কম্পিউটিংয়ের ভিত্তি।
এই ধারণাগুলো শুধু তত্ত্ব নয়, বাস্তবে প্রমাণিত। চীনের ‘মিকিয়াস’ উপগ্রহ ব্যবহার করে ২০১৭ সালে বিজ্ঞানীরা ১,২০০ কিলোমিটার দূরত্বে এনট্যাঙ্গেলড ফোটন পাঠিয়েছিলেন! NASA-র ওয়েবসাইটে এই ধরনের কোয়ান্টাম পরীক্ষার বিবরণ পাওয়া যায়। আরও মজার ব্যাপার হলো, প্রাণের মূল রাসায়নিক প্রক্রিয়ায়, যেমন সালোকসংশ্লেষণে, কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট কাজ করে বলে প্রমাণ মিলছে!
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বাস্তব জগতে প্রয়োগ: আপনার হাতের মুঠোয় যে প্রযুক্তি
“কোয়ান্টাম তত্ত্ব শুধু গবেষণাগারের জন্য”—এই ধারণা একেবারেই ভুল! আপনি এই মুহূর্তেই কোয়ান্টাম প্রযুক্তির সাহায্যে এই লেখাটি পড়ছেন। কীভাবে? আসুন দেখে নিই:
- ট্রানজিস্টর ও মাইক্রোচিপ: আপনার স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের হৃদয়ে আছে কোটি কোটি ট্রানজিস্টর। এগুলো কাজ করে কোয়ান্টাম টানেলিং নামক এক আশ্চর্য প্রক্রিয়ায়, যেখানে ইলেকট্রন শক্তির বাঁধ ডিঙিয়ে যায়! এটাই আধুনিক ইলেকট্রনিক্সের ভিত্তি। নোবেলজয়ী পদার্থবিদ লিও এসাকি এই আবিষ্কারের জন্য ১৯৭৩ সালে পুরস্কার পেয়েছিলেন।
- এমআরআই (MRI) স্ক্যানার: হাসপাতালে ব্যবহৃত এই যন্ত্র মানবদেহের ভেতরের ছবি তোলে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের আরেক ধারণা—স্পিন—ব্যবহার করে। শরীরের হাইড্রোজেন পরমাণুর স্পিনের দিকে রেডিও তরঙ্গ পাঠিয়ে ছবি তৈরি করা হয়।
- লেজার প্রযুক্তি: লেজার লাইট হলো বিশুদ্ধ কোয়ান্টাম ঘটনার ফল। এখানে ফোটনগুলো একই ফেজে এবং শক্তিতে নির্গত হয়। সার্জারি থেকে শুরু করে বারকোড স্ক্যানার—সর্বত্র এর ব্যবহার।
সবচেয়ে উত্তেজনাকর আবিষ্কার? কোয়ান্টাম কম্পিউটার! গুগল, আইবিএম, মাইক্রোসফটের মতো কোম্পানিগুলো এই দৌড়ে সামনে। ২০১৯ সালে গুগলের ‘সাইকামোর’ প্রসেসর একটি বিশেষ গণনা ক্লাসিকাল সুপারকম্পিউটারের চেয়ে কয়েক মিনিটে শেষ করে, যেটা করতে ১০,০০০ বছর লাগত! এই কম্পিউটার কিউবিট ব্যবহার করে—যা সুপারপজিশনে থাকতে পারে। এর সম্ভাবনা অসীম:
- নতুন ওষুধ আবিষ্কার: অণুর জটিল কোয়ান্টাম অবস্থা সিমুলেট করা।
- নিরাপদ যোগাযোগ: কোয়ান্টাম এনক্রিপশন যেকোনো হ্যাকিং অসম্ভব করে তোলে।
- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এগিয়ে নেওয়া: জটিল প্যাটার্ন চেনার ক্ষমতা বাড়ানো।
কোয়ান্টাম ফিজিক্সের চ্যালেঞ্জ: বিতর্ক, দার্শনিক প্রশ্ন ও ভবিষ্যৎ
কোয়ান্টাম মেকানিক্স এতটাই অদ্ভুত যে স্বয়ং এর প্রতিষ্ঠাতারাও এর ব্যাখ্যা নিয়ে বিভক্ত ছিলেন। আইনস্টাইন বলেছিলেন, “ঈশ্বর পাশা খেলেন না”, কিন্তু নীলস বোর জবাব দিয়েছিলেন, “ঈশ্বর কী করেন তা বলার অধিকার আমাদের নেই!” এই বিতর্ক আজও চলছে। মূল প্রশ্নগুলো হলো:
- পর্যবেক্ষকের ভূমিকা: আমরা কি শুধু দেখলেই বাস্তবতা তৈরি হয়? নাকি বাস্তবতা স্বাধীনভাবে বিদ্যমান?
- মাল্টিভার্স তত্ত্ব: হিউ এভারেটের ধারণা অনুযায়ী, প্রতিটি কোয়ান্টাম সম্ভাবনা আলাদা মহাবিশ্বে সত্যি হয়! অর্থাৎ, আপনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত অসংখ্য সমান্তরাল বিশ্ব সৃষ্টি করে।
- গ্র্যাভিটির সাথে মেলবন্ধন: কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব এখনও একসূত্রে গাঁথা যায়নি। ‘সব কিছুর তত্ত্ব’ (Theory of Everything) খোঁজা হচ্ছে।
বাংলাদেশও এই জগতে পা রাখছে। ২০২৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ‘কোয়ান্টাম ইনফরমেশন সায়েন্স’ নিয়ে গবেষণা শুরু হয়েছে। তরুণ গবেষক ড. ফারহানা ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল কোয়ান্টাম এনক্রিপশন নিয়ে কাজ করছে। তিনি বলছেন, “আমাদের লক্ষ্য দেশে নিরাপদ ডাটা ট্রান্সমিশন সিস্টেম গড়ে তোলা।”
কোয়ান্টাম জগতের দার্শনিক প্রভাব: বিজ্ঞান থেকে আধ্যাত্মিকতা পর্যন্ত
কোয়ান্টাম মেকানিক্স শুধু বিজ্ঞান নয়, দর্শনকেও নাড়া দিয়েছে। প্রাচীন হিন্দু বা বৌদ্ধ দর্শনে ‘অদ্বৈতবাদ‘ বা ‘শূন্যতা’-র ধারণার সাথে কোয়ান্টামের মিল খুঁজে পান অনেকে। পদার্থের শেষ সীমানায় গিয়ে আমরা আবিষ্কার করছি—সমস্ত কিছুর মধ্যে গভীর সংযোগ। জগৎটা বিচ্ছিন্ন বস্তুর সমষ্টি নয়, এক অবিভাজ্য সমগ্রতা। নোবেলজয়ী পদার্থবিদ স্যার রজার পেনরোজ মনে করেন, মানুষের চেতনাও হয়তো কোনো কোয়ান্টাম প্রক্রিয়ার ফল!
এই অনুসন্ধান আমাদের কী শেখায়?
- নম্রতা: মহাবিশ্বের জটিলতার সামনে আমাদের জ্ঞানের সীমা স্বীকার করা।
- কৌতূহল: অজানাকে জানার অদম্য তাড়না।
- অন্তঃসংযোগ: পরমাণু থেকে নক্ষত্রপুঞ্জ—সবই একই মৌলিক নিয়মে বাঁধা।
বিশ্বখ্যাত কোয়ান্টাম পদার্থবিদ ডেভিড বোম বলেছিলেন: “সবকিছুর গভীরে আছে এক অখণ্ড গতিশীল বাস্তবতা, যা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সীমা ছাড়িয়ে যায়।” এই কথাই তো আমাদের রহস্যের সামনে দাঁড় করায়।
এই মহাবিস্ময়কর কোয়ান্টাম জগতের সহজ ব্যাখ্যা শুধু বিজ্ঞানের পাঠ নয়, এটি এক আত্মিক অভিযান—যেখানে প্রতিটি ইলেকট্রনের নাচ, প্রতিটি ফোটনের দোলা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে আমরা এই মহাজাগতিক নকশারই অংশ। রহস্যের পর্দা উন্মোচনের এই যাত্রায় আপনিও যোগ দিন। আপনার চারপাশের সাধারণ জিনিসগুলোর দিকে আবার তাকান—একটি ফুলের পাপড়ি, মোবাইলের স্ক্রিন, আকাশের নক্ষত্র—সবকিছুর পেছনেই লুকিয়ে আছে কোয়ান্টামের জাদু। জানতে চান আরও? আমাদের বিজ্ঞান বিভাগে ঘুরে আসুন কিংবা নিচে থাকা প্রশ্নোত্তরগুলো পড়ে নিন। কৌতূহলকে কখনও থামতে দেবেন না!
জেনে রাখুন (FAQs)
১. কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সহজ ভাষায় সংজ্ঞা কি?
কোয়ান্টাম ফিজিক্স হল পদার্থবিজ্ঞানের সেই শাখা যা পরমাণু, ইলেকট্রন, ফোটনের মতো অতি ক্ষুদ্র কণাদের আচরণ ও মিথষ্ক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করে। এটি আমাদের চেনা দুনিয়ার চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা—এখানে কণা একইসাথে অনেক অবস্থায় থাকতে পারে (সুপারপজিশন) বা দূর থেকেও সংযুক্ত থাকতে পারে (এনট্যাঙ্গেলমেন্ট)। কোয়ান্টাম মেকানিক্স ব্যাখ্যা করে কেন পদার্থ এমন আচরণ করে, যা ক্লাসিক্যাল ফিজিক্স দিয়ে বোঝা যায় না।
২. কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সবচেয়ে রহস্যময় দিক কোনটি?
কোয়ান্টাম এনট্যাঙ্গেলমেন্ট বা জটলাবদ্ধতা হয়তো সবচেয়ে রহস্যজনক। দুটি কণা একবার জটলাবদ্ধ হলে, তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়। এরপর একটির অবস্থা পরিবর্তন করলে, অন্যটির অবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তিত হয়—এমনকি কোটি মাইল দূরে থাকলেও! আইনস্টাইন একে ‘ভুতুড়ে দূরক্রিয়া’ বলে অবিহিত করেছিলেন। এই ঘটনা মহাবিশ্বের স্থান-কালের ধারণাকেও চ্যালেঞ্জ করে।
৩. দৈনন্দিন জীবনে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের প্রয়োগ কোথায় দেখি?
আপনি প্রতিদিনই কোয়ান্টাম প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন! আপনার স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট—সবই সেমিকন্ডাক্টর ট্রানজিস্টরের উপর ভিত্তি করে, যা কোয়ান্টাম টানেলিং নীতিতে কাজ করে। এমআরআই মেশিন, লেজার পয়েন্টার, এলইডি লাইট, এমনকি সৌর প্যানেলও কোয়ান্টাম ইফেক্টের সাহায্যে শক্তি রূপান্তরিত করে। ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার চিকিৎসা, অর্থনীতি ও আবহাওয়া পূর্বাভাসে বিপ্লব আনবে।
৪. কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি সাধারণ কম্পিউটারকে প্রতিস্থাপন করবে?
না, কোয়ান্টাম কম্পিউটার সাধারণ কম্পিউটারের জায়গা নেবে না, বরং বিশেষ কিছু গণনার ক্ষেত্রে সাহায্য করবে। যেমন: জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়া মডেলিং, বৃহৎ ডাটা বিশ্লেষণ, বা জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান। আপনার ইমেইল চেক করা বা গেম খেলার জন্য সাধারণ কম্পিউটারই যথেষ্ট। তবে ওষুধ শিল্প বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় কোয়ান্টাম কম্পিউটিং যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে।
৫. “শ্রোডিংগারের বিড়াল” পরীক্ষাটি আসলে কী?
এই চিন্তন পরীক্ষাটি (১৯৩৫) কোয়ান্টাম সুপারপজিশনের অসঙ্গতি বোঝাতে তৈরি করেছিলেন এরউইন শ্রোডিংগার। কল্পনা করুন, একটি বাক্সে একটি বিড়াল, বিষ গ্যাসের ফ্লাস্ক এবং একটি রেডিওঅ্যাকটিভ পরমাণু আছে। পরমাণুটি ক্ষয়ে গেলে বিষ মুক্ত হবে। কোয়ান্টাম নীতি অনুযায়ী, পরমাণুটি ক্ষয়িত ও অক্ষয়িত—দুই অবস্থাতেই আছে, যতক্ষণ না বাক্স খুলে দেখা হচ্ছে। অর্থাৎ, বিড়ালটিও একইসাথে জীবিত এবং মৃত! এই কাকতালীয়তা বোঝায়, কোয়ান্টাম নীতি দৈনন্দিন বস্তুর ক্ষেত্রে কতটা অদ্ভুত!
৬. কোয়ান্টাম ফিজিক্স শেখার জন্য সহজ বাংলা বই বা রিসোর্স কী?
বাংলায় কোয়ান্টাম ফিজিক্সের সহজ ব্যাখ্যা নিয়ে বেশ কিছু চমৎকার রিসোর্স আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবালের “কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দেশে” বইটি আনন্দদায়কভাবে এই জটিল বিষয় বোঝায়। এছাড়া, “বিজ্ঞান পত্রিকা” ওয়েবসাইটে নিবন্ধ, বা বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির লেকচার ভিডিও দেখতে পারেন। ইউটিউবে “কোয়ান্টাম ফিজিক্স বাংলা লেকচার” সার্চ করলেও অনেক শিক্ষণীয় কনটেন্ট পাবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।