আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ (৯৬) মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বাকিংহাম প্যালেসের বরাত দিয়ে এমনটি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ মিডিয়া বিবিসি।
এলিজাবেথ ৭০ বছর ব্রিটেনের রাজত্বে ছিলেন। যা যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এর আগে ১৯৫২ সালে রানি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি। অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল ১৯৫৩ সালে।
দীর্ঘ এই শাসনামলে এলিজাবেথের সবচেয়ে কাছের মানুষ, তার প্রিয় সঙ্গী ছিলেন প্রিন্স ফিলিপ। ‘ডিউক অব এডিনবারা’ খেতাবধারী প্রিন্স ফিলিপ ২০২১ সালের ৯ এপ্রিল ৯৯ বছর বয়সে মারা যান। তার মৃত্যুতে একা হয়ে পড়েন রানি। তাদের প্রেম কাহিনী নিয়েও আগ্রহের শেষ নেই।
রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন একবার বলেছিলেন, সারাবিশ্বে প্রিন্স ফিলিপ একমাত্র মানুষ যিনি রানিকে অন্য একজন মানুষ হিসেবে দেখেন, সেভাবেই আচরণ করেন। তাদের ছিল প্রেমের বিয়ে। তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করে বিয়ে করেছিলেন।
তাদের দেখা হয়েছিল বিয়ের অনেক আগেই। ডার্টমথ নেভাল কলেজে ১৯৩৯ সালে তোলা একটি ছবি দেখে বোঝা যায় রাজকীয় এই প্রেম-প্রণয়ের সূচনা তখন থেকেই। প্রিন্স ফিলিপ তখন ১৮ বছরের নেভাল ক্যাডেট। বাবা-মার সঙ্গে ওই কলেজে সফরে গিয়ে রাজকুমারী এলিজাবেথের নজর কাড়েন তিনি। কৈশোরের সেই আকর্ষণ ধীরে ধীরে বন্ধুত্বে রূপ নেয়। দুজন দুজনকে চিঠি লিখতেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হঠাৎ মাঝেমধ্যে দেখাও হতো দুজনের।
প্রিন্স ফিলিপ যখন ব্রিটিশ নৌবাহিনীর হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলেন, রাজকুমারী তার ঘরে প্রিন্স ফিলিপের একটি ছবি রেখেছিলেন। গ্রিস এবং ডেনমার্কের এই রাজকুমারের ছেলেবেলা ছিল অনেকটা যাযাবরের মতো।
তার জন্ম গ্রিসের রাজপরিবারে, কিন্তু নির্বাসিত হওয়ায় ইউরোপের এক দেশ থেকে আরেক দেশে ঘুরতে হয়েছে তাকে। এ কারণে অল্প বয়স থেকে তিনি ছিলেন অনেক স্বাবলম্বী এবং শক্ত মনের। রাজকুমার হলেও রাজপ্রাসাদের ছায়া তার ওপর ছিল না।
রাজকুমারী এলিজাবেথ ছিলেন ঠিক তার বিপরীত। তার জন্ম এবং বড় হওয়া ছিল রাজপ্রাসাদের সুরক্ষিত বেষ্টনীর ভেতর। বাইরের জীবনের বাস্তবতার সাথে তার পরিচয় ছিল খুবই সামান্য। চুপচাপ লাজুক স্বভাবের ছিলেন তিনি।
রাজকুমারীর বয়স যখন ২০ বছর, প্রিন্স ফিলিপ বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তার এক বছর পর ১৯৪৭ সালে এলিজাবেথের ২১তম জন্মদিনের পর আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বাগদানের কথা প্রকাশ করা হয়।
ওয়েস্টমিনস্টার অ্যাবে গির্জায় দুই হাজার অতিথির সামনে তাদের বিয়ে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে মাত্র দুবছর আগে। ব্রিটেন তখনও সেই ধাক্কা সামলাতে বিপর্যস্ত। সেই কঠিন সময়ে তাদের বিয়ে নিয়ে অনেকদিন পর ব্রিটিশরা উৎসব করেছিলেন।
রাষ্ট্রপ্রধানের ভূমিকা পালনে রানিকে সব সময়ই সাহায্য করেছেন ডিউক। অন্যদিকে পরিবারের প্রধানের দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের হাতে। জাতীয় সব বড় বড় অনুষ্ঠানে সবসময় রানির পাশে থেকেছেন প্রিন্স ফিলিপ। বিদেশ সফরেও স্ত্রীর সাথে যেতেন তিনি।
২০১৭ সালে প্রিন্স ফিলিপ রাজকীয় দায়-দায়িত্ব থেকে অবসর নেন। ফলে তখন থেকে বহু অনুষ্ঠানেই রানিকে হয় একা অথবা রাজপরিবারের অন্য কোনো সদস্যকে নিয়ে হাজির হতে দেখা যায়।
২০২০ সালের মার্চ থেকে প্রিন্স ফিলিপের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অর্থাৎ বিবাহিত জীবনের শেষ দিনগুলোতে তারা সর্বক্ষণ একসঙ্গেই ছিলেন। প্রসাদের চার দেয়ালের মধ্যে দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের নানা স্মৃতি ছিল তাদের। দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনে তারা ছিলেন একে অন্যের সুখ-দুঃখের সাথী। কখনই তারা নিজেদের ভালোবাসা লোকসমক্ষে দেখাননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।