বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : প্রযুক্তি খাতে প্রতিনিয়ত নতুন উদ্ভাবন হচ্ছে। তবে এসব উদ্ভাবন ব্যবহারকারীদের সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যের সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছেন প্রযুক্তিবিশারদরা। খবর উইফোরাম।
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি নিয়ে সবাই আগ্রহী। এ কারণে প্রতারণা থেকে ব্যবহারকারীদের সুরক্ষিত রাখা এবং ভুল তথ্যের প্রচার বন্ধে সবাই সচেষ্ট।
সাম্প্রতিক সময়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তি খাতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে। তাৎক্ষণিকভাবে এটি কোনো বিরূপ প্রভাব না ফেললেও এর কারণে সাইবারনিরাপত্তার ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রযুক্তিটি এখনো উন্নয়নমূলক পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় এ প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে এবং শিগগিরই এ ধরনের মেশিন বাজারে প্রবেশ করবে।
সাইবার নিরাপত্তার বিষয়ে আলোচনার আগে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং সম্পর্কে ধারণা নেয়া প্রয়োজন। প্রথমেই যে বিষয় মাথায় রাখতে হবে সেটি হলো সাধারণ ল্যাপটপ, ডেস্কটপ বা স্মার্টফোনের সঙ্গে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কোনো মিল নেই। এর কার্যক্রম খুবই জটিল। সাধারণ কম্পিউটারে আলাদা প্রসেসর থাকে এবং এটি সব কাজ সম্পাদনে সহায়তা করে। অন্যদিকে আইবিএমের তথ্যানুযায়ী, কোয়ান্টাম কম্পিউটার বিশেষ ধরনের হার্ডওয়্যার ও অ্যালগরিদমের সমন্বয়ে তৈরি।
আইবিএমের তথ্যানুযায়ী, কোয়ান্টাম কম্পিউটার মাল্টিডাইমেনশনাল কম্পিউটেশনাল স্পেস তৈরিতে সক্ষম। এর অর্থ হলো ডিভাইসগুলো একই সময়ে কয়েক কোটি হিসাব সম্পাদন করতে পারবে। এর মাধ্যমে কম সময়ে অনেক বড় সমস্যার সমাধান করা যাবে।
কবে নাগাদ প্রযুক্তি খাতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার প্রবেশ করবে, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এরই মধ্যে সাইবার নিরাপত্তা খাতে যেসব সমস্যা হতে পারে সেগুলো মোকাবেলায় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি দেয়া এক ঘোষণায় অ্যাপল পোস্ট কোয়ান্টাম ক্রিপ্টোগ্র্যাফিক প্রটোকল উন্মোচনের ঘোষণা দিয়েছে। কোম্পানি জানায়, আইমেসেজ প্লাটফর্মে পাঠানো তথ্যে সুরক্ষায় তারা এ সিস্টেম চালু করেছে। অ্যাপলের দাবি অতি শক্তিশালী কোয়ান্টাম আক্রমণেও এ ব্যবস্থার কোনো ক্ষতি হবে না।
কুপারটিনোভিত্তিক প্রযুক্তি জায়ান্টটি জানায়, কোম্পানিটি বর্তমানে হার্ভেস্ট নাও, ডিক্রিপ্ট লেটার ধরনের আক্রমণ প্রতিহতে পোস্ট কোয়ান্টাম এনক্রিপশন ব্যবহার করছে। এ ধরনের আক্রমণে হামলাকারীরা বিপুল পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করে এবং সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি প্রকাশ্যে এলে সেগুলো ডিক্রিপ্ট করে থাকে। অ্যাপলের পাশাপাশি গুগলও পোস্ট কোয়ান্টাম সিকিউরিটি প্রটোকলের উন্নয়নে কাজ করছে এবং কোম্পানির অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে যোগাযোগে এটি ব্যবহার করছে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহারের মাধ্যমে সাইবার হামলাকারীদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম সুরক্ষিত রাখার বিষয়টি সব ক্ষেত্রেই ছড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে সাইবার হামলা মোকাবেলায় নতুন চিপ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) ও এমআইটি-আইবিএম ওয়াটসন এআই ল্যাব। এটি হেলথ ফিটনেস ট্র্যাকারসহ অন্যান্য এআই-নির্ভর ডিভাইসে থাকা তথ্যের সুরক্ষা স্তর বাড়িয়ে দেবে বলে সূত্রে জানা গেছে।
ফিটনেস অ্যাপগুলোয় একটানা যোগাযোগ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক কার্যক্রমের গতি কমিয়ে দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাটারি লাইফ বা ব্যাকআপের সময় কমে আসে। এজন্য প্রকৌশলীরা প্রায়ই মেশিন লার্নিং এক্সিলারেটর ব্যবহার করেন, যা বিশেষ হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটিকে দ্রুত সম্পন্ন করতে সাহায্য করে। কিন্তু এ ধরনের এক্সিলারেটর ডিভাইসে সাইবার হামলার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও আর্থিক তথ্যের মতো সংবেদনশীল তথ্য চুরির ঝুঁকি বাড়ায়।
ঝুঁকি কমাতে এমআইটি ও এমআইটি-আইবিএম ওয়াটসন এআই ল্যাবের গবেষকরা একটি মেশিন লার্নিং এক্সিলারেটর তৈরি করেছেন, যা দুটি প্রচলিত সাইবার হামলার থেকে নিরাপদ। তাদের তৈরি করা নতুন চিপটি লার্জ এআই মডেলগুলোকে কাজে লাগিয়ে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা বজায় রেখে কার্যকরভাবে কাজ করতে সক্ষম।
গবেষণা দলটি চিপে বেশ কয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তন এনেছে, যা ডিভাইসের গতি না কমিয়েও শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে। এছাড়া অতিরিক্ত এ সুরক্ষা ব্যবস্থা ডিভাইসের কম্পিউটিং সক্ষমতাকে প্রভাবিত করে না। গবেষকরা জানান, চালকবিহীন ড্রাইভিং, অগমেন্টেড বা ভার্চুয়াল রিয়ালিটির মতো এআই অ্যাপগুলোর চাহিদা এ সুরক্ষিত অ্যাক্সিলারেটর চিপ থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক মৈত্রেয়ী অশোকের মতে, চিপটির ব্যবহার ডিভাইসকে ব্যয়বহুল করার পাশাপাশি কম বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। গবেষণায় ডিভাইসটি পরীক্ষার জন্য গবেষকরা সাইড-চ্যানেল ও বাস-প্রবিং নামের দুটি সাইবার হামলা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু লক্ষাধিকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তারা কোনো তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।